চারঘাটে রাতের আধারে চলছে  অবৈধ পুকুর খনন


চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধি: রাজশাহীর চারঘাটে উপজেলা প্রশাসনের ধারাবাহিক অভিযানেও বন্ধ হচ্ছে না পুকুর খনন। দিনে অভিযান চলায় রাতের আধারে চলছে পুকুর খননের কাজ। কৌশল পরিবর্তন করে রাতের আধারে আম বাগানসহ তিন ফসলী জমি নষ্ট করে চলছে পুকুর খনন কাজ। চারঘাট-বাঘার সাংসদ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব শাহরিয়ার আলম প্রকাশ্যে স্থানীয় প্রশাসনসহ নেতাকর্মীদের পুকুর খনন করা যাবে না বলে নির্দেশনা দিলেও থামছে না চারঘাটে পুকুর খনন।

স্থানীয় প্রশাসনের চোখের সামনে দিয়ে সমানতালে চলছে অবৈধ এই কর্মযজ্ঞ। স্থানীয়দের অভিযোগ উপজেলা প্রশাসনের অভিযানে অবৈধ পুকুর খননকারীদের বিরুদ্ধে শুধু আর্থিক জরিমানা করা হলেও কার্যকর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন না করায় থামছে না পুকুর খনন। ফলে কৌশল পরিবর্তন করে রাতের আধারে চলছে পুকুর খননের কাজ।

জানা যায়, গত ৩ এপ্রিল পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব শাহরিয়ার আলম এমপি চারঘাটে একটি অনুষ্ঠান শেষে উপজেলা পরিষদ চত্তরে বলেন, চারঘাটে সাবমারসেবল পাম্প ব্যবহার করা পুকুর পানি দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। শুধু কি মাছই খেতে হবে। চারঘাট আর কোন ভাবেই কোন ধরণের অবৈধ ভাবে পুকুর খনন করতে দেয়া হবে না। পুকুর খনন কাজে যারাই সহযোগীতা করবেন তাদের চিহিৃত করে কঠোর ব্যবস্থ্ ানেয়া হবে। প্রতিমন্ত্রীর এমন কঠোর নির্দেশনার পরেও থামছে না চারঘাটে অবৈধ ভাবে পুকুর খনন। এতে করে প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশ হচ্ছে উপেক্ষিত, আর পুৃকুর খননকারীরা হয়ে উঠছেন বেপরোয়া।

সরজমিন বুধবার রাতে উপজেলার সাদীপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় ফসলী জমি নষ্ট করে সেখানে রাতের বেলায় চলছে অবৈধ ভাবে পুকুর খনন। এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলেও বন্ধ হয়নি পুকর খনন। এলাকাবাসীর অভিযোগ স্থানীয় প্রশাসনকে এর আগেও লিখিত ও মৌখিক ভাবে অবৈধ পুকুর খনন বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানালেও বন্ধ হয়নি পুকুর খনন। বর্তমানে সাদীপুর, ভায়ালক্ষিপুর, নিমপাড়া, শলুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ও পিরোজপুর এলাকায় চলছে অবৈধ পুকুর খনন। কোথাও মেলেনি প্রশাসনের অভিযান।

ফলে অনেকটা বাধাহিন ভাবেই চলছে চারঘাটে অবৈধ পুকুর খনন। দেখার যেন কেউ নেই। উপজেলা কৃষি অফিসার লুৎফন নাহার এর সাথে যোগাযোগ করা হলে নিয়ম অনুযায়ী পুকুর খনন করতে হলে কৃষি অফিস থেকে প্রত্যায়পত্র গ্রহন করা বিধান থাকলেও অদ্যবধি কোন কৃষক পুকুর খননের ক্ষেত্রে কোন প্রত্যয়পত্র গ্রহন করেন নি বলে তিনি জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গ্রামবাসী জানান,জনৈক এক ইউপি চেয়ারম্যানের ভেকুসহ প্রভাবশালী ওই চক্রটি দিনের বেলায় পুকুর খনন বন্ধ রাখলেও রাতের বেলায় বীরদর্পে চালাচ্ছেন পুকুর খনন। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। পুকুরের মাটি কেটে তা বিক্রি করছেন ইটের ভাটায়। আর এসব বহনের জন্য যে রাস্তা ব্যবহার করছেন তা ভেঙ্গে মানুষের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে কাচাঁ রাস্তা পাকা করলেও ব্যাক্তি স্বার্থের কাছে সব কিছুই নষ্ট হয়ে পড়ছে। স্থানীয় প্রশাসন কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় চারঘাটে প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশও মানছে না কেউ। ফলে আজ চারঘাটের সাধারন মানুষ অনেকটা অসহায় বলে দাবি করেছেন গ্রামবাসীরা ।

বিষয়টি সম্পর্কে চারঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফকরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসব বিষয়ে কোন ধরণের মন্তব্য করতে রাজি হননি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, অবৈধ পুকুর খননকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। গত নয় মাসে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ টাকা জরিমানা আদায়সহ পুকুর খনন কাজে জড়িতদের জেল প্রদান করা হয়েছে। তার পরেও রাতে আধারে পুকুর খনন অব্যাহত থাকলেও দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।