বগুড়ায় প্রস্তুত সোয়া ৪ লাখ কোরবানিযোগ্য পশু


দীপক কুমার সরকার, বগুড়া প্রতিনিধি: আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে কোরবানির গরু বিক্রি নিয়ে খামারিরা যেমন শঙ্কায় আছেন, তেমনি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ক্রেতারাও। কারণ হিসেবে এ বছর গো-খাদ্যের দাম অত্যাধিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় কোরবানি পশু প্রস্তুতকরণে ব্যায় বেশী হয়েছে। অপরদিকে গত ২ বছরে করোনায় লকডাউনে কৃষিখাতসহ ব্যবসা বাণিজ্যে অর্থনৈতিকভাবে ঘাটতি থাকায় অধিকদামে পশু ক্রয় করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে ক্রেতারা।

জুলাই মাসের ১০ তারিখে পবিত্র ঈদ উল আযহা উৎসব শুরু হবে, তবে পুরোদমে বগুড়ার জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে কোরবানির হাট না হলেও কিছু কিছু হাটে কোরবানির গরু দেখা গেলেও এখনো পুরোদমে বেচাকেনা শুরু হয়নি। সাধারণ দিনের মত বগুড়ার হাটে কোরবানির পশু কেনাবেচা হচ্ছে। বগুড়ায় কোরবানির জন্য পশু চাহিদা ৩ লাখ ৫৯ হাজার আর পালন হয়েছে প্রায় সোয়া ৪ লাখ পশু। তাছাড়া খামারে দেশীয়জাতের পশু লালন পালন করে লাভের আশায় হাটে হাটে কোরবানির পশু তুলতে স্বপ্ন বুনছে জেলার ৪৬ হাজার ১৫জন খামারীরা।

জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ হাট বগুড়ার মহাস্থানগড় গরুর হাট। এই হাটের সাথে, ঘোড়াধাপ, সুলতানগঞ্জ হাট, শেরপুর হাট, সাবগ্রাম হাট, পেরী হাট, নামুজাসহ প্রায় শতাধিক স্থানে গরুর হাট বসে। এই সব হাটে স্থানীয়ভাবে যেমন কোরবানির পশু কেনাবেচা হয় ঠিক তেমনি অন্য জেলার জন্যও পশু কেনাবেচা হয়। বগুড়ার খামারীরা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে খামারে কোরবানি উপযোগী পশু লালন পালন করে লাভের আশা করছেন। খামারীরা দেশী জাতের প্রচুর গরুর লালন পালন করেছে। খামারি এখন কোরবানির হাটকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।

নিজেদের খামারের গরু, ছাগল, ভেড়াসহ কোরবানির প্রাণী হাটে তোলার আয়োজনে রয়েছে। এদিকে বগুড়ার হাটগুলোকে কেন্দ্রে করে মৌসুমী গরুর ব্যাপারীদের আনাগোনা বেড়েছে। গরুর ব্যবসায়ীরা গরু এক জেলা থেকে অন্য জেলার হাটে বিক্রি করে থাকে। গত বছর বগুড়ার হাটগুলোতে চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুরের ব্যবসায়ীদের গরু ক্রয় করতে দেখা গেছে। বগুড়া সদরে মোট খামারি রয়েছে ৩ হাজার ৪২০টি। এরমধ্যে কোরবানিযোগ্য ১ হাজার ২২০টি পশু নিয়ে সবচেয়ে বড় গরুর খামার গড়ে তুলেছে টিএমএসএস নামের এক এনজিও প্রতিষ্ঠান।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে জেলার মোট ১২টি উপজেলার ৪৬ হাজার ১৫ জন খামারি মোট ৪ লাখ ২৭ হাজার ২শ’ ৯৫টি গবাদি পশু কোরবানিযোগ্য করে তুলেছেন। এ বছর জেলায় কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে পশুর চাহিদা রয়েছে ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩শ’ ৭৫টি। চাহিদার অতিরিক্ত পশু রয়েছে ৬৭ হাজার ৯শ’ ২০টি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় (৩৪২০ জন খামারি) ৪৪ হাজার ৯৩৯টি, শেরপুরে (৫৩০৪ জন খামারি) ৪৪ হাজার ১৮০টি, গাবতলীতে (৩০৩৯ জন খামারি) ৪০ হাজার ৩৯৩টি, সারিয়াকান্দিতে (৪৪৪৩ জন খামারি) ৩৮ হাজার ৮০৭টি, সোনাতলায় (৩৭৭৮ জন খামারি) ২৯ হাজার ১৮৮টি, শিবগঞ্জে (৪৪৬০ জন খামারি) ৪৩ হাজার ৮৪৫টি, কাহালুতে (২৪৯৬ জন খামারি) ৩৫ হাজার ৩১২টি, দুপচাঁচিয়ায় (৫৬৩০ জন খামারি) ৩২ হাজার ১৯৭টি, আদমদীঘিতে (২৪৩৪ জন খামারি) ৩০ হাজার ৬২টি, নন্দীগ্রামে (২২৬০ জন খামারি) ২৪ হাজার ৩৫৭টি, ধুনটে (৩৮৪৪ জন খামারি) ৩৭ হাজার ৭০৫টি এবং শাজাহানপুর উপজেলায় (৪৯০৭ জন খামারি) ২৯ হাজার ৩১০টি গবাদিপশু রয়েছে।

এ বছর কোরবানি পশু প্রস্তুত খামারে লালন পালন করা গরুর সংখ্যা বেশি হবে। এর মধ্যে গরু ২ লাখ ৬৭ হাজার ৭৯৮টি, মহিষ ১ হাজার ৭৩৩টি, ছাগল ১ লাখ ২৯ হাজার ৫৩৮টি, ভেড়া ২৮ হাজার ২২৬টি নিয়ে মোট কোরবানীযোগ্য গবাদিপশু রয়েছে ৪ লাখ ২৭ হাজার ২৯৫টি। এর বিপরীতে চাহিদা রয়েছে ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৭৫টি। চাহিদার চেয়ে বেশি পশু রয়েছে ৬৭ হাজার ৯২০ টি। গত বছর কোরবানি দেয়ার সংখ্যা ছিল সব মিলিয়ে প্রায় ৩ লাখ ২৬ হাজার ৪০৫টি। গত বছরের ঈদে এ জেলায় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ পশু জবাই করা হয়।

এদিকে শেরপুর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রায়হান জানান, শেরপুর উপজেলায় (৫৩০৪ জন খামারি) ৪৪ হাজার ১৮০টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। গত বছর ২৭/২৮ হাজার পশু কোরবানি হলেও এবার ৩০/৩১ হাজার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সেক্ষেত্রে ১৩/১৪ হাজার পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। তাছাড়া এ বছর শেরপুর উপজেলায় কোরবানির হাটে প্রায় ৩৫১ কোটি টাকা কেনাবেচা হবে বলে দাবী করে এই কর্মকর্তা।

জানা গেছে, এ জেলার ১২ উপজেলায় স্থায়ী হাট রয়েছে ৪৪টির মতো। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে স্থায়ী হাটসহ প্রায় ৮৯টি পশুর হাট বসবে। এসব হাটে কোরবানিযোগ্য পশুগুলো বিক্রির জন্য তোলা হবে। ইতোমধ্যেই স্থায়ীসহ অস্থায়ী হাটে বিক্রি অল্প পরিসরে শুরু করা হয়েছে।

বগুড়া জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাইফুল ইসলাম জানান, জেলায় এবারও কোরবানির হাট কিছু দিনের মধ্যে জমে উঠবে। খামারে এবার প্রচুর পরিমানে দেশীয়জাতের গরু পালন করা হয়েছে। গবাদি পশু মোটাতাজাকরণে খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে কেউ যেন ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার না করেন সেজন্য ইতোপূর্বেই প্রচারণা চালানো হয়েছে। পুরোদমে হাট শুরু হলে সেসব স্থানে মেডিক্যাল টিম বসানো হবে। জেলা কার্যালয়ের পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে স্ব স্ব প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা এ কাজের দেখভাল করবেন।

তিনি জানান, জেলায় চাহিদার তুলনায় বেশী পশু রয়েছে। বাড়তি পশুগুলো বিভিন্ন জেলায় চলে যায়। সবচেয়ে বেশি যায় ঢাকায়। এছাড়া চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেটে যায় কোরবানির পশু। বগুড়াবাসী দেশীয় পশু দিয়েই তাদের কোরবানির কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা।