তানোরে ট্রান্সফরমার চুরির মহাৎসব হুমকিতে বোরো ধান


মনিরুজ্জামান মনি, তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোর উপজেলায় গত ৭দিনে গভীর নলকূপের প্রায় ২৫ টির মত ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে বলে জানা গেছে। কোনভাবেই বন্ধ হচ্ছে না চুরি।শুধু গভীর নলকূপের বিদ্যৎ  চালিত সেচ যন্ত্র ট্রান্সফরমার চুরি হচ্ছে দেদারচে।এতে করে গভীর নলকূপের অপারেটর ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর এক প্রকার আতংকে পড়েছেন। কারন সেচ নির্ভর বোরো মৌসুম। ফলে দ্রুত এসব চোরদের আইনের আওতায় এনে চরম শাস্তি দেওয়ার দাবি উঠেছে।নচেৎ বন্ধ হবে না চুরি, হুমকিতে পড়বে চাষাবাদ।
জানা গেছে, চলতি মাসের গত সোমবার দিবাগত রাতে উপজেলার তালন্দ ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য  হাসানের তত্বাবধানে থাকা গভীর নলকুপের ৩টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়। হাসানের বাড়ি লালপুরগ্রামে। গ্রামের পূর্বদিকে ধানী মাঠে রয়েছে গভীর নলকূপ। এর এক দিন আগে রোববার রাতে একই ইউপি এলাকার দেউল গ্রামের মদনের ৩ টি, লিটনের ৩ টিসহ মোট ৭ টি টান্সফরমারচুরি হয়। এছাড়াও গত বুধবার দিবাগত রাতে তালন্দ ইউপির মোহরগ্রামের অপারেটর ওয়াহেদের ৩ টি টান্সফরমার চুরি হয়েছে বলে জানান ওই গ্রামের কীটনাশক ব্যবসায়ী মাসুদ।
এদিকে তানোর পৌর এলাকার চাপড়া  গ্রামের অপারেটর  আনসারের ৩ টি ও তালন্দ ইউপির কালনা গ্রামের অপারেটর আনোয়ারের গভীর নলকূপের ৩ টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে।
অপারেটর আনোয়ার জানান, গত রোববার দিবাগত রাতে তার তত্ববধায়নে থাকা ৩টি  টান্সফরমার চুরি হয়েছে।
 চুরির পর থেকে সেচ দেওয়া বন্ধ রয়েছে। ৩ টি টান্সফর্মার জন্য বিএমডিএতে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। তারপর মিলবে টান্সফরমার।কতদিনে পাওয়া যাবে, সেটারও কোন দিন তারিখ নাই। এতদ্রুত সময়ের মধ্যে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া কষ্টকর।
কৃষকরা জানান, ভরপুর ভাবে চলছে বোরো মৌসুম। প্রতিদিন সেচ দিতে হয়। একটি গভীর নলকূপে প্রায় ১৫০-২০০ বিঘা জমিতে বোরো চাষ হয়। চুরির পর থেকে সেচ হচ্ছে না। আর এসময় সেচ দিতে না পারলে ধানের প্রচুর ক্ষতি হবে।   ৩ টির জন্য বিএমডিএ অফিসে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা দিলে নাকি মিলবে টান্সফরমার।
অপারেটরেরা কতদিনে জমা দিবে,আর কতদিনে মিলবে কোন হিসাব নেই। সময়মত সেচ না হলে আবাদ হবে না। আর এখন ধানগাছের বয়স এক মাস থেকে একমাস ৪০-৪৫ দিন হচ্ছে। সেচ না পেলে বোরো আবাদ চরম হুমকিতে পড়বে। দ্রুত সময়ের মধ্যে  টান্সফরমার না দিলে বেকায়দায় পড়তে হবে কৃষকদের।
কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, গভীর নলকূপের টান্সফরমার চুরির দোহায়ে স্কীমভুক্ত কৃষকদের কাছ থেকে টাকা আদায় শুরু হয়ে গেছে। একারনে সেচ হারও হবে দ্বিগুণ। যাই হোক দ্রুত সময়ের মধ্যে টান্সফরমার দিলে চাষাবাদ সুষ্ঠু ভাবে হবে। তা নাহলে পথে বসতে হবে। সপ্তাহের ব্যবধানে এত টান্সফর্মা কিভাবে চুরি হয় এটা বড় প্রশ্ন। যারা এসব কাজ করে তাদের যোগসাজশ ছাড়া সম্ভব না। কারন সবার দ্বারা একাজ করা অসম্ভব।
বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জানান, কয়েকটির বিষয়ে থানায় জিডি করা হয়েছে। টান্সফরমার পেতে হলে নিয়ম অনুযায়ী টাকা জমা দেওয়ার পর পাবে টান্সফরমার তবে যেহেতু বোরো ধান মাঠে এজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে যদি কোন সুযোগ থাকে তাহলে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।
এ বিষয়ে তানোরথানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামরুজ্জামান মিঞা জানান,  চুরির তদন্ত চলছে অল্প সময়ের মধ্যে সবকিছু বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
রাজশাহী বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশিদ জানান, এক সপ্তাহের ব্যবধানে এতগুলো টান্সফরমার চুরির ঘটনা কল্পনাতীত। নিশ্চয় কোন না কোন যোগসাজশ আছেই। টান্সফার  নিতে একসাথে টাকা দিতে হয়। কিন্তু মাঠে বোরো ধান এজন্য কৃষকের স্বার্থে এবং সময়মত সেচ দিতে পারে এজন্য কয়েক কিস্তিতে টাকা দিয়ে টান্সফরমার নিতে পারবেন বলেও জানান এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।