স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে শুরু হলো ৫২তম শীতকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা-২০২৪ এর চূড়ান্তপর্বের আসর। বুধবার (৭ ফেব্র“য়ারি) সকাল ১০ টায় নগরীর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে খেলার মহারণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে উদ্বোধন করেন ও প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর বেলুন ও ফেস্টুন উড়ানো রাসিক, শিক্ষামন্ত্রী সহ অতিথিবৃন্দ। এর শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় প্রদর্শিত হয় এক মনোমুগ্ধকর ডিসপ্লে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ফুটবল আমাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। কিন্তু দেশীয় খেলাগুলোকেও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি। ফুটবল, ক্রিকেটের পাশাপাশি অন্যান্য খেলা, বিশেষ করে দেশীয় খেলাগুলোকে আকর্ষণীয় করে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব ধরনের খেলা আমাদের হাতে আনতে হবে। সেই সাথে সাথে আমাদের কিছু দেশীয় খেলা, সেই ডাঙ্গুলি থেকে শুরু বিভিন্ন খেলা আগে প্রচলিত ছিল, সেগুলো আমাদের চালু করা উচিত। হাডুডু থেকে শুরু করে আমাদের দেশীয় খেলাগুলোকে নিতে হবে, এগুলো যেন হারিয়ে না যায়।
খেলাধুলা-শরীর চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, খেলাধুলার মধ্য দিয়ে শরীর চর্চা হয়, খেলাধুলার মধ্য দিয়ে একটা ঐক্যের বন্ধন সৃষ্টি হয়। প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের পাশাপাশি বন্ধুত্বপূর্ণ একটা পরিবেশ হয়। সে মানসিকতা গড়ে ওঠে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেলাধুলাতে আমাদের আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত। আমরা সরকার গঠনের পর থেকে খেলাধুলার প্রতি আরও মনোযোগী হয়েছি।
স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে শীতকালীন খেলাধুলা শুরু এবং খেলাধুলার সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন ক্রীড়াপ্রেমী ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রী। তিনি সার্বিকভাবে শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধূলার বিকাশ ও উন্নয়নে এবং তৃণমূল থেকে প্রতিভা অন্বেষণে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধু ক্রিকেট ও ফুটবল টুর্নামেন্ট চালু করেছেন। যার সুফল আমরা পাচ্ছি।
মেয়র আরো বলেন, গত মেয়াদে কোভিড-১৯ এর কারণে প্রায় তিন বছর আমরা কোন টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পারিনি। এবার মেয়র ও কাউন্সিলর গোল্ডকাপ ক্রিকেন্ট/ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে সম্পৃক্ত থেকে খেলাধূলাকে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে চাই। আমাদের লক্ষ্য থাকবে যত বেশি সম্ভব খেলার মাঠ তৈরি করা। জমি অধিগ্রহণ করে নতুন খেলার মাঠ তৈরি ও নতুন স্টেডিয়ামও তৈরি করার পথে আছি। যার সুফল দেশবাসী পাবেন।উক্ত
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর নেহাল আহমেদ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনিসুর রহমান, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার, জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড রাজশাহীর চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোঃ অলীউল আলম, রাজশাহীর পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুর রহমান, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে সচিব মো: হুমায়ুন কবির, ৫২ তম শীতকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা’র সমন্বয়কারী ড. মুহম্মদ মনিরুল হক, অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মুঞ্জুর রহমান খান, জনসংযোগ কর্মকর্তা সুলতানা শামীমা আকতার নাইসসহ আট শতাধিক খেলোয়াড় এবং দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, শিক্ষা অফিসার ও ক্রীড়া কর্মকর্তগণ উপস্থিত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ জাতীয় স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা ক্রীড়া সমিতির আয়োজনে এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড রাজশাহীর ব্যবস্থাপনায় ৬ দিনব্যাপী এই ক্রীড়াযজ্ঞের সমাপনী অনুষ্ঠিত হবে ১২ ফেব্র“য়ারি। এই প্রতিযোগিতায় ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য আলাদা ইভেন্টে অ্যাথলেটিকস, দৌড়, বর্শা নিক্ষেপ, দীর্ঘ লাফ, চাকতি নিক্ষেপ, গোলক নিক্ষেপ, দড়িলাফ ইভেন্টসহ, হকি, ক্রিকেট, বাস্কেটবল, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন একক ও দ্বৈত, সাইক্লিং ইভেন্টে জাতীয় স্কুল মাদরাসা, কারিগরি শিক্ষা ক্রীড়া সমিতির শীতকালীন খেলার মহারণ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। এই ৮টি ডিসিপ্লিনে সারাদেশ থেকে আট শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিবেন। চূড়ান্ত পর্বে চারটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে- চারটি ফুলের নামে। এগুলো হলো- রাজশাহী ও দিনাজপুর ‘চাঁপা’ অঞ্চল, ঢাকা ও ময়মনসিংহ ‘পদ্ম’ অঞ্চল, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লা ‘বকুল’ অঞ্চল এবং খুলনা ও বরিশাল ‘গোলাপ’ অঞ্চল।