চাঁপাইনবাবগঞ্জ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু থেকে কোটি-কোটি টাকা আয় হলেও নেই সংস্কারের উদ্যেগ


ফয়সাল আজম অপু: কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, রক্ষণাবেক্ষন ও সংস্কারের অভাবে বেহাল দশা চাঁপাইনবাবগঞ্জ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুর। উত্তরে বারোঘরিয়া প্রান্তে রেলিংয়ে নতুন রং ঠিকই আছে, তবে মরচে লেগে লোহার পাত ছিদ্র ছিদ্র হয়ে খসে পড়েছে। ব্রীজের ফুটপাতের যে ঢাকনা রয়েছে তা ভেঙ্গে তৈরি হয়েছে গর্ত। সেতু রক্ষায় ব্লক দিয়ে যে বাঁধ দেয়া আছে, তা বিশাল অংশ নিয়ে দেবে গেছে অনেক আগেই। 
এমনকি ব্রীজের নিচেই তৈরি হয়েছে পৌরসভার ময়লা-আর্বজনা ফেলার ভাগাড়, তাই দুর্গন্ধে নাক-মুখ ঢেকে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে পার হতে হয় মহানন্দা সেতু। বিভিন্ন সময়ে বারবার সংস্কার কাজের দাবি উঠলেও তাতে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুর এই দুরাবস্থার কোন পরিবর্তন নেয়৷ যেকোন সময় ফুটপাতে পড়ে গিয়ে বা রেলিং ভেঙ্গে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। অথচ কোটি কোটি টাকা আয় হচ্ছে সেতুর টোল থেকে।
এমনকি ভারতের সাথে স্থলপথে প্রতিদিন শত শত পণ্যবাহী ট্রাক বিভিন্ন মালামাল আমদানি-রপ্তানী করতে ব্যবহার করে এই সেতুই। স্থানীয় মহারাজপুরের নবম শ্রেণির ছাত্র ফাহাদ জানান, আমরা প্রতিদিন সকালে স্কুলে যায় এবং বিকেলে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিতে ব্রীজে ঘুরতে আসি। রেলিংয়ের পাশে দাঁড়িয়ে নদীর মুক্ত ও নির্মল বাতাস পেতে ভালোই লাগে। তবে গত প্রায় ১ মাস ধরে আমরা এ থেকে বঞ্চিত। কারন এখন রেলিংয়ের পাশে যেতেই ভয় লাগে। ভাঙ্গা রেলিং ধরতে গিয়ে ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা।
 চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র-টিটিসি’র একজন শিক্ষক বলেন, বসবাস করি শহরে, কিন্তু কর্মক্ষেত্র নদীর অন্য প্রান্তে হওয়ায় প্রায় প্রতিদিন হেঁটে ব্রীজ পার হতে হয়। সম্প্রতি ফুটপাতের একটি জায়গায় গর্ত তৈরি হয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই এত ব্যস্ত সেতুতেও প্রচুর গাড়ির মধ্যেও ফুটপাত ছেড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হয়। আমার মতো এমন হাজারো মানুষের এটি প্রতিদিনের দুর্ভোগ। জরুরীভাবে এর সংস্কার কাজ প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতা বলেন, জনপ্রতিনিধিদের গুরুত্ব না দেয়া ও কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারনেই এই অবস্থার জন্য দায়ী। দীর্ঘদিন ধরে টোল ফ্রি এবং সংস্কারের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান ও আন্দোলন করা হলেও এর ফলাফল শূণ্য। এমনকি মাঝেমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও এই সেতুর দুরাবস্থার কথা উল্লেখ করে ছবি পোস্ট ও বিভিন্ন মন্তব্য করেন অনেকেই।
গত ২৯ জুন মাহমুদ নিরব নামের এক ব্যক্তি মহানন্দা সেতুর এমন দুরাবস্থার কয়েকটি ছবি পোস্ট করেন ফেসবুকে। এখানে অনেকেই ভিন্নভাবে নিজেদের মন্তব্য জানিয়েছেন। এবি জাব্বার লিখেছেন, সড়ক ও জনপদ বিভাগ একদম নিশ্চুপ, এরা শুধু ছোটখাটো রাস্তার সংস্কার করে। মোহাম্মদ রাইহানুল ইসলাম উত্তরে লিখেছেন, অথচ ব্রীজটার পাশেই সড়ক ও জনপদ বিভাগের অফিস। মিজানুর রহমান, এ কে সামিরা, মোহাম্মদ দুলাল মিয়া, মাসির আহমেদসহ অনেকেই দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।
এবিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ জেড এম ফারহান দাউদ জানান, ২০-২৫ বছরের পুরোনো হওয়ার কারনে রেলিংয়ের কিছু অংশে মরচে ধরছে। একসাথে সবগুলো পরিবর্তন করা যাবে না, তাই মরচে পড়ে খসে যাওয়া অংশ খুব শীগ্রই মেরামত করা হবে। তিনি আরো বলেন, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে কিছু জায়গায় দেবে গর্ত তৈরি হয়েছে। সেগুলোও সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।