সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জের ধরে বড় ভাইয়ের আঘাতে ছোট বোন হাসপাতালে, ভাই পুলিশ হেফাজতে


নওগাঁ প্রতিনিধিঃ নওগাঁর পত্নীতলায় সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জের ধরে হোমিও চিকিৎসক বড় ভাই সামসুজ্জোহার (৫০) বিরুদ্ধে জনসম্মুখে ছোট বোন তহুরা বাবু ইতিকে (৪২) অমানুষিক বর্বরোচিত নির্যাতন করে মাথা ফাটিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয়েছে। ঘটনাটি ফেইসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে। ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে হোমিও চিকিৎসক বড় ভাই সামসুজ্জোহাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় কয়েকবার অভিযোগ দিতে গেলেও পুলিশ তা নেয়নি বলে অভিযোগ করেন গুরুতর আহত তহুরা বাবু ইতি।

ছোট বোনকে প্রকাশ্যে দিবালোকে বর্বরোচিত নির্যাতনের ঘটনায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত শতশত মানুষ চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং নির্যাতনকারী বড় ভাইয়ের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবী করেছেন। এদিকে আহত বোন বর্তমানে পত্নীতলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁর মাথায় ৫টি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে।

এই ঘটনা ঘটেছে উপজেলা নজিপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন জোহা হোমিও হলের সামনে রবিবার বিকেলে শতশত মানুষের সামনে।
অভিযুক্ত হোমিও চিকিৎসক সামসুজ্জোহা উপজেলার নজিপুর পৌরসভার ছোট চাঁদপুর মহল্লার মৃত তাছির উদ্দিনের ছেলে। আহত ছোট বোন তহুরা বাবু ইতির বড় ভাই সামসুজ্জোহা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও আহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুর মহল্লায় নিজ বাড়িতে জোহা হোমিও হল নামে তাঁর একটি হোমিও চেম্বার রয়েছে। ছোট বোন তহুরা বাবু ইতির সঙ্গে বেশ কিছু দিন ধরেই পৈত্তিক সম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ভাই-বোনদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। রবিবার বিকেল আনুমানিক ৩টায় ছোট বোন ইতি বড় ভাই সামসুজ্জোহার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তাঁর সম্পত্তি বুঝে দেওয়ার জন্য বললে উভয়ে বাকবিতন্ডায় শুরু হয়। এক পর্যায়ে বড় ভাই সামসুজ্জোহা ছোট বোন ইতিকে দিয়ে বেধড়ক পিটাতে থাকেন। এতে ইতির মাথা ফেটে গেলে সারা শরীর রক্তাক্ত হয়ে পড়লে সে এক সময় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এ ঘটনা অনেক পথচারি দেখলে কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে ওবায়দুল ইসলাম মিন্টু নামে এক ব্যক্তি স্থানীয়দের সহায়তায় ইতিকে উদ্ধার করে রক্তাক্ত অবস্থায় পত্নীতলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। বর্তমানে সেখানেই তিনি কেবিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ইতির মাথা ফেটে যাওয়ায় ৫টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। মাথাছাড়াও ডান হাত, কোমর ও হাঁটুর নীচে সে আঘাত প্রাপ্ত হয়েছেন।

আহত ইতির স্বামী আরিফ হোসেন সুমন জানান, পারিবারিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পৈত্তিক সম্পত্তি রদল বদল করা হয়েছে। আমার স্ত্রী ইতি ভাইকে সম্পত্তি ছেড়ে দিলেও ভাইয়েরা তাঁকে তাঁর সম্পত্তি বুঝে দিতে টালবাহানা করে আসছেন। এ বিষয়ে বারবার তাদের বলা হলেও তাঁরা কর্ণপাত করছেন না। সর্বশেষ ঘটনার দিনে ইতি একই বিষয়ে তাঁর বড় ভাই সামসুজ্জোহাকে তাগাদা দিলে গেলে বড় ভাই তাকে পিটিয়ে মারাত্বক জখম করে এবং মাথা ফেটে দেন। এ ঘটনায় পুলিশের উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় থানায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।

পতœীতলা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সামসুল আলম শাহ্ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এ ঘটনায় এখনো কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাকিবুল আকতার জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে সামসুজ্জোহাকে জিজ্ঞাসাবাদের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ঘটনায় অভিযোগ দায়ের করলে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।