পুঠিয়ার বানেশ্বরে প্রভাবশালীর দখলে থাকা জমি ফেরত পেলেন প্রকৃত মালিক


নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর পুঠিয়ার বানেশ্বর খুটিপাড়া এলাকার বেলাল উদ্দিন নামের এক ব্যাক্তির জমি দীর্ঘ দিন থেকে প্রভাব খাটিয়ে জোরপূর্বক দখলে রেখেছিলেন বাণেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য (মেম্বার) আলতাফ হোসেন। বৈধ মালিকানা থাকা সত্ত্বেও প্রভাবশালী আলতাফ হোসেনের হুমকী-ধামকীর কারনে প্রাণভয়ে নিজের জমিতে যেতে পারতেন না বেলাল উদ্দিন। রোববার স্থানীয় ইউপি সদস্য, বণিক সমিতির নেতা ও গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের সহযোগিতায় জমিটি বুঝে পেয়েছেন বেলাল উদ্দিন।

পুঠিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ ফিরোজ শাহ্ স্বাক্ষরিত আদেশনামা সূত্রে জানা গেছে, পুঠিয়ার শিবপুর মৌজার আর.এস ৯৫৩ নং খতিয়ানভুক্ত হাল ৫২৮৭ নং দাগের দশমিক ০৭ একর জমির রেকর্ডীয় মালিক ছিলেন আব্দুল সেলিম ও মাসুদুর রহমান। তাঁদের নামে প্রচলিত থাকা অবস্থায় তাঁদের বোন মাহমুদা খাতুন দশমিক ০১৭৫ সহাশ্রাংস জমি জনৈক ইদ্রিস আলী ও ওমর আলীর নিকট হস্তান্তর করেন এবং মা শামসুন্নাহার ও বোন মাহমুদা দশমিক ০৪২৭ সহাশ্রাংস জমি আব্দুল কুদ্দুস বরাবর হস্তান্তর করেন। এছাড়া বোন মাহমুদা আবারও ভিন্ন দলিলে দশমিক ০১৮১ সহাশ্রাংস জমি আব্দুল কুদ্দুস বরাবর হস্তান্তর করেন। পরবর্তিতে আর.এস রেকর্ডীয় মালিক সেলিম রেজা ও মাসুদ রেজা নিয়মত্রান্তিকভাবে তাঁদের সম্পত্তি পৃথক দলিল মুলে দশমিক ০৭১৩ সহাশ্রাংস জমি বেলাল উদ্দিনের নামে হস্তান্তর করেন। বেলাল উদ্দিন ওই জমি প্রাপ্তির পর আলতাফ হোসেন নামীয় খারিজ কেস বাতিল পূর্বক তাঁর নামে খারিজের আবেদন জানান।

উভয় পক্ষের বক্তব্য ও তাদের দাখিলকৃত দলিলপত্র দৃষ্টে প্রতীয়মান হয় যে, বেলাল উদ্দিন মুল আর.এস রেকর্ডীয় প্রজার নিকট হতে নালিশী জমি ক্রয় করেছেন। অপরদিকে প্রতিপক্ষের দাবিকৃত নালিশী জমি আর.এস রেকর্ডীয় প্রজার মা এবং বোনের কাছ থেকে আলতাফ হোসেন ক্রয় করেছেন যা সম্পুর্নরুপে আইন বহির্ভুত। যেহেতু আর.এস রেকর্ডীয় প্রজা সেলিম রেজা ও মাসুদ রেজা আলতাফ হোসেন বরাবর হস্তান্তর করেননি সেহেতু আলতাফ হোসেনের দলিল আইন প্রযোজ্য নয়।

তাছাড়া নালিশী সম্পত্তি খরিদসূত্রে মালিক আতাউর রহমান ও আজিজুল হক গং পৃথক দলিলে সেলিম রেজা ও মাসুদ রেজা বরাবর হস্তান্তর করার ফলে তাঁদের নাম আর.এস খতিয়ান চুড়ান্তভাবে প্রস্তুত হওয়া এবং আর.এস রেকর্ডীয় প্রজাগণের নিকট হতে বেলাল উদ্দিন খরিদসূত্রে দশমিক ০৭১৩ সহাশ্রাংস জমির বৈধ মালিকানা স্বত্ব প্রাপ্ত হওয়ায় আলতাফ হোসেনের নাম সৃজিত খারিজ কেসটি বাতিল করা হয়। একই সাথে বেলাল হোসেনের কেসভুক্ত জমি মুল হোল্ডিংয়ে নেয়ার জন্য ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়। ২০০৯ সালের ১১ জুন এই আদেশ দেন পুঠিয়ার সহকারী কমিশনার ভূমি মোঃ ফিরোজ শাহ্।

ওই আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রভাব খাটিয়ে জমিটি অবৈধভাবে দখলে রেখেছিলেন প্রভাবশালী আলতাফ হোসেন। এ নিয়ে উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ওই জমির বৈধ মালিক বেলাল উদ্দিন। রোববার সকালে স্থানীয় ইউপি সদস্য, বণিক সমিতির নেতা ও গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের মধ্যস্থতায় নিজের জমিটি ফেরত পেয়েছেন বেলাল উদ্দিন।

বেলাল উদ্দিন জানান, আলতাফ হোসেন প্রভাবশালী হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে জমিটি ভোগদখল করার পাঁয়তারা করছিলো। বিভিন্ন সময় তাঁর কাছ থেকে চাঁদা নেয়া হয়েছে। এমনকি নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করে তাঁকে এলাকা ছাড়া করা হয়েছে। এ ব্যাপারে থানা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করলে থানা পুলিশ তাকে ওই জমি নিজের দখলে নিতে বলেন। পুলিশের দেয়া পরামর্শ অনুযায়ী তিনি তাঁর জমি বুঝে পেয়েছেন বলেও জানান।