বুড়িগঙ্গা নদী বিষাক্ত হয়ে উঠেছে


একসময় বুড়িগঙ্গা নদীকে বলা হতো ঢাকার প্রাণ, যেখানে প্রতিদিন বিকেল-সন্ধ্যায় নদীর তীরে ভ্রমণে আসতো মানুষ, সমৃদ্ধ ছিল জলজ প্রাণীতে এবং ইলিশ মাছ ছিল নগরবাসীর কাছে নদীর উপহার। কিন্তু এর সবটাই এখন ইতিহাস। বুড়িগঙ্গা বর্তমানে একটি মৃতপ্রায় নদী, অত্যধিক দূষণে বিপর্যস্ত এর পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য এবং হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য। সংবাদ সূত্র: A24 News Agency

রফিকুল ইসলাম নামের একজন যাত্রী মতে যিনি প্রতিদিন বুড়িগঙ্গা দিয়ে নৌকায় যাতায়াত করেন, “এটা অকল্পনীয় যে একসময় আমরা এই নদীতে স্নান করতাম এবং এই জল পান করতাম। এটি এতটাই দূষিত হয়ে গেছে যে আমরা এই পানি এখন স্পর্শও করি না। এছাড়াও, নদীর তীরগুলি এত নোংরা যে আমরা স্বস্তিতে হাঁটতে পারি না। আমরা নিয়মিত টার্মিনাল এবং নৌকার ভাড়া পরিশোধ করি, তবু কেউ এর দায়িত্ব নেয় না। এই পানি অত্যন্ত বিষাক্ত এবং দুর্গন্ধযুক্ত।”

বুড়িগঙ্গা নদীর উপর বিভিন্ন গবেষণায়, নদীর দূষণের জন্য অনেক কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে, যেমন উজান থেকে পলি জমা, নদীতে কঠিন বর্জ্য, পয়ঃনিষ্কাশন এবং শিল্প বর্জ্য অপসারণ।

মজিদ মিয়া (নৌকার মাঝি) বলেন “আমি এখানে ৩০ বছর ধরে আছি; একসময় আমরা এই নদীর পানি পান করতাম। তখন এর পানি দূষিত ছিল না। এখন আবর্জনা এবং শিল্প-কারখানার বর্জ্যের কারণে এটি দূষিত হচ্ছে। বর্ষাকালে এর পানি তুলনামূলক পরিস্কার থাকে তবে শীতকালে দূষণ অনেক বৃদ্ধি পায়, যা আমাদের এবং জলজ জীবনের জন্য সমস্যা নিয়ে আসে।”

ঢাকা শহরের ইতিহাস, জীবন-জীবিকা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য মূলত এই ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ নদীকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে। ব্রিটিশ আমলে, বুড়িগঙ্গা নদীর তীরকে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য ঢাকার সবচেয়ে মনোরম স্থান হিসাবে বিবেচনা করা হত এবং ঢাকার বাসিন্দাদের জন্য পানি সরবরাহের প্রধান উৎসও ছিল এটি। চারশো বছরেরও বেশি সময় ধরে নদীটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। কর্মকর্তাদের মতে, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০,০০০ মানুষ সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল – যা কিনা বিশ্বের বৃহত্তম নদী বন্দরগুলির মধ্যে একটি – যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করছে।

মোহাম্মদ সোহেল (ব্যাবসায়ী) বলেন, “নদী আগে অন্যরকম ছিল, এখন এটি বিষাক্ত এবং দুর্গন্ধযুক্ত। আমার ব্যবসার জন্য আমাকে প্রায়শই যাতায়াত করতে হয়। সরকার এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেছিল, তবে আমি এখনো কোনও পরিবর্তন লক্ষ্য করিনি। আমি নদীর পানি আগের মত দেখতে চাই।”