চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের পাশাপাশি তালের শাঁস খেয়ে মন ভরে যায়


ফয়সাল আজম অপু: চলছে মধূমাস। এই মাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে হরেক রকমের সুস্বাদু ফল। ফলের তালিকায় রয়েছে, আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু ছাড়াও অন্যতম আরেকটি ভিন্নধর্মী ফল তালের শাঁস। তাল ফলের নরম অংশটি খুবই সুস্বাদু। গ্রাম্য ভাষায় এটি “তালকুর” বা “তালপানি” নামে বেশি পরিচিত। প্রচন্ড গরমে তালের এই শাঁসটি শহর ও গ্রামের মানুষের কাছে খুবই প্রিয়। 

বর্তমানে শহর থেকে শুরু করে গ্রামের বিভিন্ন অলিগলিতে এই মৌসুমী ফল তালের শাঁস বিক্রির বেড়ে গেছে। অনেক মৌসুমী ব্যবসায়ীরা তাল গাছ থেকে অপরিপক্ক তাল ফল পাইকারী কিনে এনে কেটে কেটে বিভিন্ন দামে বিক্রয় করে। তবে নরম অবস্থায় তাল শাঁসের দাম অনেক বেশি। কিন্তু দিন যতই যেতে থাকে এই তাল শাঁস ততই শক্ত হতে থাকে। তখন শাঁসের দাম কমতে থাকে এবং এক সময় তাল পরিপক্ক হয়ে গেলে তখন আর এই শাঁস খাওয়া সম্ভব হয় না। 

ওই দেখা যায় তাল গাছ, ওই আমাদের গাঁ, ওই খানেতে বাস করে কানা বগীর ছা’ গাঁয়ে এখন বকের ছানা থাক বা না থাক, চাঁপাইনবাবগঞ্জর জেলার প্রতিটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার তালগাছ গুলোতে কিন্তু কচি তালে ভরে আছে। মধুমাসের এ ফলকে কেউ বলে তালের শাঁস, কেউ বলে তালকুর, কেউ বলে তালের আটি আবার কেউ বলে তালপানি। গরমের মধ্যে তৈলাক্ত খাবারের চেয়ে তালের শাঁস অনেক উপকারী। এর রয়েছে অনেক গুণাগুণ। তাই জৈষ্ঠ্যের এ মধুমাসে বাজারে নানা ফল ওঠলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে তালের শাঁস। 

গ্রীষ্মের এই দিনে বরেন্দ্র এলাকার তালের শাঁস খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। তাই সবার হাতে পোঁছে যায় কঁচি তালের শাঁস। মঙ্গলবার (৩০ জুন) সকালে বড় ইন্দারা মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, দেদারশে বিক্রি হচ্ছে তালের শাঁস, বর্তমানে এর চাহিদা অনেক বেড়েছে। দেখা যায়, বিক্রেতা তাল শাঁস কেটে সারতে পারছে না, ক্রেতারা দাড়িয়ে রয়েছে শাঁস নিতে। জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলার গৃহস্তদের গাছের তালের শাঁস যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী জেলাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। শিশু সহ সকল বয়সী লোকের মধ্যে এই তালের শাঁসের কদর দিন দিন বেড়েই চলেছে। উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামেই তাল গাছ রয়েছে। 

নাচোল উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা বলেন, তাল গাছে’র কোন পরিসংখ্যান জানা নেই। নাচোল উপজেলার ইউএনও সাবিহা সুলতানা বলেন, নাচোল উপজেলায় বজ্রপাত প্রতিরোধে তাল গাছ ছাতি হিসেবে কাজ করছে। তিনি বলেন, প্রতিবছর রাস্তার ধারে তাল বীজ রোপণ করা হবে। জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার, বাসস্ট্যান্ড ও অলি-গলিতে তালের শাঁস বিক্রি করে অনেক হতদরিদ্র মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার বড় ইন্দারা মোড়ে বিক্রেতা আবুল আসাদ ও শরীফ আহম্মেদ জানান, তিনি প্রতি বছরই এ সময়ে তালের শাঁস বিক্রি করে সংসার চালান। গ্রাম অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে তাল ক্রয় করে গাছ থেকে পেরে এনে শাঁস বিক্রি করেন। 

তবে গাছে ওঠে, বাঁধা ধরে পাড়া সবচেয়ে কষ্টকর। বৈশাখ থেকে জৈষ্ঠ্যের অর্ধেক পর্যন্ত এ দেড় মাস চলবে তালের শাঁস বিক্রির কাজ। প্রতিদিন প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ শাঁস বিক্রি করা যায়। একটি শাঁস আকার ভেদে ৫ থেকে ১০ টাকা দরে বিক্রি করছি। এতে তার প্রায় ৪শ থেকে ৫শ টাকা লাভ হয়। তালের শাঁস বিক্রি করে চারজনের সংসার ভালই চলছে। শিবগঞ্জ উপজেলার সোনামসজিদ জিরো পয়েন্ট এলাকায় ক্রেতা সাইফুল জানান, তালের শাঁস একটি সুস্বাদু ফল। গরম থেকে এসে তালের শাঁস খেয়ে ভালই লাগে মনটা জুড়িয়ে যায়। ফলে এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। 

তবে তাল গাছ এক পায়ে দাড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে উকি মারে আকাশে, কবির সে কবিতার মতো সারি সারি তাল গাছ রাস্তার দু’ধারে এমন দৃশ্য আর চোখে পড়েনা। কালের বিবর্তনে নাচোল উপজেলার বিভিন্ন এলাকার তাল গাছ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় মানুষ সখ করে বাড়ির পাশে কিংবা রাস্তার ধারে তালের বীজ বপন করতো। কিন্তু এখন আর তা চোখে পড়ে না। ক্রেতা আরিফ হোসেন বলেন, আমি প্রায়ই বাড়িতে খাওয়ার জন্য এই তালের শাঁস কিনে নিয়ে যাই। মধূমাসের অন্যান্য ফলের তুলনায় এই শাঁস পরিবারের সকল সদস্যদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। 

এটি নরম ও সুস্বাদু। সব বয়সের মানুষ এটি সহজে খেতে পারে। তুলনামূলক ভাবে এর দামও হাতের নাগালে। কিন্তু এই শাঁস বেশি দিন পাওয়া যায় না। তবে দিন দিন এই শাঁসের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তালের শাঁসের পুষ্টি গুণ সম্পর্কে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল বলেন, তালের শাঁস শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। গরমের দিনে তালের শাঁসে থাকা জলীয় অংশ পানি শূন্যতা দুর করে। 

এছাড়া, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, বি, সি, সহ নানা ধরনের ভিটামিন রয়েছে। তালে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। কচি তালের শাঁস রক্তশূন্যতা দূর করে। চোখের দৃষ্টি শক্তি ও মুখের রুচি বাড়ায়।