আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে রোহিঙ্গা ইস্যু উত্থাপনের দাবি বাংলাদেশের


আর্ন্তরজাতিক ডেস্ক: প্রাক্তন কূটনীতিক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেছেন, তার দেশ রোহিঙ্গা বিষয়টির পরিসমাপ্তি চায়। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন, সেখানে তাদের সামাজিক ক্ষমতায়ন এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সব পক্ষ একসাথে কাজ করলে বিষয়টি একটি স্থায়ী সমাধানে পৌঁছাতে পারবে বলে তিনি মনে করেন। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আমেনা মহসিন বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ থা্কা সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের প্রতি মিয়ানমার সরকারের আচরণ এতোটুকুও পরিবর্তিত হয়নি । তিনি মনে করেন বিষয়টি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সামনে উত্থাপন করা প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, মিয়ানমার এবং অনেক দেশের মধ্যে সহযোগিতা এবং ব্যবসা ঠিকই চলছে। এই বছরের শুরুর দিকে চীনের নেতৃত্বে, বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় আলোচনায় আশার আলো দেখা দিলেও কোভিড -১৯ প্যান্ডেমিকের কারণে বিষয়টি থমকে যায়।গত চার বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। তবুও বাংলাদেশ সরকার সবসময় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা চাইছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, ২০১৭ সালের নভেম্বরেই একটি দ্বিপাক্ষিক অ্যারেঞ্জমেন্ট হয়েছিল। পরে যখন আমরা বুঝলাম মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিষয়টি খুব একটা যাচ্ছে না তখন আমরা আমাদের বন্ধুরা যারা আছেন তাদের সহায়তা চাইলাম। সেই ক্ষেত্রে চীনারা আমাদের সাথে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মিয়ানমারের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারা মিলে একটা সমাধানসূত্র বের করার জন্য সচেষ্ট ছিলেন। নিউ ইয়র্কে একটা মিটিং হয়েছে পরবর্তীতে আরো দুই একটা মিটিং হয়েছে।”

আমেনা মহসিন, অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) বলেন মেমোরেন্ডাম অব এগ্রিমেন্ট যেটাকে বলা হয়েছিল, সেটা সই করা হয়েছিল। এবং আমরা আশা করেছিলাম, যেহেতু মিয়ানমারের উপর চীনের যথেষ্ট প্রভাব আছে সেভাবে এটাকে সমাধান করা হবে কিন্তু দুঃখজনক হলেও আমরা দেখতে পারলাম যে, সেটা সমাধানের দিকে যায়নি।”

হুমায়ুন কবির আরো বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার কারণেই সমস্যাটা তৈরি হয়েছে এবং সে কারণেই এটা জটিল। এই সমস্যার একটা টেকসই সমাধানের জন্য শুধু রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার বিষয়টিই নয়, তারা যাতে মিয়ানমারে টেকসই ভাবে টিকে থাকতে পারে, জীবনযাত্রা সম্মান নিয়ে মিয়ানমারে থাকতে পারে এবং তাদের যে রাজনৈতিক এবং সামাজিক অধিকার সেই অধিকারগুলো যেন তারা প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে তার জন্য আমার কিন্তু মনে হয় দীর্ঘমেয়াদী এবং দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক এবং বহুপাক্ষিক একটা সমাধান বা প্রচেষ্টার প্রয়োজন হবে।”

সেই সাথে আমেনা মহসিন বলেন, রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য কোন পদক্ষেপ নেয়া, সেগুলো তারা কিন্তু করেনি। এবং ওরা যেটা বলেছে যে ওরা কিছু ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলাপ করেছে, কিছু ঘরবাড়ি বানিয়েছে। কিছু রোহিঙ্গাকে ওরা প্রাথমিকভাবে নেবে এবং তার পরে তাদেরকে যাচাই-বাছাই করে আবার পুনর্বাসন করবে। তারা হয়তো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বোঝানোর জন্য অনেক কথাবার্তা বলেছে কিন্তু আমরা বাস্তবে কোনো পদক্ষেপ ওদের দেখতে পাচ্ছি না।

এবং মিয়ানমার তাদের যে কনস্টিটিউশন আছে সেখানে কোনো ধরনের পরিবর্তনও আনেনি। মিয়ানমার সরকার খুবই জটিল একটা প্রক্রিয়া তৈরি করে রেখেছে। আমরা যা দেখতে পাচ্ছি এখানে আন্তর্জাতিক মহলেরও সে ধরনের চাপ নেই মিয়ানমারের উপর। তারা তাদের ব্যবসা বাণিজ্য করে যাচ্ছে। আমরা যদি দেখি, জাপান ব্যবসা করছে, চীন ব্যবসা করছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি না হলেও বিভিন্নভাবে তাদের সাথে ইনভলবড হয়ে আছে। ভারত ইনভলভড আছে এবং তাদের ওখানে যথেষ্ট পরিমাণে ইনভেস্ট আছে। এই জায়গাটাতে ইস্যুটা এক ধরনের ধামাচাপা পড়ে আছে।”

হুমায়ুন কবির বলেন, কাজেই এই জটিলতার সমাধান করার জন্যই আমার মনে হয় একটু ধৈর্য ধরে চেষ্টা করতে হবে এবং বাংলাদেশের পক্ষে যত ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করা প্রয়োজন সেগুলো গ্রহণ করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত এবং সেইজন্য বাংলাদেশ উদ্যোগ নিচ্ছে। কাজেই সেই বিবেচনায়, বন্ধুরা যারা আমাদের সাথে আছে তাদের সকলেরই সহযোগিতার হাত বেশ দীর্ঘমেয়াদি হবে। এবং আমাদের সাথে তারা কাজ করবে এই প্রত্যাশাই আমরা রাখছি এবং আশা করছি যত দ্রুত সময়ে এই সমস্যাটার সমাধান হয়।

অর্থাৎ রোহিঙ্গারা সসম্মানে নিরাপদে এবং টেকসই ভাবে মিয়ানমারে ফেরত গিয়ে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, তাদের ঘর বাড়িতে ফিরে যাওয়া সহ তারা যেন দ্রুত তাদের অধিকার ফেরত পায়। এটাই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য। বাংলাদেশের দিক থেকে আমরা এই সমস্যার সমাধান করে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যে স্বাভাবিক প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক টিকে থাকুক এবং উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাক এটাই বাংলাদেশের দিক থেকে আমাদের প্রত্যাশা।”

সবশেষে আমেনা মহসিন যোগ করেন, একতো আছে জি-টু-জি। যেটাকে বলে সরকার থেকে সরকারের চাপ, সেটা আমাদের বহাল রাখতে হবে। আর একটা হল, যে মানবাধিকার কমিশন গুলো আছে বিভিন্ন দেশে এবং বিভিন্ন দেশে যে নাগরিক সমাজ আছে তাদের মধ্যে এই রিফিউজি ইস্যুটা তুলে ধরতে হবে।” সংবাদ সু্এঃ A24 News Agency