চাঁপাইনবাবগঞ্জের ‘পিএসএস’ এনজিও পরিচালকের খুঁটির জোর কোথায়


ফয়সাল আজম অপু: “চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রগেসিভ স্টার সোসাইটি (পিএসএস) এনজিওর পরিচালকের ফাঁদে কর্মীরা সর্বস্ব হারিয়ে দিশেহারা” শীর্ষক শিরোনামে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন পত্রিকায়। তারপরেও টনক নড়ছে না কেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের? এ নিয়ে জনমনে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
এই এনজিওর মালিক একজন কামিল পাস মৌলভী। জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার সত্রাজিতপুর ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাস করেই ‘বাইস’ নামক এনজিওর চাকরি নেয়। ১৯৯৮ সালের দিকে জামায়াতের সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত হন তিনি। এর আগে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের একনিষ্ঠ কর্মী হিসাবে রানীহাটি বাজারে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। প্রথম দিকে জয়েন স্টক থেকে এই এনজিওর লাইসেন্স নেয় একজন স্থানীয় সাংবাদিক। সাংবাদিকের কাছে এনজিওর লাইসেন্স কিনে সাইফুল ইসলামকে নিয়ে ২ বন্ধু মিলে শুরু করেন সুদের রমরমা ব্যবসা।
তবে মূল মালিক ছিল মাওলানা আব্দুস সামাদ।
একসময় সুদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বক্তব্য দিলেও পরবর্তীতে সুদের বিরুদ্ধে কথা বলেননি এই সুদখোর সামাদ, বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। প্রথম দিকে একজন সরকারি ভেটেনারি চিকিৎসকও জড়িত ছিল। কিন্তু একসময় সবাইকে বিভিন্ন অজুহাতে চাকরিচ্যুত করে সুদের রাজ্য একক সাম্রাজ্য বিস্তার করে আব্দুস সামাদ। কর্মীদের জামানত আটকানো, বেতন না দিয়ে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে একের পর এক ছাটাই করেন।
এমনকি সু-চতুর এই আব্দুস সামাদ সুদ ব্যবসার শেয়ার পার্টনার সাইফুল ইসলামকে দেউলিয়া বানিয়ে সুকৌশলে তার শেয়ার সহ বাসযোগ্য বাড়িটিও লিখে নেন নিজ নামে।
সাইফুল ইসলাম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, এক সময় সামাদ আমার খুব কাছের বন্ধু ছিলো। টাকার লোভে এই পাষন্ড সামাদ সব করতে পারে, যে কাজটি বন্ধু হয়ে আমার সাথে করেছে, আমার বুকে ছুড়ি মেরেছে। আমার সব সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে সর্বসান্ত করে আজ আমাকে পথের ফকির বানিয়ে দিয়েছে। বলেই সামাদের বিরুদ্ধে তথ্যাদি সংবলিত সকল প্রকার কাগজ পত্র এই প্রতিবেদকের হাতে তুলে দেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা তার একদিন বিচার করবেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, একা এনজিও-র মালিক হয়েই বে-পরোয়া হয়ে উঠেন সুদ-কারবারী আব্দুস সামাদ। এই প্রোগেসিভ স্টার সোসাইটি (পিএসএস) এনজিও তৎসময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির লাইসেন্স পেয়েছে একটি শাখায়। কিন্তু পরিচালনা করছে চারটি শাখা সরকারি নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে। এর খুটির জোর কোথায়? জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কি সাক্ষী গোপাল ভূমিকা পালন করছে জনমনে প্রশ্ন ?
প্রগেসিভ স্টার সোসাইটি (পিএসএস) এনজিওর কোনো সার্ভিস রুল নেই। সেজন্য যেসব কর্মী তাকে আমানত সংগ্রহ করে দিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক বানিয়েছে তাদেরকেই নির্যাতন করে পাওনাদি ছাড়াই ছাঁটাই করেছে। এবং চোর উপাধি দিতেও দ্বিধা বোধ করেননি তিনি। কথায় বলে, যার জন্য চুরি করে সেই বলে চোর। ঠিক যেন, মাওলানা আব্দুস সামাদ এ ধরনের লোক এটাই বাস্তবে প্রমাণ করেছে। রানিহাটী বাজারে সুদের টাকায় তৈরী বিলাসবহুল নিজ বাড়িতে স্বামী স্ত্রী মিলেই সুদের রমরমা কারবার চালিয়ে যাচ্ছে।
অজ্ঞাত কারণে প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে এলাকার সচেতন মহলের দাবি। ভুক্তভোগী কর্মকর্তা, কর্মচারী, গ্রাহক সহ এলাকাবাসী আশা করছে জেলা প্রশাসক প্রগেসিভ স্টার সোসাইটি (পিএসএস) এনজিওর নির্বাহী পরিচালক মাওলানা আব্দুস সামাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবেন।
মাওলানা আব্দুস সামাদকে আইনের আওতায় এখনও না আনায় জনসাধারণ অনেকটা হতাশ।
অবৈধভাবে চারটি শাখা পরিচালনা, কর্মীদের নির্যাতন, বেতন ও অন্যান্য পাওনাদি না দিয়েই ছাঁটাইসহ প্রতারণার অভিযোগ পাওয়ার পরও কি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না? ইতিপূর্বে বেশ কিছু স্থানীয় এনজিও পালিয়ে গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে। সে জন্য প্রশাসনসহ বিভিন্ন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
সাধারণ মানুষ জমানো টাকা হারিয়ে হয়েছে নিঃস্ব। এই মাওলানা আব্দুস সামাদের খুঁটির জোর কোথায়? জামায়াতের রাজনীতিতে একসময় সক্রিয় ছিল বলেই কী ভয় পাচ্ছে তাকে দেখে? নাকি নাজরানার বিনিময়ে ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে অভিযোগ?
তাহলে কি বিচারের বাণী নীরবে কাঁদছে? এ প্রশ্ন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সহ দেশের নাগরিকদের।