রাবিতে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালিত


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) যথাযোগ্য মর্যাদায় ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালিত হয়। আজ মঙ্গলবার সকাল ৯:১৫ মিনিটে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবন চত্বর থেকে এক আনন্দ শোভাযাত্রা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে যায়। সকাল ৯:২০ মিনিটে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। সেখানে অন্যদের মধ্যে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. আবদুস সালাম, প্রক্টর অধ্যাপক মো. আসাবুল হক, ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে, অনুষদ অধিকর্তা, ইনস্টিটিউট পরিচালক, বিভাগীয় সভাপতি, হল প্রাধ্যক্ষ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সেখানে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মোনাজাত করেন।

সকাল ১০:৩০ মিনিটে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে বঙ্গবন্ধুর উপর প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন উপাচার্য। এরপর অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। এতে মুখ্য আলোচক ছিলেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মো. আবুল কাশেম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। ৭ মার্চ উদযাপন কমিটির সভাপতি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. আবদুস সালাম অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক অধ্যাপক মো. আবুল কাশেম বলেন, পহেলা মার্চ থেকে যে হত্যাকাণ্ডগুলো হয়েছে তার ভাষণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর এই শহরগুলোর নাম বলেছেন। পূর্ববঙ্গে যে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে সেই কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু বিকল্প নেতৃত্বের কথাও বলেছেন, তিনি বলেছেন আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমাদের যার যা কিছু আছে তা দিয়েই শত্রæর মোকাবিলা করতে হবে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তাঁর নেতৃত্বেই মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। তার নেতৃত্বে মানুষ লগি-বৈঠা নিয়ে এসেছে, কাঠ নিয়ে এসেছে এ ধরনের অনেক ঘটনা ঘটেছে।

কোন কোন জায়গায় আত্মরক্ষার জন্য মহিলারা তাদের কোচড়ে মরিচের গুড়া রাখতো। আসলে সেই গুড়া হানাদার বাহিনীর মুখে ছিটিয়ে দিয়ে আত্মরক্ষা করতো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। তিনি জনগণকে বলছেন তোমাদের ওপর আমার বিশ্বাস আছে, আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না। বঙ্গবন্ধু সত্যিকারের মুক্তির কথাই বলেছেন। ৭ মার্চ তারিখে তিনি যে ঘোষণা দিয়েছেন সেটি কার্যত স্বাধীনতার ঘোষণা। বাংলাদেশ সৃষ্টির পিছনে এই ভাষণটি ছিলো এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ। তার পরবর্তী প্রভাব ছিলো আরো গুরুত্বপূর্ণ।  ২০১৭ সালে ইউনেস্কো এই ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছে। এই ভাষণের মাধ্যমে যারা বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭০ সালে নির্বাচনে নেতা বানিয়েছেন, তাঁর অনুপস্থিতিতে তারা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছেন। আমি মনে করি যে বাংলাদেশের সৃষ্টি বাঙালির এক অসাধারণ ঐতিহ্য, অসাধারণ এক সম্পদ। এই সম্পদকে আমাদের ধারণ করতে হবে, লালন করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর অনুসারী হিসেবে আমরা যারা তোলপাড় করছি, তাদেরকে বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য, আদর্শ এবং যে উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছিলো সেই সোনার বাংলা বাস্তবায়ন করতে অবদান রাখতে হবে। আমরা যদি বঙ্গবন্ধুর সম্পদ যেমন ভাষণ, ঘোষণা, বিবৃতিগুলো ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারি, তাহলে আমরা সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারবো বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

প্রধান অতিথি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ১৯৪৭ সালে ২৭ বছরের একজন যুবক বঙ্গবন্ধু বাঙালির চেতনাকে ছোট্ট শিশুর মতো বুকে নিয়ে প্রতিটি পদ মারিয়েছেন। ১৯৪৭-৭১ দীর্ঘ যে পথ পরিক্রমা সেটাকে উনি বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং বাংলাদেশের জন্মকে বুকে আঁকড়ে নিয়ে প্রতিটি পথ মাড়িয়েছেন। উনি জানতেন যেকোনো কারণে যদি তার একটি পদক্ষেপ ভুল হয়, এই সংকুল পদযাত্রায় যদি পা পিছলে যায় তাহলে সেটা বাঙালি জাতীয়তাবাদ, বাঙালি জাতীয় রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের যে ভাবনা তা সব শেষ হয়ে যাবে। এ কারণে আমরা বঙ্গবন্ধুকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বলি। উনি সব জানতেন, নির্বাচনের আগের ঘটনা, মার্চের আগের ঘটনা সবকিছু। ৫ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান চলেছে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায়। এজন্য ৫ মার্চকে অনেকে স্বরাজ দিবস বলেন। বিভিন্ন দেশে গৃহযুদ্ধ হয়েছে, দেশ মুক্ত হয়েছে। বিভিন্নভাবে ক্ষমতায় এসেছে কিন্তু সেদিক দিয়ে আমি বলি বঙ্গবন্ধুকে কারো সাথে তুলনা করা যায়না। বঙ্গবন্ধুর তুলনা হয় সবদিক দিয়েই কেবল তাঁকে নিয়ে। বঙ্গবন্ধু ও তার দল ৭ মার্চের আগে একটা রাজনৈতিক অর্জনের জন্য যা যা প্রয়োজন সব অর্জন করে নিয়েছিলেন। জনগণের ক্ষমতা, যারা ক্ষমতায় আছেন তাদের চেয়ে বেশি এটা বঙ্গবন্ধু জানতেন। বঙ্গবন্ধু যা বলেছেন তার মধ্যেই কিন্তু আগামীর দিশা আছে, যে দিশাতে তার কন্যা বর্তমান সরকারের  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তিনি যেভাবে দেশ পরিচালনা করছেন উনি কিন্তু বার বার একটা কথা বলেন, আমি কোথায় যাব? আমি যেখানেই যাই সেখানেই দেখি আমার বাবার ছায়া।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু যে ভাষণ দিয়েছিলেন সেটি ইউনেস্কো কর্তৃক প্রামাণ্য দলিল হিসেবে সারাবিশ্ব স্বীকার করে নিয়েছে। বাঙালিদের জন্য, নিপীড়িত মানুষের জন্য, নির্যাতিত মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধু সেই উদ্দীপ্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। বাঙালির মুক্তির, বাঙালির স্বাধীনতার যে ভাষণ তিনি পাঠ করেছিলেন সারাদেশ তাঁর ভাষণে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন। মেজর জিয়ার মতো মেজরের দেশের দায়িত্ব নেওয়ার কোন অধিকার ছিলো না তখন এবং সাহসও ছিলো না। কারণ ওনারা গোটা বাঙালিকে একত্রিত করেননি, বঙ্গবন্ধু করেছিলেন। এটি মনে হয় কোন বাঙালি অস্বীকার করতে পারবে না, কেউ যদি ৭ মার্চের ভাষণটি শোনে তার মনে একটি উত্তেজনা কাজ করেনা, লোমকূপ সাড়া দিয়ে উঠেনা! উনি মনে হয় বাঙালি না হয়ে পাষণ্ড হবেন।

আলোচনা সভার সভাপতি অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ভাষণ ঐতিহাসিক ৭ মার্চে দিয়েছেন, সেটিতে উনি স্বাধীনতার ঘোষণাই দিয়েছেন এবং ওনার এই ভাষণের মাধ্যমেই আমরা ওনার ব্যক্তিত্ব, নেতৃত্ব এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়ে এক উজ্জ্বল ধারণা পাই। বঙ্গবন্ধুর এই বক্তব্যকে বিশ্ববাসী ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করায় আমরা এই স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশ্ববাসীর সহমর্মিতা পেয়েছি।

পরে উপাচার্য দিবসটি উপলক্ষে রাবি স্কুল ও শেখ রাসেল মডেল স্কুল আয়োজিত শিক্ষার্থীদের রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান করেন।