তানোর মোটরসাইকেল চুরির হিড়িক, নীরব প্রশাসন


এইচএম.ফারুক, তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর তানোরে এক মাসের ব্যবধানে দিনেদুপুরে ১০টিরও বেশি মাটরসাইকেল (বাইক) চুরি হয়েছে। এসব চুরির ঘটনা নিয়ে তানোর থানায় ও মুন্ডুমালা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে অনেকে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু পুলিশ নীরব থাকায় চোর সিন্ডিকেট বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

চলতি মাসেই হঠাৎ করে তানোর ও মুন্ডুমালা বাজার ছাড়াও বিভিন্ন মোড়ে দিনে ও রাতে বেড়েছে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা। তবে, পুলিশি টহল জোরদার না থাকার কারণে একের পর এক বাইক চুরির ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলার সর্বত্র।

তথ্যনুন্ধানে জানা গেছে, তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা মহিলা দাখিল মাদরাসার অফিস সহকারী একরামুল হক। তিনি ২৫ আগস্ট শুক্রবার তার ডিসকভারী ১২৫ সিসি মোটরসাইকেলটি মুন্ডুমালা পৌর বাজারের বড় মসজিদের পাশে রেখে জুম্মার নামাজ পড়তে মসজিদে ঢোকেন। বাইকটির নিবন্ধন নম্বর নবাব হ-৫৬৬১। নামাজ শেষে এসে দেখেন তার মোটরসাইকেলটি সেখানে আর নেই। চুরি হয়ে চুরি গেছে।

এছাড়া তানোর পৌরসভার কাশিম বাজারের সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক প্রতিদিনের ন্যায় তার বাজাজসিটি মটরসাইকেল দোকানের সামনে রেখে ব্যবসা কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এঅবস্থায় ১৭ আগস্ট রাত ৮টার দিকে দেখেন তার মটরসাইকেল সেখানে আর নেই। চুরি হয়ে গেছে। পরে থানায় অভিযোগ করা হয়। কিন্তু অভিযোগের ১০ দিনেও ঘটনা তদন্ত করেনি পুলিশ বলে জানান আব্দুল মালেক।

ওই একই দিন ১৭ আগস্ট মুন্ডুমালা ফজর আলী মোল্লা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী রাজ মেট্রো ই-১৩-২৮৬৫ নম্বর মটরসাইকেল বাইরে রেখে এইচএসসি পরিক্ষা দেবার জন্য কেন্দ্রে ঢুকেন। পরীক্ষা শেষে বের হয়ে দেখেন তার ডিসকভারী ১৩৫ সিসির বাইকটি সেখানে আর নেই। চুরি হয়ে গেছে।

এঘটনার ৩ দিন আগে ২০ আগস্ট উপজেলার বাধাঁইড় ইউপির আব্দুল জলিল নামের এক গ্রাম পুলিশ (চকিদার) এর হিরো মোটরসাইকেল মুন্ডুমালা বাজারের গোল চত্বরে রেখে চা খেতে হোটেলে ঢোকেন তিনি। মাত্র ৫ মিনিট পরে এসে দেখেন তার বাইকটি আর সেখানে নেই। চুরি হয়ে গেছে। যার নিবন্ধন নম্বর নবাব-হ ১৩-৬৮৭৯। ওই দিনই মুন্ডুমালা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে চুরির লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন হুদিস করতে পারেনি পুলিশ।

এছাড়া ২ আগস্ট উপজেলার সাদিপুর গ্রামের কায়েশ উদ্দিনের পুত্র আবু বক্কর নামের একব্যক্তি হিরো হ-১৩-৪৭০৪ নম্বর মটরসাইকেল মুন্ডুমালা বাজারের গোল চত্বরে রেখে চা খেতে হোটেলের ভিতরে যান। বের হয়ে দেখেন তার বাইক নেই। তিনি সেই দিনই তানোর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু এতোদিনেও কাউকে শনাক্ত করে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

মুন্ডুমালা পৌরসভায় ট্রাক চালকের চাকুরি করেন তপন কুমার মন্ডল। তার ডিসকভারী রাজমেট্রো হ ১২-৯৭০৩ মটরসাইকেল পৌর চত্বর হতে চুরি হয়। তিনি জানান, পৌরসভার সিসি ক্যামেরাই দেখা যাচ্ছে চোরের দল তার মোটরসাইকেটি নিয়ে যাচ্চে। সেদিনই মুন্ডুমালা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে অভিযোগ দেয়া হয়। পুলিশ এসে সিসি ক্যামের ছবি নিয়ে গেছেন। কিন্তু অভিযোগের এতোদিনেও কোন হুদিস বের করতে পারেনি পুলিশ।

এমন চুরির ঘটনা শুধু একরামুল, জলিল, তপন ও মালেকের ক্ষেত্রে ঘটে শেষ হয়নি। তানোর ও মুন্ডুমালাজুড়ে মোটরসাইকেল চুরির হিড়িক পড়েছে। চলতি আগস্ট মাসেই মুন্ডুমালা বাজার থেকে ৫টি আর তানোর সদর থেকে ৬টি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে। এভাবে ২ মাসের ব্যবধানে শুধু মুন্ডুমালা হতে ১০টি আর তানোর সদর ও উপজেলার আশপাশের ইউনিয়নগুলো হতে আরও ১৫টির মতো মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে বলেন, চোর সিন্ডিকেট অতি নিরাপদে অল্প সময়ে চুরি করে চম্পট হলেও টের পাচ্ছে না কেউ। একারণে হয় তো তানোরকে বেছে নিয়েছেন তারা। সহজে মোটরসাইকেল চুরি করে গায়েব করছেন মোটরসাইকেল চোরের এসব সিন্ডিকেট। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এসব চোরের সিন্ডিকেট ব্যাপারে জ্ঞাত হলেও অজ্ঞাত কারণে নিশ্চুপ পুলিশ।

এবিষয়ে মুন্ডুমালা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মনিরুল ইসলাম বলেন, চোরের সিন্ডিকেটকে ধরার জন্য পুলিশ কাজ করছে। বাজারে ৩টি বণিক সমিতি থাকার পরও ১টি সিসি ক্যামেরাও নেই। সিসি ক্যামেরা থাকলে সিন্ডিকেটের স্থানীয় কেউ থাকলে সহজে চেনা যেত। আমরা বাজারে সবাইকে সচেনত করতে কাজ শুরু করবো।

তানোর থানার অফিসাস ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রহিম বলেন, মুন্ডুমালা বাজার থেকে এতো মোটরসাইকেল চুরি হওয়ার ঘটনা দু:খজনক। তবে, কাশিম বাজারে মটরসাইকেল চুরির ব্যাপারে অবগত নয়। এরপরও চোরাই মটরসাইকেল উদ্ধারে কাজ করছে পুলিশ।

এব্যাপারে সিনিয়ার সহকারী পুলিশ সুপার তানোর-গোদাগাড়ী সার্কেল মো. সোহেল রানা বলেন, শুক্রবার কাঁকনহাটে মটরসাইকেল চোরকে আটক করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চেয়ে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের তদন্তে এই সিন্ডিকেট অল্প সময়ে ধরা পড়বে বলে আশা করছেন পুলিশ অফিসার সোহেল রানা।