এ্যাডভোকেট আব্দুস সালামের নামে রাজশাহীর টেনিস কমপ্লেক্স নামকরণের দাবি


নিজস্ব প্রতিবেদক :  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, উত্তরবঙ্গে টেনিস বিস্তারের অগ্রনায়ক প্রয়াত এ্যাডভোকেট আব্দুস সালামের নামে রাজশাহীর টেনিস কমপ্লেক্স নামকরণের জোরালো দাবি উঠেছে। এমন দাবিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের শক্তি, শহীদ পরিবারের সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধারা জনমত গঠন করেছেন।

১৯৮১ সালে রাজশাহীতে আব্দুস সালামের হাতে গড়ে ওঠে এ টেনিস কমপ্লেক্স। ২০০৪ সালে স্বাধীনতা বিরোধী আইয়ুব খানের এনএসএফ’র পেটোয়া বাহিনীর অন্যতম সদস্য রাজাকার জাফর ইমামের মৃত্যুর পর চারদলীয় জোট সরকার ২০০৫ সালে জাফর ইমাম টেনিস কমপ্লেক্স নামকরণ করে। যেটি কখনো প্রত্যাশা করেননি শহীদ পরিবারের সদস্যরা। লম্বা সময় ধরে তীব্র প্রতিবাদের পর অবশেষে গত ২৩ আগস্ট রাজাকার জাফর ইমামের নাম সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

এবার দাবি উঠেছে, টেনিস কমপ্লেক্সের প্রতিষ্ঠাতার নামে এটি নামকরণের। ত্যাগী এই নেতার নামে টেনিস কমপ্লেক্স নামকরণের দাবিতে সরগরম নগরীর পাড়া-মহল্লা। জনপ্রতিনিধি, বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিকসহ সচেতন মহল এর পক্ষে জোর দাবি তুলেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তরূণ প্রজন্মেরও এটি জোরালো দাবি। রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেছেন, ‘বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অতএব এ দাবি বিবেচনার অধিকার রাখে’।

বঙ্গবন্ধু সরকারের রাজশাহী জেলা গভর্নর আতাউর রহমানের সন্তান ও রাজশাহী প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, ‘যে রাতে আব্দুস সালামের দুই ছেলেকে হত্যা করা হয় সেসময়ও তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গেই ছিলেন। দেশের স্বাধীনতার এক জ¦লন্ত প্রদীপ আব্দুস সালাম। ছেলে, ভাই, ভাগ্নি জামাইকে হারিয়েও থেমে যাননি তিনি। দেশের জন্য লড়াই করেছেন, লড়াইয়ের মাঠে নের্তৃত্ব দিয়েছেন। এখন সময় এসেছে ত্যাগী এই নেতার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করার। দেশের এই সূর্যসন্তানের নামেই টেনিস কমপ্লেক্সের নামকরণ করতে হবে।’

রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর আবুল কাশেম বলেন, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন আব্দুস সালাম। মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে তিনি দুই ছেলে, এক ভাই ও ভাগ্নি জামাইকে হারান। অতএব তার নামেই রাজশাহীর টেনিস কমপ্লেক্সের নামকরণ করা হোক।
উল্লেখ্য, এ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। সেসময় তার বড় ছেলে শহীদ আবু সেলিম শহিদুজ্জামান বাবু বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শেষ বর্ষে এবং কনিষ্ঠ ছেলে শহীদ ওয়াসিমুজ্জামান ওয়াসিম রাজশাহী কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে অধ্যয়নরত ছিল। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কাল রাতে পাক হানাদার বাহিনী তার বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে না পেয়ে তাঁর দুই মেধাবী সন্তানকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে।

একই রাতে পাক-বাহিনী তার ছোট ভাই তৎকালীন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামানের ওপর হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। সেখানেও তাদেরকে না পেয়ে তার আরেক ছোট ভাই শহীদ হাসানুজ্জামান খোকা, তার ভগ্নীপতি শিল্প ব্যাংকের রিসার্চ অফিসার শহীদ সাইদুর রহমান মিনা, আব্দুস সালামের ভাগ্নী-জামাই  তৎকালীন এম.এন.এ এবং জেলা আওয়ামী লীগ নেতা শহীদ নজমুল হককে ধরে নিয়ে  গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। ফলে মহান এ নেতার সম্মানে তার নামেই টেনিস কমপেক্সের নাম রাখার দাবি উঠেছে। এ বিষয়ে রাজশাহীর মুক্তিযোদ্ধারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার  হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।