চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিরোধীদের চাপে অস্বস্তিতে নৌকার প্রার্থীরা 


নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনটি আসনেই নৌকার মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরা অস্বস্তিতে রয়েছেন। মনোনয়ন প্রতিযোগিতায় বর্তমান সংসদ সদস্যরা নৌকার ভার পেলেও শেষ পর্যন্ত তা ভাসিয়ে রাখতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। কারণ চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুটি আসনে নৌকারn বিপরীতে এবার রয়েছেন শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী। তারা মূলত আওয়ামী লীগেরই।
সদর আসনটিতে নৌকা ডোবাতে নোঙর প্রতীকের প্রচারণায় নেমেছেন আওয়ামী লীগের নেতা ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিরা। তবে নৌকার প্রার্থীরা বলছেন- যারা নৌকা বিরোধী। এদের কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছে, আবার কেউ নৌকা ঠেকাতে ভিন্ন প্রতীকের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে। এতে নৌকার বিজয়ে প্রভাব পড়বে না। ভোটের মাঠ বিশ্লেষনে দেখা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ডাঃ সামিল উদ্দীন আহমেদ শিমুল। এ আসনটিতে নৌকার বিরুদ্ধে লড়বেন হেভিওয়েট দুই প্রার্থী।
একজন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ও বিদ্যুৎ আন্দোলনের নেতা গোলাম রাব্বানী অন্যজন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম। এ আসনের বেশির ভাগ ভোটার মনে করছেন, আসন্ন নির্বাচনে সৈয়দ নজরুল ইসলামই নৌকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। কারণ তার রয়েছে ক্লিন ইমেজ, পারিবারিক ঐতিহ্য ও জনপ্রিয়তা। উপজেলা আওয়ামী লীগ ও পৌর আওয়ামী লীগসহ সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরাও সৈয়দ নজরুল ইসলামের সঙ্গে রয়েছেন। অপরদিকে নেতা ও কর্মী শূন্য ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ডাঃ সামিল উদ্দীন আহমেদ শিমুল।
স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে দলের দ্বায়িত্বশীল কাউকে দেখা যায়নি। তবে বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। বিগত নির্বাচনে ডাঃ সামিল উদ্দীন আহমেদ শিমুল আওয়ামী লীগের সহযোগিতায় নির্বাচিত হলেও এবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন তিনি। তাই শেষ পর্যন্ত নৌকা ভাসিয়ে রাখতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। এ আসনটিতে জাতীয় পার্টি, এনপিপি, বিএনএফ ও বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্টের আরও চারজন প্রার্থী থাকলে তারা কেউই প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আসার মতো প্রার্থী নন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে স্বস্তিতে থাকতে পারছেন না নৌকার কান্ডারি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মু. জিয়াউর রহমান এমপি। তার সঙ্গে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন আরও চার প্রার্থী। তাদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মোস্তফা বিশ্বাসকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবা হচ্ছে। গোলাম মোস্তফা এ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন। এবার তিনিই জিয়ার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। মোস্তফা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও। ওই আসনের তিনটি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় উপজেলা গোমস্তাপুর। সেখানে অনেক জনপ্রিয় গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস। এমপি থাকার সময় এলাকায় উন্নয়নও করেছেন।
ইতিবাচক কর্মকান্ড ও জনপ্রিয়তা কাজেও লাগাচ্ছেন গোলাম মোস্তফা। যা ভাবাচ্ছে দলের প্রার্থী জিয়াকে। অন্য প্রার্থী প্রতিদ্বান্দ্বীতার আসার মতো নন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদও স্বস্তিতে নেই। এ আসনে মোট প্রার্থী চারজন। তবে আব্দুল ওদুদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছেন বিএনপি ছেড়ে বিএনএম’র প্রার্থী হওয়া আব্দুল মতিন। তিনি জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ছিলেন। এছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোখলেসুর রহমান তার দলবল নিয়ে নোঙর প্রতীকের প্রচারণায় নেমেছেন। তার সঙ্গে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন, জেলা আওয়ামী লীগ, উপজেলা আওয়ামী লীগ, পৌর আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পৌর মেয়র মোখলেসুর রহমান নির্বাচনী প্রচারণার প্রথম দিনেই নোঙর দিয়ে নৌকা আটকে দেয়ার ঘোষণা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী আব্দুল ওদুদ সহজেই নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে পারবেন না বলে মনে করছেন ভোটাররা।
স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ইতিবাচক ঘোষণা আসায় মাঠে আছেন তিনি। স্বতন্ত্র নির্বাচন করে নিজের জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিতে চান। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল ওদুদ এমপি বলেন যারা এখন নৌকার বিপক্ষে। তারা আগেও নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করেছে। নৌকাকে ঠেকাতে হবে কিংবা ওদুদ বিশ্বাসকে ঠেকাতে হবে এটা তাদের আজন্ম লালিত স্বপ্ন। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তারা দল বা দলের নীতি আদর্শের তোয়াক্কা করছে না। এমপি ওদুদ আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নৌকা দিয়েছেন ডোবানোর জন্য নয়, নৌকা ভাসানোর জন্যই দিয়েছেন। যারা নৌকার বিরোধীতা করছেন, তারা নৌকার কোন ক্ষতি করতে পারেবে না। তারা যত বিরোধীতা করবে নৌকার তত লাভ।