নাটোর প্রতিনিধি: ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে বাংলাদেশী পণ্যবাহী জাহাজ সহ ২৩ নাবিক ও ক্রু জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরেছে। সেই জাহাজের এক নাবিক নাটোরের জয় মাহমুদও মুক্ত হয়ে বাবা-মা ও স্বজনদের মাঝে ফিরে আসায় তার গ্রামে চলছে খুশির বন্যা। এতদিন তাদের কেটেছে দুঃশ্চিন্তা আর আতংেকে। সে অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেয়ে জয় মাহমুদের বাবা-মা, দাদীসহ স্বজনদের সবারই মাঝে আনন্দের জোয়ার এসেছে। তারা আল্লাহর কাছে হাজার শোকর জানাচ্ছেন।
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার সালাইনগর গ্রামের জিয়াউর রহমানের ছেলে জয় মাহমুদ। স্বপ্ন ছিলো সুন্দর একটি জীবন সাজাবে। স্বপ্ন পূরনের একধাপ এগিয়ে জাহাজের নাবিক পদে চাকুরীও পায় সে। কিন্তু অজানা এক ঝড় এসে সব যেন লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল। গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশী পণ্যবাহী একটি জাহাজের নাবিক জয় মাহমুদ সহ ২৩ নাবিক ও ক্রুকে জিম্মি করে সোমালিয় জলদস্যুরা।
এরপর অনেক সময় কেটে গেছে। জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছে নাবিক জয়সহ ২৩ নাবিক ও ক্রু। অবশেষে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজটি ভিড়লে জিম্মি দশা থেকে মুক্ত নাবিক ও ক্রুরা দেশের মাটিতে নেমে মুক্ত বাতাস গ্রহণ করে। এরপর সবারই নিজ নিজ বাড়ি ফেরার পালা। মঙ্গলবার রাতে সবার মত জয় মাহম্মুদও ফিরে এসেছে তার বাবা-মা’র কাছে, নিজ বাড়িতে।
জিম্মি দশা থেকে মুক্ত জয় মাহম্মুদ জানায়, যেদিন জল দস্যুদের হাতে আটক হয়েছিলেন সেদিন যেন মাথার ওপর যেন ছাদ ভেঙ্গে পড়েছিল। শুধু কান্নকাটি করছিলাম সবাই। মনে হচ্ছিল বাংলাদেশে আর জীবিত ফিরতে পারবেন তা ভাবতেও পারেননি। তারা মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ায় পরিবারের সাথে যোগাযোগও করতে পারছিলেন না।
শুধু আতঙ্কে কেটেছে। শুধু কি হবে কি হবে এই চিন্তা। ঈদে নামাজ পড়লেও কোন আনন্দ করতে পারেননি। এর পর যা হোক মুক্ত হয়ে দেশে ফিরে আসায় খুব আনন্দ হচ্ছে। আল্লাহ হয়তো ঈদের আনন্দ আজ দিয়েছে। আল্লাহর কাছে শোকর আলহামদুল্লাহ যে তিনি আমাদের মুক্ত করে দেশে ফিরিয়ে এনেছেন।
জয় মাহম্মুদের মা আরিফা বেগম ও বাবা জিয়াউর রহমান জানান, ছেলে যখন জলদস্যুদের হাতে আটক ছিল তখন খুব কষ্টে দিন কেটেছে। আল্লাহর কাছে কাাঁদাকাটি করেছেন তাদের ছেলে সহ সবাই যেন নিরাপদে দেশে ফিরতে পারে। এখন ছেলে মুক্ত হয়ে তাদের কাছে ফিরে আসায় তারা খুব খুশি। গত ঈদে তাদের চোখে ছিল শুধু পানি আর পানি। এখন ছেলে মুক্ত হয়ে তাদের কাছে ফিরে এসেছে জন্য তাদের খুব ভাল লাগছে আর ঈদের আনন্দ হচ্ছে। তারা বাংলাদেশ সরকার, জাহাজের মালিক ও মিডিয়া যাদের চেষ্টায় তার ছেলেরা মুক্তি পেয়েছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
জয় মাহম্মুদের দাদী রওশনআরা আনন্দে কথা বলতে পারছিলেন না। কান্নাজড়িত কণ্ঠে শুধু বললেন আল্লাহর কাছে কাঁদাকাট করেছেন। এখন তার নাতি তার বুকে ফিরে এসেছে জন্য তিনি খুব খুশি।
জয় মাহম্মুদের শিক্ষক আব্দুস সামাদ জানান, জয় তার ছাত্র ছিল্। সে ভালভাবেই লেখাপড়া করেছে। খুব ভাল ছেলে। তার চাকুরীতে যাওয়ার সময় ভালভাবে প্রত্যায়ন পত্র দিয়েছিলেন। এরপরে জাহাজে চাকুরী পাওয়ায় খুব আনন্দিত হয়েছিলেন। এর পরে তার জলদস্যুদর হাতে আটক হওয়ার খবরে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন। দেশে ফিরে আসায় তিনি অত্যন্ত খুশি।
জয় মাহম্মুদের বন্ধু সজিব হোসেন জানায়, সে আর জয় বাল্যকালের বন্ধু। তারা দুই জন এক সাথে লেখাপড়া করেছে, ঘুরে বেড়িয়েছে। তারপরে তার জলদস্যুদের হাতে আটকের খবর পেয়ে খুব কষ্টে ছিল। এর পর মুক্ত হয়ে চট্টগ্রামে পৌঁছে তখন খুব বানন্দ পেয়েছে। পরে জয় বাসে ওঠার সময় তাকে ফোন দিয়েছিল। সকালে নাটোরে থেকে তাকে রিসিভ করে এনেছে।
শফিকুর রহমান, আশিক মাহম্মুদ,মাজেদা বেগম, জীবন আহমেদ সহ, জয় মাহমুদের এই প্রতিবেশীরা জানান, জয় জলদস্যুদের হাতে আটক হওয়ায় তারা খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। এখন তার মুক্ত হয়ে বাড়ি আসার সংবাদে খুশিতে তাকে দেখতে এসেছেন। তারা বলেন, মিডিয়ার মাধ্যমে তারা যেটুকু তারা জানতে পেরেছিলেন যে, জয়ের জাহাজে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তত ভালো ছিল না। যদি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকতো তাহলে হয়তো এরকমভাবে কোন মায়ের সন্তান জিম্মি হতো না। তিনি সরকার ও জাহাজের মালক পক্ষের কাছে এসব জাহাজে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার দাবী জানান।