কোন ‘ঈদের’ পরে হবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি


রাবি প্রতিনিধি: ২০২২ সালের ১৪ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমন্বিত হল সম্মেলনে যোগ দিয়ে ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘ঈদ-উল ফিতরের পরে হবে রাবি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন’। এরপর দুটি ঈদ গিয়ে আবারও একটি ঈদ কড়া নাড়তে শুরু করছে। কিন্তু এখনও স্পষ্ট হচ্ছে না শাখা ছাত্রলীগের বিষয়ে কেন্দ্র কি ভাবছে ।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি গঠিত হয় ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর। গোলাম কিবরিয়াকে সভাপতি ও ফয়সাল আহমেদ রুনুকে সাধারণ সম্পাদক করে শাখা ছাত্রলীগের ১৩ সদস্যের প্রাথমিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এ কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০১৭ সালে। এর মাঝে কয়েকবার পরিবর্তন এসেছে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্বেও। তবে অর্ধযুগেও পরিবর্তনে আসেনি শাখা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে।

দীর্ঘদিন ধরে নতুন নেতৃত্বের পথ বন্ধ থাকায় বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই শতাধিক নেতাই এখন নিষ্ক্রিয়। অনেকেই বিবাহিত, ড্রপ আউট, বহিষ্কৃত কেউবা খাতির জমিয়েছেন মরণ নেশা মাদকের সঙ্গে। অর্ধযুগেরও বেশি সময়ের এ কমিটির বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগও রয়েছে।

কমিটি গঠনের পর থেকেই শিক্ষক হেনস্তা, সাংবাদিক পেটানো, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, চুরি-ছিনতাই, মাদক সেবন ও ব্যবসা, র‌্যাগিং, আবাসিক হলের কক্ষ দখল ও ভাঙচুর, প্রক্সিকাণ্ড, ফাউ খাওয়াসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন নেতা থেকে শুরু করে কর্মী পর্যন্ত।

সর্বশেষ গত বছরের ২৫ অক্টোবর এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১২ নভেম্বর রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) ও রাবি শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলনের দিন ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ৫ নভেম্বর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) জমা দেন ৯৪ পদপ্রত্যাশী। কিন্তু পরে সেই সম্মেলন স্থগিত করা হয়। এ ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাধিক পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মী।

স্থগিত করা সম্মেলন কবে ও কীভাবে হবে প্রশ্নের জবাবে রাবি ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও পূর্ব কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক আফি আজাদ বান্টি সে সময় বলেছিলেন, ‘কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে সম্মেলন নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ব্যস্ত। এই মুহূর্তে রাবি ছাত্রলীগ সম্মেলন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে যেহেতু সিভি জমা নিয়েছি, তাই প্রেস কমিটি দেওয়া হবে।’

তবে ছাত্রলীগের বিষয়াদি দেখভালের দায়িত্বে থাকা আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিমের কথায় ভেস্তে যায় প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কমিটি ঘোষণার আয়োজন। গত বছরের ১২ নভেম্বর আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন ৩ ডিসেম্বর। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আগে নতুন করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কোনো জেলা, উপজেলা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সর্বোপরি কোনো শাখার কাগুজে কমিটি দিতে পারবে না।

এরপর থেকে একপ্রকার গন্তব্যহীন পথে চলছে দেশের ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনের শাখার ভাগ্য। দীর্ঘদিনেও রাবি ছাত্রলীগের কমিটি না হওয়ায় বর্তমানে চেইন অব কমান্ড নেই দাবি করে সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী তাওহীদুল ইসলাম দুর্জয়। তিনি বলেন, বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৭-তে। দীর্ঘদিন পার হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই সংগঠনের চেইন অব কমান্ড অনেকটাই ভেঙে পড়েছে।

আর কমবেশি সবজায়গায় এর প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাই সামনের সময়ের কথা বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে দ্রুততম সময়ে নতুন কমিটি গঠন জরুরি। জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে আমরা একাধিকবার নতুন কমিটির বিষয়ে বলেছি। কমিটি গঠন হয়েছে বেশ কয়েকবছর হয়েছে। আমরাওতো সারাজীবন এখানে থাকবো না। আমরা চাই, নতুন নেতৃত্ব আসুক। সম্মেলন আয়োজনের জন্যও আমরা প্রস্তুত, এখন শুধু কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্দেশের অপেক্ষা।

নতুন কমিটির বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে আরো সুসংগঠিত করে গড়ে তুলতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে রাবি ছাত্রলীগের স্মার্ট কর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিতে আমরা কাজ করছি। দ্রুতই এ শাখার নতুন কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।