চাঁপাইনবাবগঞ্জের খামারিদের কোরবানি উপলক্ষে চরম অনিশ্চয়তা।। সজাগ পুলিশ ও জেলা প্রশাসন


ফয়সাল আজম অপু: কোরবানি উপলক্ষে চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের খামারিরা। আর মাত্র কয়েক দিন বাকি ঈদ-উল-আজহার। চাহিদার তুলনায় বেশি গরু উৎপাদন হলেও করোনার কারণে গরু বিক্রি করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কিত তারা।

 তবে খামারিদের রক্ষায় হাট সম্প্রসারণের পাশাপাশি অনলাইনে পশু বিক্রির বিকল্প উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ অভিজ্ঞজনদের। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে বলে দাবি জেলা প্রশাসনের। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ধুমিহায়াতপুর-ঘাইসাপাড়া এলাকার গরু খামারি আলহাজ্ব গোলাপ হোসেন (জেন্টু হাজি) কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রতিবছর তিনি ৪’শ থেকে সাড়ে ৪শ’ গরু হৃষ্টপুষ্ট করে থাকেন। করোনার কারণে এ বছর তার খামারে পালন করা হয়েছে ২ শতাধিক’ গরু। 

সারা বছর গরু মোটাতাজাকরণ করতে বড় অংকের টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। তাই ঈদে গরু বিক্রি করতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে চরম দুঃশ্চিন্তায় আছেন। একই অবস্থা সদর, গোমস্তাপুর, নাচোল ও ভোলাহাট উপজেলার ছোট-বড় সব খামারের মালিকদের। খামারিরা বলছেন, গরুগুলো ঈদের জন্য আমরা মোটাতাজাকরণ করছি। করোনার কারণে দাম কম। খাবারের দাম করোনার কারণে যে দাম তাতে করে লস হতে পারে বলে আমরা মনে করছি। এ অবস্থায় খামারিদের রক্ষায় হাট সম্প্রসারণের পাশাপাশি অনলাইনে পশু বিক্রির বিকল্প উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ অভিজ্ঞজনদের। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, একই জায়গা না হয়ে বিভিন্ন জায়গায় যেন হাট বসে। সেজন্য লোকাল প্রশাসনের সাথে আলোচনা করতে হবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি এরফান বলেন, বিকল্প হচ্ছে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করিয়ে পশু কেনাবেচা হয়। বাংলাদেশে এখন এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসক এজেডএম নুরুল হক জানান, অনলাইনে পশু বিক্রি এবং হাট সম্প্রসারণের কাজ ইতোমধ্যে শুরু করেছেন।

তিনি আরও বলেন, অনলাইনে যেন গরু কেনা-বেচা হয় সেব্যাপারে আমরা উৎসাহ দিচ্ছি। এবং গরুর হাটগুলো যেন বড় জায়গায় হয় সেজন্য আমরা ইজারাদারদের সাথে কথা বলে সে ব্যবস্থা নিয়েছি। খামারিদের নিরাপত্তার কথা ভেবে পুলিশ সুপার আব্দুর রকিবের নির্দেশনায় জেলা পুলিশ ব্যাপক নিরাপত্তার উদ্যেগ নিয়েছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে গরু ভর্তি বোঝাই কৃত প্রতিটি ট্রাকে গন্তব্য উল্লেখ করে ব্যানার ঝুলিয়ে দেয়া হচ্ছে। যাতে করে রাস্তায় পুলিশ, বিজিবি, পাইকার কিংবা হাট কমিটি ও সংশ্লিষ্ট কেউ হয়রানি না করতে পারে। 

সরজমিনে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার প্রবেশদ্বার মহানন্দা ব্রিজের বারঘরিয়া চত্ত্বরে ট্রাফিক সার্জেন্ট মনিরুল ইসলাম ও সার্জেন্ট আইয়ুব আলি গরু বোঝাইকৃত, ট্রাকে গন্তব্য উল্লেখকৃত ব্যানার লাগাচ্ছেন। সার্জেন্ট মনিরুল ইসলাম জানান, পুলিশ সুপার মহদয়ের নির্দেশক্রমে ট্রাকের ড্রাইভার, হেল্পার, খামার মালিক প্রতিনিধিদের করোনা প্রতিরোধ সচেতনতা মূলক প্রচার, ও মার্কস ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করছি। এবং সেই সাথে গন্তব্য সংবলিত ব্যানার লাগিয়ে দিচ্ছি। যাতে করে রাস্তায় কোনো হয়রানির স্বীকার না হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাপ্রাণী সম্পদ দপ্তরের তথ্য মতে, এবার জেলার প্রায় ১২ হাজার ১’শ ৮৪টি খামারের গরু, ছাগল, মহিশ ও ভেড়া সহ প্রায় ৯৮ হাজার ৭’শ ৬৯টি পশু পালিত হয়েছে। 

যা চাঁপাইনবাবগঞ্জের কোরবানির চাহিদার তুলনা প্রায় ২০ হাজার বেশি। ঈদ ঘনিয়ে আসায় সেই কোরবানির পশু গুলো বাজার গুলোতে নামতে শুরু করেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২১ টি পশুর হাটের মাধ্যমে গরু কেনা বেচা হচ্ছে সেগুলো। এর মধ্যে একটি শিবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহি পশুর হাট তর্তিপুর। সপ্তাহের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এই হাটে গরু বেচাকেনা হয়ে থাকে। অপরদিকে জেলার বৃহৎ হাট নাচোল উপজেলায় প্রতি বুধবার সোনাইচন্ডি হাটে বেচাকেনা হয়।