সেই সিনেমার পরিচালক বলছেন, ‘শাকিবের নামে অভিযোগগুলো ত্রুটিপূর্ণ’


শাকিব খান ও পরিচালক আশিকুর রহমান। ছবি : প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সৌজন্যে

চিত্রনায়ক শাকিব খানের বিরুদ্ধে সদাচরণ ও ধর্ষণের মতো বিস্ফোরক অভিযোগ নিয়ে এসেছেন নির্মিতব্য ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার প্রযোজক রহমত উল্লাহ। যদিও তাঁকে কথিত প্রযোজক উল্লেখ করছেন সিনেমাটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

মঙ্গলবার  দুপুরে নির্মাতা আশিক তার পেজে একটি পোস্টে পুরো ঘটনা তুলে ধরেছেন। যা হুবহু তুলে ধরা হলো:

চিত্রনায়ক শাকিব খানের নামে যে অভিযোগগুলো এসেছে সেগুলো ত্রুটিপূর্ণ ও বাস্তবতার সাথে সাংঘর্ষিক। আমি উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনেছি। অভিযোগ করার মাধ্যমে কি লক্ষ্য অর্জন করতে যাচ্ছে এটা অভিযোগকারীর কাছেই পরিস্কার নয়। যদি অনৈতিক কোনো কাজ কেউ সংঘটন করে থাকে, তবে তা যেকোন দেশের আইনেও অপরাধযোগ্য এবং আমাদের সবারই সেটার বিচার চাওয়া উচিত। কিন্তু ঘটনার বদলে টাকা বা অন্যকোন সুবিধা চাওয়াটা পুরপুরি অগ্রহণযোগ্য। তবে অপরাধ প্রমাণ হয়ার আগ পর্যন্ত যেকোনো অভিযোগকে সত্যি বলা যায় না এবং অপরাধ প্রমাণের দায়িত্ব একমাত্র পুলিশ ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষা কারি বাহিনীর। একটি চলচ্চিত্রের ঘাড়ে বন্দুক রেখে, বেক্তিগত রোষানলের বিষয়ে সমাধান করা অগ্রহণযোগ্য।

শাকিব খান ২০১৬ ও ২০১৮ সালে দুইবার অস্ট্রেলিয়াতে শুটিং করতে আসেন। ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ৭-৮ দিনের শুটিং করেন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে “সুপার হিরো” চলচ্চিত্রের শুটিং করতে অস্ট্রেলিয়াতে আসেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, তিনি নাকি পালিয়ে গেছেন অস্ট্রেলিয়া থেকে; যেটা বাস্তবে কখনও হওয়া সম্ভব না। এই দেশে কারও বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আসলে তা খতিয়ে শেষ না দেখা পর্যন্ত তাকে দেশ ত্যাগ বা প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয় না। ২০১৬ এবং ২০১৮ সালে এই দুই চলচ্চিত্রের সকল কলাকুশলী সম্মান ও আতিথেয়তা সহকারে অস্ট্রেলিয়া আগমন ও ত্যাগ করেন।

২০১৮ সালে, শাকিব খান ও অন্যান্য কলাকুশলীরা যখন হোটেল হলিডে ইন-এ অবস্থান করছিলেন, তখন অস্ট্রেলিয়া পুলিশের দুজন তদন্তকারী কর্মকর্তা তার রুমে যান। প্রায় ২০-৩০ মিনিটের অবস্থান শেষে তারা অন্যান্যদের আরও কিছু সাধারণ প্রশ্ন করে চলে যান। এই ঘটনা ছাড়া শাকিব খানের সাথে পুলিশের আর কোন ইন্টারেকশন আমার জানা নেই। সেই দিনও আমরা ইনডোরে মুভির ২টা দৃশ্য শুট করি। তার একদিন পর আমি রবিউল রবি ও শাকিব খানের আরেকজন লিগ্যাল প্রতিনিধি কোগরা পুলিশ স্টেশনে যাই, উক্ত ঘটনার বিস্তারিত জানার জন্য।

শাকিব খানের প্রতিনিধি পুলিশের সাথে বিভিন্ন কাগজ পত্র নিয়ে আলাদা একটি রুমে বসেন। প্রায় ১ ঘণ্টার রুদ্ধদার আলোচনা শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা আমাদের জানান, জনাব শাকিব খানের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের সত্যতার তারা প্রমান পান নাই। তারপর তিনি শাকিব খানের সাথে সরাসরি ফোনে কথা বলেন এবং তাকে কোন সন্দেহ ছাড়া ও নিশ্চিন্তে সিডনিতে শুটিং করতে বলেন। উক্ত ঘটনার পর আমরা আরও দুই সপ্তাহেরও বেশি সিডনিতে শুটিং করি। সফলভাবে শুটিং করার পর সুপারহিরো চলচ্চিত্রটি ২০১৮ সালে মুক্তি পায় এবং দর্শকদের মন জয় করে সুপারহিট হয়।

যেকোনো কাজ করার সময় ছোটখাট অনেক ত্রুটি থাকে। সেগুলকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যাবহার করাটা মোটে সমীচীন নয়। খাবার দাবারসহ যে সকল অনর্থক অভিযোগ এসেছে সেই গুলো আসলে অনভিপ্রেত ও ক্ষুদ্র মানুষিকতার পরিচয় দেয়। শুটিংয়ের বিশাল কর্ম ব্যস্ততার মাঝে সময় পাওয়া কঠিন। প্রতিদিন ১০-১২ ঘণ্টা বিরতিহীন শুটিং করার পর সবারই মূল লক্ষ্য থাকত বিশ্রাম নেয়া ও পরের দিনের শুটিংয়ের প্রস্তুতি নেয়া। শাকিব খান এবং আমরা যতক্ষণ একসাথে শুটিং করেছি কখনও আপত্তিকর কিছু চোখে পড়েনি। এছাড়া কাজের বাইরে কারও ব্যক্তিগত বিষয়ে আমি কখনও আগ্রহ দেখাইনি।

আমি যে কয়বার অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশে ব্যক্তিগতভাবে শুধুমাত্র এই মুভির জন্য গিয়েছি তার খরচ এই মুভিতে আমার পারিশ্রমিকের থেকে বেশি। এই মুভিতে কাহিনিকার ও পরিচালক হিসাবে আমি যে সময় ও শ্রম দিয়েছি, তা টাকার অংকে মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়।

সিনেমাটি অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশ মিলিয়ে শুট করার একটাই কারণ ছিল, সেটা হল আমরা অনিন্দ্য সুন্দর একটি দেশকে বাংলাদেশ এর সিনেমার পর্দায় উপস্থিত করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কিছু স্বার্থন্বেসি ও ঈর্ষা কাতর মানুষের কারণে আমরা অসাধারণ একটি গল্প পর্দায় আনতে পারিনি। এই মুভিটি পর্দায় আসলে বাংলা ভাষায় দর্শকরা অসাধারণ একটি স্পাই থ্রিলার উপভোগ করতে পারত। আমরা সবাই এখনও চাই এই মুভির কাজ শেষ করতে। সময় বলে দিবে এই চাওয়াটা কত টুকু পাওয়া সম্ভব। তবে মাত্র ৮ দিনের শুটিং আর দুই মিনিটের টিজারএ যে ঘটনার জন্ম দিয়েছে আমার মনে হয় না বিগত কয়েক বছরে কোন চলচ্চিত্র এতটা আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। অপারেশন অগ্নিপথ মুভিটি সত্যিকারের অগ্নিপথ পাড়ি দিয়ে একদিন সোনালি পর্দায় মুক্তি পাবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

এর আগে বুধবার (১৫ মার্চ) বিকালে শাকিব খানের বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও ধর্ষণের অভিযোগ করে চলচ্চিত্রের তিন সমিতির কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন প্রযোজক রহমত উল্লাহ। একদিন পর বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) বিকালে ওই প্রযোজকের সঙ্গে রাজধানীর গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয় বৈঠকে বসে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন শাকিব।

‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমা পরিচালনা করছিলেন আশিকুর রহমান। এতে শাকিবের নায়িকা হিসেবে যুক্ত হয়েছিলেন সিবা আলী খান।