‘গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে না পারলে দেশের অস্তিত্ব ধ্বংস হয়ে যাবে’


বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি : সংগৃহীত

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার মতো মানুষকে যদি বিদেশে না পাঠায়, আর আমরা যদি গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে না পারি, তাহলে এ দেশের অস্তিত্ব ধ্বংস হয়ে যাবে, বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আজ শুক্রবার জাতীয়তাবাদী কৃষকদল আয়োজিত খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বিদেশে পাঠানোর দাবিতে এক মানববন্ধনে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আজ বাংলাদেশের বড় দুঃসময়। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার যদি চিকিৎসা বাংলাদেশে না হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ তো চিকিৎসা পায়ই না। হাসপাতালে যাবেন—দেখবেন কোনো চিকিৎসা নেই।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘একটা মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে আজ দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে সচেতনভাবে, অত্যন্ত সচেতনভাবে হত্যা করা হচ্ছে—এ কথা আমরা বার বার বলছি। পৃথিবীর সব দেশ এটা জানে। আমাদের দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন সংগঠন, বুদ্ধিজীবী সবাই বলেছেন যে, দেশনেত্রীকে বাইরে চিকিৎসার করার সুযোগ দিন।’

এ ছাড়া বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই—আজ এসব করে কোনো লাভ হবে না। জনগণ জেগে উঠতে শুরু করেছে এবং জেগে উঠবে, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত পদ্মা-মেঘনা-যমুনার অববাহিকায় উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি হবে এবং তোমাদের তখতে তাউস ভেঙে ছারখার হয়ে যাবে।’

নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘একবার ভাবুন, আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব আট হাজার মাইল দূরে আছেন। তাঁর মা দেশনেত্রী খালেদা জিয়া প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন, যুদ্ধ করছেন—এমন একটা অবস্থার মধ্যে আমাদের দায়িত্ব অনেক বেশি, আমাদের দায়িত্বই হচ্ছে প্রধান।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের আজকে জেগে উঠতে হবে। এ দুরাত্মা, দুঃশাসনকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থে আমাদেরকে ন্যায়-সত্য-মুক্ত-সুন্দর গণতন্ত্রের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, মুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে, দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে হবে, আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেবকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।’

বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন দলের চেয়ারপারসনের সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘তাঁর (খালেদা জিয়া) রক্তক্ষরণ হচ্ছে এবং এ রক্তক্ষরণ যদি বেশিদিন চলে, তা হলে তিনি বাঁচবেন না। তাঁর যে রোগ হয়েছে আপনারা শুনেছেন—লিভার সিরোসিস। এ রোগ মারাত্মক রোগ। এ রোগের চিকিৎসা আমাদের দেশে সেভাবে নেই। কেবল আমেরিকা, ইংল্যান্ড ও জার্মানিতে এ রোগের চিকিৎসা ভালো হয়।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। আমরা চাই—আমাদের দেশনেত্রীকে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসার সুযোগ করে দিন। এটা সর্বনিম্ন দাবি। এটা কোনো দয়া নয়, মহানুভবতা নয় কিংবা মানবিক ব্যাপার নয়। এটা নাগরিক হিসেবে অধিকার। আপনারা বলবেন—উনি তো সাজাপ্রাপ্ত নাগরিক। সাজাপ্রাপ্ত নাগরিকও তো চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রাখেন।’

এ ছাড়া বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এরা (আওয়ামী লীগ) কাউকে সহ্য করতে পারে না। তাই দেশনেত্রীর নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাঁকে সাজা ভোগ করাচ্ছে। এরা ভিন্ন মত সহ্য করতে পারে না বলেই খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে হত্যা করছে।’

নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচন ব্যবস্থা কি আছে? আপনারা দেখুন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কত মানুষের প্রাণ গেল, প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে এবং গুলি করে হত্যা করা হলো।’

কুমিল্লায় কমিশনার হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিন জনকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিন আসামিকে গ্রেপ্তারের পর তাদের ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়। কেন এ হত্যাকাণ্ড? কারণ, এ হত্যার মূলহোতা কে, এটা যেন জানা না যায়। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর যদি হত্যা করা হয়, তাহলে রাষ্ট্রে কি নিরাপত্তা থাকে?’

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, সাবেক সাংসদ ফজলুল হক মিলন, মোশাররফ হোসেন, যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, যুবদল সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাবির তুহিন, এবং সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবলু প্রমুখ।