দুর্গাপুরের শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ


দুর্গাপুর প্রতিনিধি: বিদ্যালয় অধ্যায়ন না করলেও তথ্য গোপন করে বিদ্যালয়ে ভর্তি দেখিয়ে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার নওপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সোহরাব হোসেনের বিরুদ্ধে উপবৃত্তির তালিকায় নিজকন্যার নাম অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।  বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হয়ে এ ধরনের দুর্নীতি অনিয়ম এর সাথে জড়িত থাকায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী অভিভাবক সহ  চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে সর্বমহলে।
তথ্য গোপনের মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিজ কন্যার নামে উপবৃত্তির তালিকা প্রদানে  অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া প্রধান শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে এলাকাবাসী।
জানা গেছে, রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার নওপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সোহরাব হোসেনের কন্যা অত্র বিদ্যালয় অধ্যয়ন না করলেও বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও শ্রেণীর শিক্ষকের সাথে যোক সাজসের মাধ্যমে দূর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করে  উপবৃত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিয়েছেন। এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালক ও দুর্গাপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ হয়েছে।
অভিযোগে জানাযায়, রাজশাহীর দুর্গাপুর নওপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সোহরাব হোসেনের কন্যা তার নানার বাড়ি কাটাখালীর দেওয়ানপাড়া বাসায় থেকে পড়াশোনা করে। সে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী পাটকল উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে নিয়মিত অধ্যয়ন করে আসছে।
অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নিকট শিক্ষার্থী উপবৃত্তির আবেদন জানালে,, আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষক উপবৃত্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করতে গেলে সেখানে তিনি দেখতে পান এই শিক্ষার্থীর নামে দুর্গাপুর উপজেলা নওপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় হতে উপবৃত্তির আবেদন করা হয়েছে। পরে শিক্ষার্থীর মাতা ফরিদা বেগম খোঁজ নিয়ে জানতে পারে তার কন্যার পিতা নিজ বিদ্যালয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তার কন্যার উপবৃত্তির আবেদন করেছেন। এই কারণে তার মেয়ের উপবৃত্তির আবেদন করা গেলো না এতে সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন।
অভিযোগের সত্যতা জানতে সংবাদকর্মীরা দুর্গাপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে গেলে উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হোসেনের অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ মিলে।
এ বিষয়ে রাজশাহী পাটকল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন একজন শিক্ষক হয়ে দুর্নীতি অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে নিজ কন্যার নামে উপবৃত্তির তালিকা প্রদান করা বড় ধরনের অপরাধের শামিল। বিদ্যালয় হতে উপবৃত্তির তালিকা প্রণয়নের  বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি, প্রধান শিক্ষক ও শ্রেণি শিক্ষক এর তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি রয়েছে।
নিয়ম, অনুযায়ী কমিটির সকল সদস্য যাচাই বাছাই করে সঠিক নিয়ম নীতির মধ্যে থাকা ছাত্রীদের উপবৃত্তির আবেদন গ্রহণপূর্বক সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রধানের নিয়ম থাকলেও কমিটির সকল সদস্য দুর্নীতি ও অনিয়ম করে
মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রধান শিক্ষকের কন্যার উপবৃত্তির আবেদন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রদান করেছে। এত বড় দুর্নীতি অনিয়মের সাথে জড়িত থাকা প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও শ্রেণী শিক্ষকের বিরুদ্ধে দাপ্তরিক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানিয়েছেন পত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ সুশীল সমাজ।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নওপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শ্রেণী শিক্ষক আঃ মালেক জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কন্যা স্কুলের নিয়মিত ছাত্রী না স্বীকার করে বলেন, পবিত্র কার কার তালিকা প্রদান করা হয়েছে এ বিষয়ে আমার জানা নেই এটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের অফিস সহকারীকে নিয়ে তালিকা প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দিয়েছে বলে আমার জানা। আমি এ বিষয়ে জড়িত নই। এ বিষয়ে নওপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি শামসুল হক নান্টু’র সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, নওপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় হতে কোন কোন ছাত্রের উপবৃত্তির তালিকা প্রদান করা হয়েছে এ বিষয়ে শিক্ষক আমার সাথে কোন সমন্বয় করেনি বা আমাকে জানায়নি।
এটি সম্পূর্ণ প্রধান শিক্ষক করেছেন আমি এই তালিকার সাথে জড়িত নয়। এ বিষয়ে নওপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সোহরাব হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,  আমার মেয়েকে আমি আমার স্কুলে ভর্তি করেছিলাম।  আমার মেয়ের মায়ের সাথে পারিবারিক সমস্যার কারনে আমার মেয়ে বর্তমানে তার মায়ের সাথে নানীর বাড়ী কাটাখালী দেওয়ান পাড়ায় থাকে। আমার মেয়ে সেখানে কোন বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে কিনা এটা আমার জানা নেই। আমার মেয়ে তার মায়ের কাছে থাকলে তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে তাকে মায়ের কাছ থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমার বিদ্যালয় থেকে তার নামে উপবৃত্তির আবেদন দিয়েছি।
এ বিষয়ে দুর্গাপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহীদুল হক বলেন, নওপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সোহরাব হোসেন এর বিরুদ্ধে উপবৃত্তির তালিকা প্রণয়নে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার পরে নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখি সে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তার মেয়েকে উপবৃত্তির তালিকায় নাম দিয়েছে। একজন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে এ ধরনের মিথ্যা তথ্য দিয়ে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে নিজ মেয়েকে উপস্থিত তালিকায় নাম দেওয়া ঠিক হয়নি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর মো. আব্দুল খালেক সরকার বলেন, যদি কোন শিক্ষার্থী  বিদ্যালয়ে অধ্যায়ন না করে আর সেই শিক্ষার্থীর নাম উপবৃত্তির তালিকায় দেওয়া চূড়ান্ত অপরাধ। একজন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের আচরণ এ ধরনের হওয়া উচিৎ নয়। এবিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি, সংশ্লিষ্ট  দপ্তরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে দাপ্তরিক নিয়ম অনুযায়ী অনিয়মকারী ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।