রাজশাহীতে ফাগুনেও মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে শীতের দেশের লিলিয়াম


মো: পাভেল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার: সাধারণত লিলিয়াম বা লিলি ফুল ফোটে শীতপ্রধান দেশগুলোতে। এবার রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলেও ফুটেছে সাদা, হলুদ, লাল ও বেগুনী বর্ণের লিলি। রাজশাহী নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা-কাঁকনহাট সড়কের পাশে গোদাগাড়ী উপজেলার পলাশবাড়ি এলাকার ডিমার্স গার্ডেনে দেখা মিলবে এ ফুলের। দৃষ্টিনন্দন এ বাগান দেখতে প্রতিদিন আসছেন দূর-দূরান্তের মানুষ। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা হাসান আল সাদী পলাশ ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মো. রবিউল হাসান জুবেরী। আম বাগানের ভেতরে টিউলিপ বাগানের পর লিলিয়াম চাষ করে ফের আলোচনায় এসেছেন তারা।

ডিমার্স গার্ডেন কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে,গত বছরের ডিসেম্বর মাসে নেদারল্যান্ড থেকে আমদানি করা হয় লিলিয়াম ফুলের চারা। প্রায় ১৬০০ চারা লাগানো হয়েছে এখানে। প্রতিটি চারাতে দাম পড়েছে ৪৫০ টাকা করে। এ ফুল প্রধানত বসন্তের শেষে বা গ্রীষ্মের প্রথম দিকে ফোটে। এ জাতের ফুলে ছয়টি পাপড়ি থাকে,যা বেশ প্রসারিত হয়। লিলিয়ামের বাগান দেখতে প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে আসছেন স্কুল,কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ সাধারণ মানুষ। তবে এর জন্য তাদের গুনতে হচ্ছে ২০০ টাকা। নওগাঁ থেকে লিলিয়াম ফুল দেখতে এসেছেন সাজু চৌধুরী। তিনি বলেন,সাধারণত এসব ফুল আমরা টিভিতে দেখেছি। লিলিয়াম বাস্তবে দেখিনি।

আজই প্রথম দেখলাম। খুব ভালো লেগেছে। পরিবার পরিজন নিয়ে এসেছেন ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক তিনি। বলেন,আজ এখানে আসবো বলে তাড়াতাড়ি করে কাজ সেরে এসেছি। অনেক দিন থেকেই এখানে আসবো আসবো করছিলাম। এর আগে আমার সহকর্মীরা এখানে এসেছেন। লিলিয়াম ফুলের ঘ্রাণটা ভালো লেগেছে। এ ফুল বিদেশে গিফট করে।

রাজশাহী প্যারামেডিকেলের ছাত্রী সানহিদা আক্তার বলেন, পরিবারের সঙ্গে এসেছি। নতুন সব ফুল দেখেছি। সব মিলিয়ে খুব ভালো লেগেছে।

বাগানের মালিক রবিউল হাসান জুবেরী বলেন, রাজশাহী তথা উত্তরাঞ্চলে প্রথম আমার হাত দিয়েই টিউলিপ ফুলের চাষ হয়। এরপর আমারই প্রথম লিলিয়াম ফুলের চাষ করেছি। টিউলিপ ফুলে বেশ সাড়া পাওয়ার পর আমরা প্রথমবারের মতো নেদারল্যান্ডের বিখ্যাত ফুল লিলিয়ামের এশিয়াটিক ও ওরিয়েন্টাল জাতের চাষ করেছি। এরই মধ্যে এসব গাছে ফুল এসেছে।

তিনি আরও বলেন, ১৬০০ চারা লাগিয়েছি। প্রাথমিকভাবে এ চাষ করা হয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে চারজনের কাছে লিলিয়াম ফুল আছে। অর্থনৈতিক দিকে থেকে আমরা তেমন চিন্তা করি না। আমার সাধারণত চাই মানুষ যাতে একটি ফুলের বাগানে ঘুরতে আসে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোনো ফুলের পার্ক নেই। আমারাই প্রথম ফুলের পার্ক করেছি। এখানে এসব ফুল লাগানো হয়েছে।

রবিউল হাসান আরও বলেন,লিলিয়াম সাধারণত শীত প্রধান দেশে হয়। কিন্তু এ ফুল আমাদের এখানে সব দিক থেকেই ঠিকভাবেই চাষ করা সম্ভব হচ্ছে। তবে গরমের কারণে ফুলের স্থায়িত্ব কমে যাচ্ছে। সাধারণত লিলিয়াম ২৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। এর থেকে কম তাপমাত্রা হলে ফুলের স্থায়িত্ব বেড়ে যায়।এসব ফুল চাষ করতে আমাদের শুরুতে কিছু বেগ পোহাতে হয়েছে। নিজেরাই কিছু প্রশিক্ষণ করে বিদেশি চাষ পদ্ধতি দেখে মাটি লিলিয়ামের জন্য উপযোগী করেছি। এসব ফুল সম্পর্কে আমাদের কৃষি বিভাগের কোনো ধারণা নেই। আমরাই তাদেরে ফুল সম্পর্কে বুঝিয়েছি। তারা এখন এসব নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে। মূলত এসব ফুল পার্কের জন্যই চাষ করা হচ্ছে। বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়নি।যোগ করেন তিনি।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মরিয়ম আহমেদ প্রতিবেদককে বলেন,নেদারল্যান্ডের ফুল লিলিয়াম রাজশাহীতেও চাষ হচ্ছে। এবছরই তারা প্রথম তাদের ফুলের প্রজেক্টের মধ্যে এটা চাষ শুরু করেছে। তাদের বাগানের মধ্যে এক কাঠা জায়গায় লিলিয়াম চাষ শুরু হয়েছে।

তিনি আরও বলেন,লিলিয়াম রাজশাহীতে খুবই সম্ভাবনাময়। এর রঙ বা গ্রোথ সবকিছুই বিদেশের মতোই হচ্ছে। বরেন্দ্র অঞ্চলেও এর চাষ সম্ভব। পাশাপাশি এ ফুল থেকে বেশ ভালো আয় করাও সম্ভব হবে।