ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর প্রশ্নে কোণঠাসা ম্যাক্রোঁ


ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। এএফপির ফাইল ছবি

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট সোমবার ইউক্রেনে পশ্চিমা সৈন্য পাঠানোর সম্ভাবনার উল্লেখ করলেও জার্মানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক দেশ তার বিরোধিতা করেছে৷ এদিকে যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেন আরও জমি হারাচ্ছে৷

সোমবার ইউক্রেন সংক্রান্ত সম্মেলন আয়োজনের পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছিলেন, প্রয়োজনে ইউক্রেনে পশ্চিমা দেশের সৈন্য পাঠানো যেতে পারে৷

তিনি রাশিয়ার হামলা মোকাবিলায় ইউক্রেনের জন্য কোনো ধরনের সহায়তার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিতে চাননি৷ কিন্তু তাঁর এমন ‘বেলাগাম’ মন্তব্যের পর ন্যাটোর একাধিক দেশ ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে৷

মঙ্গলবার প্রথমে জার্মানি ও পোল্যান্ড স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল, যে সেই দুই দেশ ইউক্রেনে সেনা পাঠাচ্ছে না৷

জার্মান চ্যান্সেলর শলৎস বলেন, প্যারিস সম্মেলনের অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে ইউক্রেনের ভূখণ্ডে ইউরোপ বা ন্যাটোর স্থলবাহিনী বা সৈন্য না পাঠানোর বিষয়ে ঐকমত্য রয়েছে৷ মধ্য ইউরোপের একাধিক দেশও সেই অবস্থান নিচ্ছে৷ ন্যাটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গও বলেন, সামরিক জোটের এমন কোনো পরিকল্পনা নেই৷ রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংঘাত এড়াতে এখনো পর্যন্ত এমন নীতি গ্রহণ করা হয়েছে৷ একমাত্র ৩১টি সদস্য দেশ সম্মিলিতভাবে সেই সিদ্ধান্ত নিলে তবেই ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানো সম্ভব৷ সংবাদ সংস্থা এপিকে স্টলটেনবার্গ আরও বলেন, ন্যাটো সদস্যরা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনকে অভূতপূর্ব সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে৷ হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র এড্রিয়েন ওয়াটসন বলেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সংগ্রামের জন্য ইউক্রেনে মার্কিন সৈন্য না পাঠানোর বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে আসছেন৷

রাশিয়া ম্যাক্রোঁর মন্তব্য সম্পর্কে পশ্চিমা জগতকে সতর্ক করে দিয়েছে৷ ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেকসভ বলেন, ন্যাটো ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য সৈন্য পাঠালে রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংঘাত অপরিহার্য৷ তাঁর মতে, এমনটা ঘটলে ন্যাটো ও রাশিয়ার সংঘাতের ‘সম্ভাবনা’ দেখা দেবে না, সেই সংঘাত অবশ্যম্ভাবী হবে৷

ঘরে-বাইরে এমন তীব্র প্রতিক্রিয়ার মাঝে ফ্রান্স ম্যাক্রোঁর মন্তব্যের ‘সঠিক প্রেক্ষাপট’ ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছে৷

সে দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেবাস্তিয়ঁ লোকোমু বলেন, প্যারিস সম্মেলনে এ বিষয়ে আলোচনা হলেও কোনো ঐকমত্য অর্জিত হয়নি৷ তাছাড়া রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর কথা হয়নি৷ ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টেফান সেজুর্ন বলেছেন, মাইন অপসারণ, অস্ত্র উৎপাদন বা সাইবার অপারেশনের মতো কাজের জন্য পশ্চিমা সৈন্য পাঠানো যেতে পারে৷

চলতি মাসের শুরুতে রাশিয়ার প্রবল হামলার মুখে আভদিভকা শহর থেকে ইউক্রেনের সৈন্যরা সরে আসার পর মঙ্গলবার আরও দুটি গ্রাম থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হয়েছে৷ পশ্চিমা সহায়তায় টান পড়ার কারণে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর গোলাবারুদ কমে আসছে৷ ফলে বাধ্য হয়ে বাস্তবসম্মত প্রতিরক্ষার পথ বেছে নিচ্ছেন সেনা কর্মকর্তারা৷ মার্কিন সংসদে ইউক্রেনের জন্য ৬,০০০ কোটি ডলার অংকের সামরিক সহায়তার প্রস্তাবের জট ছাড়াতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন মঙ্গলবার দুই দলের উচ্চপদস্থ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন৷