জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পেশা পরিবর্তন করতে হচ্ছে কম্বোডিয়ার কৃষকদের


কম্বোডিয়ার প্রে নোব জেলায় সমুদ্রের উচ্চতা ঘন ঘন বৃদ্ধির কারণে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। এর কারণে একদল ধান চাষি তাদের জমি বিক্রি করে অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। কৃষকদের বিশ্বাস, কাছাকাছি চিংড়ি চাষের বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানি প্রতিষ্ঠার ফলে অনেক বেশি নোনা পানি জমি প্রবেশ করছে। চিংড়ি খামার থেকে নোনা জল তাদের ধান ক্ষেতে প্রবাহিত হয় যা তাদের ফসলের ক্ষতি করে। এখন মাত্র শতকরা ৪০ থেকে ৫০ ভাগ গ্রামবাসীদের ধান চাষ অব্যাহত আছে এবং বাকিরা তাদের জমি বেসরকারী কোম্পানির কাছে বিক্রি করেছে। সংবাদ সূত্র: A24 News Agency

মং রিন নামের এক কৃষক বলেছেন যে তিনি ১৯৮৪ সাল থেকে ধান চাষ করছেন। সমুদ্রের জল ধানের ক্ষেতে প্রবেশ করায় তিনি জমি বিক্রি করতে বাধ্য হন। তিনি জানান, ”আমি আমার ধান ক্ষেত প্রাইভেট কোম্পানীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছি যারা এখানে চিংড়ি চাষ করবে। জমিগুলো বিক্রি করার কারণ হচ্ছে সমুদ্রের পানি বেড়ে যাওয়ায় জমিগুলো লোনা পানিতে ডুবে যাচ্ছে। আমি লক্ষ্য করেছি যে জলবায়ু আগের থেকে অনেক পাল্টে গেছে। কখনো অসময়ে বৃষ্টি হয়, কখনো হয় বছরের শেষে।”

আরেক কৃষক পেং জানান, ”আমি ধান উৎপাদনের জন্য কিছু জমি বর্গা নিয়েছি। কিন্তু গত বছর মাত্র ৫০০ কেজি ধান হয়েছে কিন্তু আমার সাথে চুক্তি ছিলো ১০০০ কেজি ধান উৎপাদন করা। সুতরাং ধান চাষি হওয়াটা এখন মূল্যহীন। সাগরের পানি আমার জমিতে প্রবেশ করছে যখন আমি ফসল তোলার জন্য তৈরী এবং সব ফসল নষ্ট করে দিয়েছে। আমি এখন পেশা পরিবর্তন করে নির্মাণ শ্রমিক অথবা মাছ, কাঁকড়া ধরার কথা ভাবছি।”

এদিকে, ডেপুটি ফিশিং সম্প্রদায়ের নেতা, খুন রান বলেছেন যে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রতি বছর মিঠা পানির অঞ্চলে সমুদ্রের পানি ক্রমাগত প্রবাহিত হয় যার ফলে ফসল নষ্ট হচ্ছে। এছাড়াও বাঁধের গেটগুলি বেশ পুরানো এবং টেকসই নয়। ফলে সমুদ্রের পানি সহজেই ধানের ক্ষেতে প্রবেশ করে। তার মতে, ”পুরানো বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাওয়াতেই প্রতি বছর সমুদ্রের লোনা জল ধান ক্ষেতের মিঠা পানির মধ্যে চলে আসছে। ডিসেম্বরে সব মিঠা পানিই লবনাক্ত হয়ে পড়েছে ফলে নষ্ট হয়ে গিয়েছে সবার ধান। এছাড়া কিছু ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের চিংড়ির ঘের রয়েছে এখানে যার পানি প্রবাহিত হয়ে ধান ক্ষেতের দিকে চলে আসে এবং ফসলের ক্ষতি করে। এখন আমাদের গ্রামে শতকরা ৪০ থেকে ৫০ ভাগ লোক ধান চাষ করতে পারে। বাকিরা আমরা আমাদের জমি প্রাইভেট কোম্পানীগুলোর কাছে বিক্রি করে দিচ্ছি।”

খুন রান আরো বলেন, ”জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বলতে গেলে বলতে হয় আমাদের এলাকায় একটি ম্যানগ্রোভ বন আছে যা জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে সাহায্য করে কিন্তু যে এলাকাগুলো একটু দূরে অবস্থিত সেগুলো প্রায়ই পানিতে ভেসে যায়। এমন অবস্থায় নি দিন ফসলের জমিগুলো অকেজো হয়ে পড়ছে। এসব লোনা পানিতে চিংড়ির ঘের দেয়াটা কার্যকর কিন্তু একটা ঘের দেয়ার সামর্থ্য আমাদের নেই। এ কারণে সবাই জমি বিক্রি করে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে।”