চায়ের দোকানে সকাল সন্ধ্যা জুয়ার মেলা, ধ্বংস হচ্ছে যুব সমাজ


আল-আমিন হোসেন, আলমডাঙ্গা থেকে: চুয়াডাঙ্গার,আলমডাঙ্গা উপজেলাতে শহর এবং এর আশপাশের ইউনিয়নগুলোতে   প্রায় প্রতিটি চায়ের দোকানে রয়েছে তাশ,লুডু,কেরামবোর্ড ও  অনলাইন মোবাইলে জুয়াখেলার ব্যবস্থা।  ছাত্র ও যুবকদের পাশাপাশি এলাকার নবীন -প্রবীন ব্যক্তিরা মিলে বেশিরভাগ সময়ই অংশ নিচ্ছে এই খেলায়। সকাল -সন্ধ্যা বাদেও  গভির রাত পর্যন্ত চলছে  এইসব খেলা। বলা যায় যে, সময়জ্ঞান নেই বলেই  সময়কে বিপথে কাজে লাগাচ্ছে এই সব ব্যাক্তিরা।

যুব সমাজ ধীরে ধীরে জুয়ার সাথে মিশে যাচ্ছে। বাক-প্রতিবন্ধি মানুষের মতই সমাজের একটি প্রবীণ শ্রেণি নিজেদেরকে পুরোপুরি সম্পৃক্ত না করলেও বাধা দিচ্ছেন না।যার ফলে নবীন ব্যক্তিদের খেলাধুলা, শরীর চর্চা,না করেই  ভাতৃত্বের বন্ধন ছিন্ন করে বোবা ব্যাক্তির ন্যায় গ্রাস করে  ফেলছে যুবসমাজকে ।  অন্যদিকে প্রচলিত আইনেও এটি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বিশেষ করে রাস্তার পাশে দোকানগুলোতে কেরাম, লুডু ও তাশ খেলা সম্পূর্ণ অবৈধ। তবে নিবন্ধিত রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক ক্লাবগুলোতে সময় কাটানোর উদ্দেশ্যে খেলতে বাধা নেই প্রচলিত আইনে।

তথাপি অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এর ভিন্ন চিত্র।সম্প্রতি এই খেলার অন্তর্ভুক্তি হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীরাও।

ছাত্র ও যুবকরা খেলায় প্রতিযোগীতার পাশাপাশি বাজি ধরে টাকার বিনিময়ে। কিছু কিছু সময় বাজি যদি টাকার অংক নাও হয় সেটি দোকানের বিভিন্ন কোমল পানীয়, সাবান,তৈল অথবা ফাস্টফুড আইটেম হয়ে থাকে।
এতে করে ছাত্ররা প্রতিদিন ১০০-১৫০ টাকা অনর্থক ব্যয় করে।আর এই ব্যায়  মেটাতে  বিভিন্ন অপরাধ প্রবনতার দিকে ঝুঁকে পড়ছে তারা। বলা বাহুল্য যে কিশোর অপরাধের জন্য অনেকাংশে দায়ী এইগুলো। এই খরচ করতে যেয়ে ঘরে চুরির অভ্যাস গড়ে উঠে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে।

বাজি ধরা বা জুয়া নামক এই সামাজিক ব্যাধীতে অনেক পরিবার ধ্বংসের পথে চলে যাচ্ছে। আবার বাজি ধরাকে কেন্দ্র করে অনেক সময় হাতাহাতিতে রূপ নিচ্ছে এমনকি খুন পর্যন্ত হওয়ার উপক্রম হয় মাঝে মাঝে। আর সমাজের ছোট-ছোট ব্যাধীই  যে একদিন বড় ব্যাধীতে রূপান্তরিত হবে না এমন কোন গ্যারান্টি কেউ দিতে পারবে না।পূর্বে আমরা দেখেছি ভাষার জন্য, দেশের জন্য, স্বাধীনতার জন্য তরুণরা গর্জে উঠেছে এবং ছোট-বড় আন্দোলনে নেতৃত্বে দিয়েছে এই ছাত্র সমাজেই।

আর এখন যদি যুবসমাজ এই দিকে ধাবিত হয় তাহলে ভবিষ্যতে  অপরাধমূলক কর্মকান্ডের নেতৃত্ব এই ছাত্র সমাজের হাত থেকেই আসবে তাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। খবর নিয়ে জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার হাউসপুর, কালিদাসপুর, জামজামী, হাটবোয়ালিয়া, বেলগাছী, পাঁচলিয়াসহ প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই ,বাজারে ও গ্রামে তাশ,কেরামবোর্ড খেলার মহাউৎসব চলছে দোকানগুলোতে ।

শুধু তাই নয়  দূর-দূরান্ত থেকে আগত অনেক  আলমসাধুর ড্রাইভার বাজারের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে এই খেলায় লিপ্ত হচ্ছে। এ খেলা প্রতিকারের জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছেন সচেতন নাগরিকগন।

এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা থানার ওসি বিপ্লব কুমার নাথ বলেন, রাস্তার পাশে কেরাম, তাশ ও লুডু খেলার কোন বৈধতা নেই। পুলিশ প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট তৎপর এমনকি আলমডাঙ্গা থানার ভেতরে চলতে থাকা কেরামবোর্ডটি আমি এই থানায় আসার পরে  বন্ধ করে দিয়েছি।কোন কোন জায়গাতে রাতে খেলা হচ্ছে খোজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে শুধু প্রশাসন একার পক্ষে সম্ভব না, সকলকে এগিয়ে আসতে হবে রুখে দাঁড়াতে হবে নব্য এই জুয়ার বিরুদ্ধে। তাহলেই মুক্তি পাবে যুবসমাজ সমাজ।