ধারাবাহিক পর্ব-১ পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনিয়মের আখড়া! রেগীদের দূর্ভোগ চরমে


পুঠিয়া (রাজশাহী) প্রতিনিধি: রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনিয়মের আখড়াই পরিণত হয়েছে। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আউট ডোরে সরকারী নিয়ম অনুযায়ী অফিস সময়ে ডাক্তারা অনুপস্থিত থাকা ও তাদের ইচ্ছে মত হাসপাতালে আশা যাওয়ায় রেগীদের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৮ টা থেকে আড়াই টা পর্যন্ত আউট ডোরে ডিউটি করার নিয়ম আছে। অথচ সেই নিয়মকে তেয়াক্কা না করেই ইচ্ছে মত ১০ টার পর ডাক্তারা অফিসে আসেন আর ১ টা বাজলেই হাসপাতাল থেকে চলে যায়।

 

সোমবার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুপুর ১ টার দিকে গিয়ে জানা গেছে, আউট ডোরে সকল ডাক্তারের রুম বন্ধ। সেই সাথে রোগীদের টিকিট কাউন্টার ও ঔষুধ দেওয়ার রুমও বন্ধ রয়েছে। সেই সময় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নাজমা আক্তার উপজেলা পরিষদে মিটিং-এ ছিলেন। এ সময় দুই জন সাংবাদিক উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কার্যালয় থেকে ফিরার সময় হাসপাতালের ২য় তলায় জুনিয়ার কনসালেন্টট (অর্থো-সার্জারী) ডাঃ সাঈদ আহম্মেদ সাংবাদিকদের উপর ক্ষিপ্ততা প্রকাশ করেন।

 

অভিযোগ উঠেছে, দুই একজন ডাক্তার ছাড়া সবাই সরকারী নিয়মকে তোয়াক্কা না করেই জেলা সদরে থাকেন এবং সেখান থেকেই তাদের নিজস্ব নিয়মে ইচ্ছেমত অফিস করেন। এদের মধ্যে জুনিয়ার কনসালেন্টট (অর্থো-সার্জারী) ডাঃ সাঈদ আহম্মেদ ও গাইনী ডাক্তার ফারজানা নাজনীন দুই জনই করোনা শুরু থেকে রোগীদের সাথে অসদ আচরণ করেন। উনারা নিজে ডাক্তারের রুমে এক কোনায় টেবিল চেয়ারে বসে থাকেন। আর ডাঃ সাঈদ এর পিয়ন দুর্গাপুরের ওয়াজেদ এবং ডাঃ ফারজানার পিয়ন বিথী কে দিয়ে কাগজপত্র নেওয়া এবং রোগীর সমস্যার কথা শুনেন। রোগকে তাদের রুমে ঢুকতে দেওয়া হয়না এবং তাদের কথাও শোনেন পিয়নের মাধ্যেমে।

 

এছাড়া অভিযোগ রয়েছে কোন হাত-পা ভাঙ্গা রোগী আসলে তাদের বেন্ডিস না করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এই কাজ তিনি করোনার শুরু থেকে করে আসছেন। অপদিকে সরকারী জিপ গাড়ী স্টেশনে থেকে ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নিজের ইচ্ছে মত জেলা সদরে তার নিজ বাড়িতে যাওয়া আসা করেন। কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাইনা।

 

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কার্যালয় থেকে জানা গেছে, রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ২৮ জন ডাক্তার কর্মরত আছেন। এর মধ্যে ৫ জন সাব সেন্টারে এবং ২ জন ডাক্তার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করেন। জানা গেছে, ২১ জন ডাক্তার কর্মরত থাকলেও প্রতিদিন মাত্র ৫ জন করে ডাক্তার আউট ডোর ডিউটি করে থাকেন। এর ধারাবাহিকতায় সোমবার ডিউটিতে ছিলেন ডাঃ রনক আফরোজ, ডাঃ জান্নাতুন ফেরদৌস ও সম্প্রতি যোগদান কৃত ডাঃ শিশু ডাক্তার শুভ্র প্রকাশ পাল, ডাঃ মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এবং ৪ দিন পর জুনিয়ার কনসালেন্টট (অর্থো-সার্জারী) ডাঃ সাঈদ আহম্মেদ।

 

সরকারী নিয়মের তোয়াক্কা না করে মেডিকেল অফিসার গণ তাদের নিজস্ব নিয়মে ইচ্ছে মত ডিউটি করে থাকেন। এর কারণে এলাকার রোগীরা সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জুনিয়ার কনসালেন্টট (অর্থো-সার্জারী) ডাঃ সাঈদ আহম্মেদ, সাংবাদিকের সাথে ক্ষিপ্ততা প্রকাশ করে বলেন আমি কবে কখন অফিসে আসবো বা যাবো সেটা আপনাকে জবাব দেব কেন? আপনি কে? উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নাজমা আক্তার জানান, ডাক্তারা সবাই সময়মত হাসপাতালে আসেন এবং নির্ধারিত সময় পর্যন্ত থাকেন।

 

আর অনেক ডাক্তাররা দুপুর ১ টা বাজলে কেউ কেউ নামাজ পরতে আবার কেউ কেউ খেতে যায়। আর আজকের বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি অসুস্থ থাকার কারণে আর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সরকারী বাসভবন না থাকায় গাড়ি নিয়ে জেলা সদরে বাসভবনে যাতযাত করি। তবে তেল খরচ সরকারী পাশাপাশি আমার নিজের টাকা দিয়ে ক্রয় করি।

 

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ জানান, বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। এ ব্যাপারে রাজশাহী জেলা সির্ভিল সার্জন ডাঃ মোঃ কাইয়ুম তালুকদার জানান, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।