মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে ইউরোপের নীতির কড়া সমালোচনা অ্যামনেস্টির


গাজার রাফাহতে ইসরায়েলি বিমান হামলার পরে বুধবার ভবনের ধ্বংসস্তূপে বেঁচে যাওয়া জিনিসপত্র খুঁজছেন শিশু ও নারী। ছবি : এএফপি

মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে জার্মানিসহ ইউরোপের দেশগুলোর গৃহীত নীতির কড়া সমালোচনা করেছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটির এবারের বার্ষিক প্রতিবেদনে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি। সেই সূত্রেই মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে ইউরোপের দেশগুলোর মনোভাব ও অবস্থান নিয়ে প্রতিবেদনে কড়া মন্তব্য করা হয়েছে।

প্রতিবেদন পেশ করে জার্মানিতে অ্যামনেস্টির মহাসচিব জুলিয়া ডাচরো জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবকের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘বেয়ারবক তথ্যের ভিত্তিতে মানবাধিকার ভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করছেন না।’ ইসরায়েল-গাজা সংঘাত নিয়ে ‘ডবল স্ট্যান্ডার্ডের’ কথাও উল্লেখ করেছেন অ্যামনেস্টি প্রধান।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইউরোপের কিছু নেতা ও ইইউ নেতৃত্ব জাতিসংঘের চার্টারে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকারে উল্লিখিত নীতিগুলো মানছেন না। তাদের আচরণ ডবল স্ট্যান্ডার্ডের উদাহরণ হয়ে থাকছে।’

২০২৩ এর ৭ অক্টোবর হামাসের সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘হামাস ভয়ঙ্কর অপরাধ করেছে।’

যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ এবং অনেকগুলো দেশ হামাসকে ‘সন্ত্রাসবাদী সংগঠন’ বলে ঘোষণা করেছে। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ঢুকে হামাস এক হাজার ২০০ জনকে হত্যা করেছিল এবং প্রায় ২৫০ জনকে অপহরণ করে গাজা ভূখণ্ডে নিয়ে যায় এবং বন্দি করে রাখে।

জুলিয়া ডাচরো বলেন, ‘অ্যামনেস্টি হামাস বা কোনো সংগঠনকেই সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে অভিহিত করে না। কারণ, আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের কোনো সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি।’

ইসরায়েল নিয়ে অ্যামনেস্টি: অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘৭ অক্টোবরের পর ইসরায়েল পাল্টা আক্রমণের প্রচার শুরু করে। এরপর বেসামরিক মানুষের ওপর বেসামরিক পরিকাঠামোর ওপর নির্বিচারে আক্রমণ শুরু হয়।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা আন্তর্জাতিক ও মানবিক আইন মেনে গাজায় আক্রমণ করেছে। কিন্তু বাস্তবে তারা এই আইনের প্রধান বিষয়গুলো লঙ্ঘন করেছে।’

গত দুই বছর ধরে ইসরায়েল ও ইহুদি সংগঠনগুলো অ্যামনেস্টির প্রবল সমালোচনা করছে। কারণ, আগের প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি ইসরায়েলকে ‘বর্ণবিদ্বেষী’ বলে অভিযোগ করেছিল। ইসরায়েল সেই অভিযোগ খারিজ করে দেয়। ইসরায়েলের অভিযোগ, অ্যামনেস্টি ইহুদি-বিদ্বেষ বাড়াচ্ছে এবং তারা সংঘাত নিয়ে একপেশে মনোভাব নিয়েছে।

মানবাধিকার প্রসঙ্গ: অ্যামনেস্টির মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেন, ‘১৯৪৮ সালের সর্বজনীন মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি থেকে বিশ্ব পেছনের দিকে যাচ্ছে।’

অ্যামনেস্টি প্রধান বলেন, ‘২০২৩ সালে অনেক সরকার ও সমাজ স্বৈরাচারী নীতি নিয়েছে, যার ফলে মতপ্রকাশের অধিকার ও লিঙ্গ সমতার ওপর আঘাত এসেছে।’

এই প্রতিবেদনে ইউক্রেন যুদ্ধ ও চীনের আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের প্রসঙ্গও এসেছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন নিয়ে এতে বলা হয়, ‘এর ফলে বারবার যুদ্ধাপরাধ করা হয়েছে। যুদ্ধবন্দিদের ওপর অত্যাচার ও খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে। নদীবাঁধ ভেঙে দেওয়া, বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর আক্রমণ, খাদ্যশস্য রপ্তানি পরিকাঠামোর ওপর আক্রমণের ফলে পরিবেশগত বিপুল ক্ষতি হয়েছে।’