সাদিয়ার পড়াশোনার দ্বায়িত্ব নিলো ঈশ্বরদীর ইউএনও সুবির কুমার দাস


পাবনা প্রতিনিধি: পাবনার ঈশ্বরদীর সেই মেধাবী শিক্ষার্থী সাদিয়ার লেখাপড়ার সকল খরচ ও দায়িত্ব নিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর কুমার দাশ।
অদম্য সাদিয়ার মৃত বাবার ইচ্ছে পূরণের দূড় মনোভাব আর তার লেখাপড়ার ধারাবাহিক ফলাফল দেখে গত রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ইউএনও তার নিজ অফিসে সাদিয়ার কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য নগদ অর্থ প্রদান করেন।
এসময় তিনি বলেন, সাদিয়ার বাবার স্বপ্ন ছিলো সাদিয়াকে ডাক্তার বানাবে। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর তার মা কষ্ট করে এস এস সি পর্যন্ত লেখাপড়া করিয়েছে।
তবে কলেজে পড়ানোর মতো সামর্থ না থাকায় পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। পত্রিকাতে এমন সংবাদ দেখে আমি সাদিয়ার পরিবারের সন্ধানে যাই। সেখানে গিয়ে জানতে পারি সাদিয়া অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি ছিলো ভিন্ন ধরনের আগ্রহ।
তবে বর্তমানে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছলতার কারণে বন্ধের পথে পড়াশোনা। একারণে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি সাদিয়ার লেখাপড়া যেনো বন্ধ না হয়ে যায়, তার বাবার স্বপ্ন যেন সে পূরণ করতে পারে, তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন যেন পূরণ হয় একারণে আমি তাদের পাশে সব সময় থাকব। আমি যদি এখান থেকে বদলি হয়ে অন্য কোথাও চলে যাই তবুও সব সময় পাশে থাকব। তাদের বড় ছেলে হয়ে পাশে থাকব।
এসময় ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর কুমার দাশ আরো বলেন, সাদিয়ার বাবা মারা গেছেন। আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে কথা বলেছি তারা যেনো সাদিয়ার মায়ের জন্য একটা বিধবা ভাতা কার্ড করে দেয়। তাহলে প্রতি মাসে কিছুটা হলেও অর্থ আসবে। এছাড়া জেলা প্রশাসক বরাবর জানিয়েছি তারা যেনো সাদিয়ার বিষয়টি দেখেন।
এ বিষয়ে সাদিয়ার মা বলেন, ইউএনও স্যার যে এত অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের পাশে এসে দাড়াবেন আমরা কল্পনাও করতে পারি নাই। সে ছেলের মতো পাশে দাড়াতে চেয়েছেন। আজ আমি এতো খুশি যা বলে বোঝাতে পারব না। এখন আমার মেয়ের ডাক্তার হওয়ার পথ অনেক সহজ হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে মেধাবী শিক্ষার্থী সাদিয়া বলেন, অনেক ধন্যবাদ আমার এই বিষয়টি প্রচার করার জন্য। আর ইউএনও স্যার যে এতো  তাড়াতাড়ি আমার পাশে এসে দাঁড়াবেন আমরা সেটা কল্পনাও করতে পারিনাই। এখন সহজেই আমার বাবার স্বপ্ন আমি পূরণ করতে পারব। আমি ডাক্তার হতে পারব। এজন্য আমি সকলের কাছে দোয়া চাই।
উল্লেখ্য, পাবনার ঈশ্বরদী পৌরসভার বাবুপাড়া এলাকার মেধাবী শিক্ষার্থী সাদিয়া। বয়স যখন পাঁচ বছর তখনই বাবাকে হারান। তবে লেখাপড়ার প্রতি সাদিয়ার ছিল ভিন্ন রকম আগ্রহ। ২০১৭ সালে ৫ম শ্রেণীতে অর্জন করেন জিপিএ ৫।
সাদিয়ার মায়ের দুই মেয়ে নিয়ে জীবন যাপন করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় পরবর্তীতে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ওঠার পর সাদিয়াকে জামালপুরের সরিষাবাড়ি ফুফুর বাসায় পাঠিয়ে দেয় । এবং সেখানে থেকেই পড়াশোনা করতে থাকে।
এরপর ২০২০ সালে অষ্টম শ্রেণীতে জেএসসি পরীক্ষায় ও জিপিএ-৫ অর্জন করেন। সবশেষে ২০২৩ সালে একই স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে কৃতিত্বের সঙ্গে অর্জন করেন গোল্ডেন জিপিএ -৫।