স্কুল পড়ুয়া মেধাবী নাসিমা মৃত্যু শয্যায় আর্থিক সহায়তা চেয়ে দাবী


ছবিক্যাপশন-ভোলাহাটে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী হয়ে টাকার অভাবে বাড়ীর বিছানায় মৃত্যুর প্রহড় গুণছে ৮ম শ্রেণী পড়–য়া মেধাবী ছাত্রী(১৫), পাশে- বাবা নাসির ও মা-ইয়াসমিন।

ভোলাহাট (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে দলদলী ইউনিয়নের বারইপাড়া গ্রামের মৃত গুদোর মন্ডলের ছেলে মোঃ নাসির উদ্দিনের ৮ম শ্রেণী পড়–য়া মেয়ে নাসিমা(১৫) ক্যান্সার নামক ঘাতকের যন্ত্রণায় আজ মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে তার বাড়ীর বিছানায়।

টাকার অভাবে বাবা নাসির ও মা ইয়াসমিন পাগলের মতো মানুষের দ্বাড়ে দ্বাড়ে ঘুরছেন। তাদের মেয়েকে বাঁচাতে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আর্থিক সহায়তার জোর দাবী করেছেন। সেই সাথে দেশের বিত্তবান ও প্রবাসী ভাই এবং হৃদয়বানদের কাছেও আর্থিক সহায়তা চেয়ে দানের হাতটি প্রসারিত করতে বলেছেন নাসিমার বাবা-মা।

সরজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ৮ম শ্রেণী পড়–য়া মেয়ের বাবা নাসির টানাপোড়েনের সংসারে ২ছেলে আর একমাত্র মেয়ে নাসিমা, স্ত্রী ও মা’কে নিয়ে কোনোমতে জোড়াতালি চলে যাচ্ছিল নাসিরের সংসার। গত রমজান মাসে নাসিমার পাঁয়ে প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হলে নাসিমাকে গ্রাম্য ও সরকারী হাসপাতালের ডাক্তারকে দেখান। ডাক্তারেরা বলেছেন, রাজশাহী-ঢাকা নিয়ে চিকিৎসা করার পরামর্শ দেন। গরীব-অসহায় নাসির কিছু টাকা ধার-দেনা ও ঋণ নিয়ে মেয়ের চিকিৎসা চালাতে থাকে। গরীব-অসহায় নাসির বলেন, হামড়া স্যার, গরীব।

হাঁড়ঘে কথা কেইবা শুনবে। গরীবের বড় বড় রোগবালাই স্যার। হামাঘেরে মরা ছাড়া আর কোনো গতি নাই। নিজে পেটভইরা দু’বেলা খ্যা’তে পাই না, মেয়ের অসুখে তাও হামি ধারদেনা কইরাও যে চিকিৎসা করছি, এতে ডাক্তাররা হাঁকে কোহেছে, এখানে-সেখানে চিকিৎসা কইরা হ্যাবে নাখো। ইন্ডিয়া লিয়্যা চিকিৎসা করাতে হ্যাবে! বলুন তো স্যার, হামার পক্ষে এতোগুলাণ লাখ লাখ টাকা খরচ করা কি সম্ভব।

এমনিতেই হামার সংসারে নুন আনত্যা পন্তা ফোড়ায় স্যার, কেমন কইড়া বেটির চিৎিসা করবো? তাই স্যার, আপনাঘেরে কাছে হামার আকুল মিনতি, হামার মায়াটাকে বাঁচাতে হামাঘেরে প্রধানমন্ত্রী শেখ সাহেবের বেটি শেখ হাসিনার কাছে জোড় কইরা কোহছি, হাঁর বেটিকে বাঁচাতে হামাকে কিছু টাকা-পাস্যা দিয়্যা সাহায্য করেন। নাহ্যালে হাঁর বেটি মইর‌্যা যাবে স্যার, একথা বলতে বলতে নাসির অঝোড় নয়নে কাঁদতে থাকে।

আরো জানা গেছে, বাবা নাসির রাজশাহী ও বিভিন্ন ব্যক্তিগত ক্লিনিক গুলিতে চিকিৎসা সেবা নিয়ে আর্থিকভাবে একেবারেই দুর্বল হয়ে পড়েছেন বলে প্রত্যক্ষ করা গেছে। তিনি মানুষের দ্বাড়ে দ্বাড়ে গিয়ে আর্থিক সহায়তা চেয়ে মেয়ে যতটুকু নাসিরের সাধ্যমত চেষ্টা করে বর্তমান পরিস্থিতিতে এসে পৌঁছেছেন। কিন্তু মেয়ে নাসিমাকে বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা-তদবীর করলেও অবশেষে টাকার অভাবে ব্যর্থ হচ্ছেন বাবা। নাসিমার ডান পাঁ অপারেশনে লাখ লাখ টাকা জোগাড় করতে না পেরে, মৃতপ্রায় মেয়ের পাশে বিছানায় বসে থেকে আপসোস আর দীর্ঘশ্বাস ছাড়া আর কোনো গতি নেই তাঁদের।

মৃত্যু শয্যায় নাসিমার পাশে বসে নাসির ও নাসিরের স্ত্রী ইয়াসমিন এ প্রতিবেদককে আরো বলেন, স্যার হামার সংসার খুব ভালই চলছিলো। হামার নিজের ১টি কাঠের ঢোপে মুদিখানা দোকান ছিলো। দোকানদারী কইর‌্যা হামার সংসার ভালভেবেই চইলা আসছিলো। কিন্তু হামার দোকানের পার্শ্বে থাকা পাড়াপরশী দু’জন শত্রুতা কইরা মুদিখানা দোকানটি গত ৫ অক্টোবর ২০২২ ও ১২ ডিসেম্বর ২০২২ ইং তারিখে রাইতের হানারে আগুন দিয়্যা সম্পূর্ণ দোকানটাকে পুইরা ছাড়খার করে। এতে হামার প্রায় ২লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি কইরাছে দুঝনা(দু’জনে)।

এতো বড় ক্ষতি কইরাও এখন পর্যন্ত হামি কোনো সাহায্য আর কাহারো সহানুভূতি পায়নিখো স্যার। অথচ তাহারা দু’জনের বিরুদ্ধে হামি মামলা করেছনু। তাঁহারা পুলিশের হাইতে ধরা পইড়াও হামার কোনো ব্যবস্থা না কইরা আসামী কোর্ট থেকে জামিন নিয়্যা দিব্যি হামার সামনেই বুক ফুলিয়্যা মুখে যা-তা বলে গালগালাজ করছ্যা, কাহারোই কিছু বলার নাইখো। হামি আশা এনজিও হইত্যা ৫০হাজার টাকা রেহেণ(ঋণ) লিয়্যা একটা ঢোপে দোকানদারী করছিনু। কিন্তু হামাঘেরে গরীবের কপালে শান্তি বইল্যা কিছু নাইখো।

হামার আকাশে নাইম্যা আইলো কালবৈশাখীর ঝড়। সেই ঝড়ের আগুনে হামার প্রায় ২লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হইয়্যা গেলেও হামাখে কেউ কেনোপ্রকার টাকা-পাইশা দিয়্যা সাহায্য পাইনিখো। এমনকি সরকারীভাবেও পাইনি। তার মধ্যেই মেয়ের ফের ক্যান্সার। কোনদিখে যাবো আর কিইবা করবো, কোনো পথ খুঁজ্যা পাচ্ছিখো বলেই আবারো কাঁদতে লাগলেন নাসির ও নাসিরের স্ত্রী।

নাসিরের মেয়ে নাসিরের এহেনো দূর্দশার কথা বিবেচনায় নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে তাবাসসুম নাসিরের মেয়ের কথা অবগত হয়ে তিনি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে কাগজপত্র দ্রুত জমা দিতে বলে তিনি নাসিরের মেয়ের ব্যাপারে যতো তারাতারী সম্ভব যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস প্রদাণ করেন।