দর্শকদের চোখে এখনো সেরা শাবনূর


‘ঢালি কুইন’ খ্যাত অভিনেত্রী শাবনূর। সিনেমায় অভিষেকের পর প্রায় দুই দশক ধরে ঢালিউডে রাজত্ব করেছেন তিনি। অভিনয় করেছেন প্রায় আড়াই শতাধিক সিনেমায়। নব্বই দশকের একদম শুরুর দিকে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র মাধ্যমে মিডিয়া জগতে আসেন তিনি। তারপর বিখ্যাত পরিচালক এহতেশামের হাত ধরে চলচিত্রে প্রবেশ করেন এ অভিনেত্রী। ১৯৯৩ সালে নায়ক সাব্বিরের সাথে শাবনূরের প্রথম সিনেমা ‘চাঁদনী রাতে’ মুক্তি পায়। ছবিটি তেমন সাফল্য পায়নি। শুরুর দিকে সিনেমা তেমন হিট ছিলনা শাবনূরের।

১৯৯৪ সালে সেই সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহের সাথে জুটি বেঁধে অভিনয় করেন ‘তুমি আমার’ সিনেমায়। এ সিনেমার মাধ্যমে দর্শকদের হৃদয়ে নিজের জায়গা করে নেন শাবনূর। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। বাংলা চলচিত্রে জন্ম হয় এক কালজয়ী জুটির। কিন্তু নায়ক সালমান শাহের অকাল প্রয়াণের কারণে একসাথে বেশি ছবি করা হয়নি। সালমান শাহের সাথে সর্বাধিক ১৪ সিনেমায় জুটি বেঁধেছিলেন শাবনূর। রাজ্জাক- কবরী জুটির পর সালমান শাহ- শাবনূর জুটি এখনও দর্শকের কাছে সেরা৷

সালমান শাহের পর রিয়াজ, ফেরদৌস, মান্না অমিত হাসান, শাকিব খানসহ অনেক নায়কের সাথে জুটি বেঁধে অভিনয় করেন তিনি। অসাধারণ অভিনয় দক্ষতায় জিতে নিয়েছেন জাতীয় চলচিত্র পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার।

২০১১ সালে অস্ট্রেলিয়ান ব্যবসায়ী অনিক মাহমুদকে বিয়ে করার পর সিনেমায় অনিয়মিত হয়ে পরেন জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী। সিনেমা থেকে কয়েক বছর দূরে থাকলেও এখনও দর্শকদের হৃদয়ে রাজ করছেন তিনি। আজ ১৭ ই ডিসেম্বর শাবনূরের জন্মদিন। এই বিশেষ দিনে প্রিয় অভিনেত্রীকে নিয়ে কথা হয় শাবনূর ভক্তদের সাথে।

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের মেয়ে জলি বাহাদুর। তিনি জানান, শিক্ষাজীবনের পুরোটাই কেটে গেছে শাবনূর অভিনীত সিনেমা দেখে। বান্ধবীদের সাথে একসাথে সিনেমা দেখার অন্য রকম আনন্দ ছিল। এখন অনেক দিন যাবত স্বামীর সাথে প্রবাস জীবন পার করছেন তিনি। এদেশিয় চ্যানেলগুলো এখন আর দেখা হয়না তার। তবুও সুযোগ পেলেই ইউটিউবে শাবনূর অভিনীত সিনেমা, গানগুলো দেখেন তিনি।

সময়টা নব্বই দশক, বাংলা সিনেমার সেই স্বর্ণযুগে হলে গিয়ে সিনেমা দেখার ব্যাপক চল ছিল তখন। স্কুল ফাঁকি দিয়ে বন্ধুদের সাথে শাবনূরের সিনেমা দেখতে চলে যেতেন রুহুল আমিন। এমনকি টেলিভিশনেও বিজ্ঞাপন বিরতিসহ দেখতেন প্রিয় নায়িকার সিনেমা। এখন আর হলে কিংবা টেলিভিশনে সিনেমা দেখার তেমন সময় মিলে না তার। তবে এখন তার মোবাইলের গ্যালারী সার্চ করলেই দেখা মিলবে শাবনূরের ছবি, গান, মুভি ক্লিপ ইত্যাদি।

বর্তমান প্রজন্মের তরূণদের কাছেও সমানভাবেই সমাদৃত হচ্ছেন শাবনূর। এই যুগেও তার অসংখ্য তরূণ ভক্ত আছে। এমনই একজন ভক্ত হলেন আনন্দ মোহন কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আবিদ হাসান। হলে গিয়ে সিনেমা দেখার সুযোগ না হলেও ইউটিউবে শাবনূর অভিনীত প্রায় সবগুলো সিনেমায় দেখে ফেলেছেন তিনি। এতসব নায়িকাদের ভিড়ে শাবনূরই তার প্রিয় বলে জানান আবিদ।
তিনি বলেন, ‘এখন তো বাংলাদেশি সিনেমা আগের মত কেউ দেখে না। আর এই যুগের নতুন নায়িকাদের দেখলে মনে অভিনয় করছে। কিন্তু শাবনূরের ক্ষেত্রে তা নয়। যেকোনো চরিত্রে অনায়েসে মিশে যেতে পারেন গুণী এই অভিনেত্রী। বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে তার স্থান এখনও অনেক উপরে। তাকে দেখে অভিনয় শেখা উচিত অনেকেরই।’

এই সময়ের ছোট্ট স্কুলপড়ুয়া শিশুদের কাছেও জনপ্রিয় হয়েছেন অভিনেত্রী শাবনূর। ত্রিশালের সোনার বাংলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসবিহাও ক্ষুদ্র এক শাবনূর ভক্ত। প্রায়ই বাবা- মায়ের সাথে শাবনূরের সিনেমা দেখে সে। বড় হয়ে কি হতে চাও জানতে চাইলে মিষ্টি হেসে বলল সে শাবনূর হতে চায়!

শুধু ভক্তদের কাছে নয় বাংলাদেশি অনেক তারকাদের কাছেও তারকা শাবনূর৷ বর্তমান প্রজন্মের অনেক অভিনেত্রীই অনুসরণ করেন শাবনূরের অভিনয়। আর তার সমসায়িক অভিনেতা- অভিনেত্রীরা এখনো তার অভিনয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

শাবনূর অভিনীত সিনেমার সংখ্যা প্রায় আড়াই শতাধিক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হলো- স্বপ্নের ঠিকানা, আনন্দ অশ্রু, তোমাকে চাই, তুমি আমার, এ বাঁধন যাবে না ছিড়ে, কাজের মেয়ে, প্রেমের তাজমহল, খেয়া ঘাটের মাঝি, দুই নয়নের আলো, আমার স্বপ্ন তুমি, ফুল নিব না অশ্রু নিব, সুন্দরী বধূ, মোল্লা বাড়ির বউ, চার সতীনের ঘর, প্রেমের অহংকার, ভুলোনা আমায়, দুই বন্ধু এক স্বামী, বলব কথা বাসর ঘরে (নেগেটিভ চরিত্র), ও প্রিয়া তুমি কোথায়, নসিমান (যৌথ প্রযোজনা) উল্লেখযোগ্য।

দুই নয়নের আলো সিনেমায় অসাধারণ অভিনয়ের জন্য ২০০৫ সালে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এছাড়াও বাচসাস পুরস্কার( ৫ বার), মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার (সর্বাধিক ১০ বার) সহ অনেক পুরস্কার রয়েছে শাবনূরের প্রাপ্তির ঝুলিতে। সেই সাথে দর্শকদের অফুরন্ত ভালোবাসা তো আছেই!

শাবনূরের জন্ম ১৯৭৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর যশোরে। তার পারিবারিক নাম ছিল কাজী শারমিন নাহিদ নূপূর। বর্তমানে ছেলে আইজানকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় বাস করছেন তিনি। সিনেমা থেকে দূরে থাকলেও ভক্তদের হৃদয়ে রানী আসনটা এখনও দখল করে আছেন শাবনূর। এভাবেই হয়ত প্রজন্মের পর প্রজন্ম ভক্তদের হৃদয়ে রাজ করে যাবেন গুণী এই অভিনেত্রী। এক সময়ের ঢালি কুইনকে জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।