বগুড়ায় ভুট্টার বাম্পার ফলন লাভের আশায় কৃষকেরা


দীপক সরকার, বগুড়া প্রতিনিধি: চলতি মৌসুমে ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে বগুড়ায়। অনুকূল আবহাওয়া, রোগ কম হওয়ার কারণে ভুট্টার ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। এ বছর রেকর্ড পরিমান জমিতে ফলন ভালো হয়েছে। সে হিসাবে ১ লাখ ২২ হাজার টন ভুট্টার উৎপাদন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে জেলার কৃষি বিভাগ। এবার প্রতি মণ কাচা ভুট্টা ৯শ টাকা এবং শুকনা ভুট্টা ১১শ থেকে ১৩শ টাকায় বিক্রি করছেন। তবে বাজারে ভুট্টার দাম ভালো থাকায় লাভের আশা করছে স্থানীয় ভুট্টা চাষিরা।

জেলা বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার উপজেলাগুলোর মধ্যে শেরপুর, বগুড়া সদর, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনট, নন্দীগ্রাম, শিবগঞ্জ, কাহালু, আদমদীঘি, দুপচাঁচিয়া, শাজাহানপুরসহ ১২টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা এবার ১২ হাজার ২২ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন। এরমধ্যে চরাঞ্চলের তিনটি উপজেলায় প্রায় নয় হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা লাগানো হয়েছে। এ চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৯ হাজার ৬শ ৮৮ মেট্রিক টন। জেলার যমুনা নদীর তীরবর্তী সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনট উপজেলার যমুনা ও বাঙালি নদীর চরে শত শত একর জমিতে এবং শেরপুর, গাবতলী, শাজাহানপুর উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানে ভুট্টা চাষাবাদ করেছেন কৃষকরা।

এ বছর জেলায় ভুট্টার আবাদ বেড়েছে। অল্প খরচে ও অল্প সময়ে অধিক মুনাফা অর্জনকারী ফসল হওয়ায় কৃষক গম কাটার পরে খরিপ মৌসুমেও ভুট্টা লাগিয়েছেন। কৃষকদের চাষাবাদের তালিকায় রয়েছে উচ্চ ফলনশীল ভুট্টা। এরমধ্যে এন এইচ-৭৭২০, এনকে-৯৪০, সুপার সাইন-২৭৪০, এম গোল্ড-৯০০ ইত্যাদি রবি ও খরিপ মৌসুমি ভুট্টা অন্যতম। কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় উপজেলাগুলোয় ভুট্টার চাষ ব্যাপক হারে বেড়েছে।

লাভজনক এ ফসল চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তোলার লক্ষ্যে জেলা কৃষি অধিদপ্তর সার বীজ ও কৃষি পুনর্বাসনসহ পরামর্শ সহায়তা দিয়ে কৃষকদের উৎসাহী করছে। ফলে দিন দিন কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে ভুট্টা চাষে। মানুষের খাদ্যের পাশাপাশি মাছ, হাঁস-মুরগি ও গো-খাদ্য হিসেবে ভুট্টার ব্যবহার বাড়ায় এর চাহিদাও বেড়েছে।
বগুড়া জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কৃষি প্রধান এলাকা হওয়ায় বগুড়ায় সব ধরনের ফসল ফলে। চলতি বছর অন্যান্য ফসলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বগুড়ায় রেকর্ড পরিমাণ ভুট্টার চাষ হয়েছে।

গত বছর জেলায় ৭ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছিল। এ বছর জেলায় ৮ হাজার ৭৫০ হেক্টরে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে ১২ হাজার ১০ হেক্টরে চাষ হয়েছে। ১৯৯৮ সালে জেলায় ভুট্টার আবাদ হতো মাত্র ২ হাজার ১৬৪ হেক্টর জমিতে। পর্যায়ক্রমে চাষ বেড়ে গিয়ে এখন ১২ হাজার ১০ হেক্টরে চাষ হচ্ছে। এবার ১ লাখ ২২ হাজার ৫২৩ টন ভুট্টা উৎপাদন হবে বলে বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ও কৃষকেরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

কৃষকদের ভাষ্যমতে জানা যায়, প্রতি বিঘা ভুট্টা চাষে খরচ ১০-১২ হাজার টাকা। সে অনুপাতে বিঘাপ্রতি ফলন আসে ৩০-৩৫ মণ। তবে চর এলাকায় বিঘাপ্রতি ভুট্টার ফলন ৪৫-৫০ মণ।

বগুড়া সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের হাসনাপাড়া গ্রামের চাষী আব্দুর রহমান এ বছর ১০ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন। মাড়াই শুরুর পর প্রতি বিঘায় ৩৫ মণের উপরে করে ভুট্টা তুলেছেন। বাজারে মণপ্রতি ৯’শ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন।

সারিয়াকান্দি উপজেলার চাষী আব্দুল গফুর জানান, চরে অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভুট্টার ফলন বেশি হয়। কম খরচে বেশি লাভবান ভুট্টা। এরই মধ্যেই ভুট্টা জমি থেকে কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। প্রতি বিঘায় ফলন পাচ্ছেন ৪০ মণের বেশি। এ বছর গত বছরের তুলনায় আবাদ বেশি হয়েছে।

শেরপুর উপজেলার শালফা গ্রামের কৃষক জেকের আলী ও মিজানুর রহমান জানান, উভয়য়ে ১০ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। আগাম ভুট্টা চাষে ভালো ফলন পাওয়া যাবে। একই উপজেলার বোয়ালকান্দি গ্রামের গাজিউর রহমান ৩ বিঘা, সুঘাটের চরকল্যানী গ্রামের জহুরুল ইসলাম ৭ বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছে। ভুট্টা চাষে জমিতে পানি সেচ কম লাগে এবং ফলনও অন্য ফসলের তুলনায় বেশি।

তারা বলেন, প্রতি বিঘার বিপরীতে তাদের খরচ হবে সর্বোচ্চ ১৭ থেকে ২০ হাজার টাকা। এরমধ্যে বীজ, সার, পানি, জমি প্রস্তুত, লাগানো, শ্রমিক মজুরি, কাটা-মাড়াইসহ আনুষাঙ্গিক খরচ রয়েছে। প্রতি বিঘায় উর্বরতার ভিত্তিতে উৎপাদন হয় গড়ে ৪৫-৫৫ মণ হারে। প্রতিমণ ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে কমপক্ষে ১১শ থেকে ১৩শ টাকা মণ হিসাবে।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান জানান, জেলায় দুই মৌসুমেই ভুট্টা চাষ হয়। রবি মৌসুমে বেশি চাষ হয়। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮৫ শতাংশ ভুট্টার ফলন ঘরে তোলা হয়েছে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচলক(শষ্য) কৃষিবিদ মো.এনামুল হক জানান, আলুর চেয়ে ভুট্টা চাষ লাভজনক। পরিশ্রম ও উৎপাদন খরচ কম। গত বছর প্রতি মণ ভুট্টা বিক্রি হয়েছে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। বিঘাতে ৪০ মণ পর্যন্ত ভুট্টা উৎপাদন হয়।

চলতি মৌসুমে জেলায় ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে। এ হিসাবে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮৯ হাজার ৬৮৮ টন। এখন পর্যন্ত ভুট্টা চাষ হয়েছে ১২ হাজার ৬ হেক্টর জমিতে। তবে কৃষক তাদের উৎপাদিত এ ফসলে বেশ লাভের মুখ দেখবে। তাছাড়া কৃষিখাত এগিয়ে নিতে বগুড়ার কৃষকদের বিভিন্ন ফসল চাষে প্রশিক্ষণ ও সরকারিভাবে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে বলেও দাবী করেন ওই কর্মকর্তা।