মানুষ কষ্ট করছে, প্রধানমন্ত্রীরও ঘুম নেই : ওবায়দুল কাদের


আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ শনিবার মহিলা শ্রমিক লীগের শোক দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ওবায়দুল কাদের। ছবি : এনটিভি

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জীবনযাত্রার ব্যয় যেভাবে বেড়ে গেছে; মানুষ কষ্ট করছে এটা ঠিক। কীভাবে মানুষকে একটু আরাম ও স্বস্তি দেওয়া যায়, প্রধানমন্ত্রী এই সংকট উত্তরণে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর আজ ঘুম নেই। আন্তরিকভাবে তিনি আপনাদের এই সংকট উত্তরণের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। করোনাকালেও তিনি রাতে ঘুমোতে পারেননি।’

আজ শনিবার আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহিলা শ্রমিক লীগের শোক দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক সংকটে বিভিন্ন দেশের বিরোধী দল ও সরকার একসঙ্গে কাজ করলেও বিএনপি মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে উল্টোপথে হাঁটছে মন্তব্য করে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সারা বিশ্বে সংকটে একটি নেতিবাচক প্রভাব আজকে বাংলাদেশ মোকাবিলা করছে। আমরা জানি অনেক মানুষের কষ্ট হচ্ছে। কস্ট অফ লিভিং যেভাবে বেড়ে গেছে, মানুষ কষ্ট করছে এটা ঠিক। কিন্তু আমাদের সামনে কোনও উপায় ছিল না।

এসময় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের তুলনামূলক মূল্যবৃদ্ধির কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমেরিকায় মূল্যবৃদ্ধি, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স; আমাদের প্রতিবেশি দেশ শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানসহ কেউ তো আজ আরামে নেই। বাংলাদেশের জনগণের কষ্ট হচ্ছে। চেষ্টার কোনও ত্রুটি নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আজকে ঘুম নেই। আন্তরিকভাবে তিনি আপনাদের এই সংকট উত্তরণের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। করোনাকালেও তিনি রাতে ঘুমোতে পারেননি। এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ঘুম হারাম হয়ে গেছে। কীভাবে মানুষকে একটু আরাম, স্বস্তি দেওয়া যায়।’

মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে বিএনপি সরকার পতনের ষড়যন্ত্র করছে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, পৃথিবীর বহু দেশ আজকে সমস্যায় জর্জরিত। আর এটাকে কেন্দ্র করে ফ্রান্স, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপানের বিরোধী দল প্রোটেস্ট করেনি, বিক্ষোভ মিছিল করেনি। প্রশ্ন সেখানে, সহযোগিতা চেয়েছিলাম আমরা। এই দুনিয়ায় সংকটে সবাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আর বাংলাদেশে তারা সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছে।

আওয়ামী লীগ সরকার কোনও বিদেশি শক্তির কাছে মাথা নত করে না দাবি করে কাদের বলেন, নিজেরা (বিএনপি) ইচ্ছেমতো মিছিল করছে পল্টন প্রেসক্লাবের সামনে। এতদিন বলতো আওয়ামী লীগ আমাদের মিছিল-মিটিং করতে দিচ্ছে না। এখন নেত্রী বলেছেন, ওরা করুক। যখন মিছিল-মিটিং করতে পারছে, তাদের সাহসের ডানা বিস্তারিত হচ্ছে। এখন তারা বলে বিদেশি শক্তির চাপে পুলিশ বাধা দিচ্ছে না।

ওবায়দুল কাদের বলেন, তাহলে এখন স্বীকার করলেন যে পুলিশ বাধা দিচ্ছে না? বিদেশি শক্তির চাপে মাথা নত করার মতো লোক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নয়। মনে রাখবেন, কোনও শক্তির কাছে আমরা মাথা নত করি না। শেখ হাসিনা আপন শক্তিতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে বলীয়ান। আমাদের সমস্যা-সংকট আমাদেরই সমাধান করতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব বেপরোয়া চালকের মতো আচরণ করছেন দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির মহাসচিব বলতে বলতে আজকে বেপরোয়া ড্রাইভার হয়ে গেছেন। বেপরোয়া ড্রাইভার এখন ফখরুল সাহেব। বেপরোয়া রাজনীতির চালক কখন যে কোথায় অ্যাক্সিডেন্ট ঘটায়! আগুন নিয়ে আসবেন না, বলে দিচ্ছি। সতর্ক করে দিচ্ছি। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আপনাদের কেউ বাধা দিচ্ছে না। কিন্তু আগুন সন্ত্রাস নিয়ে যদি নামতে চান, মোকাবিলা করতে চান; তাহলে বলবো, জনতার প্রতিরোধ সুনামিতে পরিণত হবে এবং সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।’

সংকটে নেতাকর্মী ও দায়িত্বশীলদের কথাবার্তায় সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীদের বলবো; প্রত্যেককে কথাবার্তা, আচার-আচরণে দায়িত্বশীল হতে হবে। এই সময়ে দায়িত্বজ্ঞানহীন কোনও কথা বলা সমীচীন নয়। এসময় ক্ষমতার দাপট দেখানো সমীচীন নয়। ঠান্ডা মাথায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। এটাই আজকে আমাদের সবচেয়ে বড়ো মেসেজ।’

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পেছনের শক্তি এখনও অজানা রয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পেছনের বিশ্বাসঘাতক যে রাজনৈতিক শক্তি, সবার নাম আমরা জানি না। সবার ভূমিকা এখনও পরিষ্কার নয়। তাই খুনিরা যখন বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রমণ করে তখন অনেককেই তিনি টেলিফোন করেছিলেন। তার ডাকে ছুটে এসেছিলেন শুধু একজন, তিনি হলেন নিরাপত্তা প্রধান কর্নেল জামিল। এই কর্নেল জামিলকেও সোবহানবাগ মসজিদের পাশে হত্যা করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এই খুনিরা পালিয়ে গেছে কীভাবে? কে পাঠিয়েছেন থাইল্যান্ড, জেনারেল জিয়াউর রহমান। খুনিদের পুরস্কৃত করেছেন জিয়াউর রহমান। পরবর্তীতে ক্ষমতা দখল। বিএনপি আমাদেরকে শত্রু ভাবে? অথচ ইতিহাস বলে শত্রুতা তারাই করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যাকে প্রাইম টার্গেট করে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরও যিনি কোকোর মৃত্যুর পর বেগম জিয়ার বাড়িতে ছুটে গিয়েছিলেন, শোকাহত মাকে সান্ত্বনা দিতে। তারপরেও ঘরের দরজা বন্ধ। বাইরের দরজা বন্ধ, শেখ হাসিনার মুখের ওপরে। তাহলে প্রতিপক্ষের মতো আচরণ আমরা করতে চেয়েছি? গণভববনে সংলাপ করেছি। কিন্তু তারা আমাদের শত্রুই ভেবেছে। শত্রুতাই করেছে বার বার।’

মহিলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সুরাইয়া আক্তারের সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, মহিলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী রহিমা আক্তার সাথী, কার্যকরী সভাপতি সামসুন্নাহার প্রমুখ বক্তব্য দেন।