তানোর প্রতিনিধি : তানোরে আ’লীগ এক নেতার বিরুদ্ধে মাদ্রাসা বন্ধ করে দিয়ে মাদ্রাসার জমিসহ সরকারী বরাদ্ধ হওয়া ১০টন টিয়ার চাল আত্নসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২বছর আগে দাখিল ওই মাদ্রাসাটি বন্ধ করে দেয়ার পর মাদ্রাসার জমি ও সরকারী বরাদ্ধ পাওয়া ১০টন টিয়ার চালের হিসাব না দেয়ার এঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্রে আশংখ্যা করছেন এলাকাবাসী।
এঘটনায় এলাকাবাসীসহ গ্রামবাসীর উদ্যোগে গ্রামে মাদ্রাসার বিষয়ে ডাকা সভায় (মিটিং) ওই আ’লীগ নেতা উপস্থিত না হওয়ায় গ্রামবাসীর পক্ষে সরনজাই ইউপি’র ২র্ন ওয়র্ড সদস্য আজিমুদ্দীন বাদি হয়ে তানোর প্রেস ক্লাব বরাবার ডাকযোগে একটি লিখিত অভিযোগ প্রেরন করেছেন। এর অনুলিপি ডাকযোগে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার, রাজশাহী জেলা প্রশাসক, রাজশাহী পুলিশ সুপার, তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, তানোর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, তানোর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার, রাজশাহী প্রেস ক্লাব বরাবর প্রদান করেছেন।
ডাকযোগে পাঠানো অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিন ওই মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা গেছে, ভাগনা গ্রামের ধানের জমির মধ্যে পরিত্যাক্ত অবস্থায় প্রায় ৭টি রুম বিশিষ্ট মাদ্রাসার ভবনটি ভগ্নদশা নিয়ে দাড়িয়ে আছে, চারিদেকে ময়লা আবর্জনা ও প্রায় ঘরের চালার টিন উড়ে গেছে। তবে, ওই মাদ্রাসাটি পুনরায় চালুকরা সম্ভব বলে মনে হয়েছে। এবিষয়ে মাদ্রাসার পার্শ্বের বাড়ির আব্দুর রাজ্জাক বলেন, একসময় মাদ্রাসাটি শিক্ষক শিক্ষিকাসহ শিক্ষার্থীদের পদচারনায় মুখর ছিলো। কিন্তু গত প্রায় ৪বছর ধরে মাদ্রাসাটি বন্ধ হয়ে আছে। তিনি বলেন মাদ্রাসার নামের প্রায় ৫ বিঘা জমি মইনউদ্দিন নিজ দখলে রেখেছেন, সেই সাথে সরকারী বরাদ্ধ পাওয়া ১০টন টিয়ারের কোন কাজ করা হয়নি পুরো টাকা তিনি উত্তোলন করে আত্নসাৎ করেছেন। তিনি আরো বলেন, আমরা গ্রামবাসী হিসাব চেয়ে মিটিং ডাকা হলে মইনুউদ্দিন মিটিং এ উপস্থিত হননি।
এলাকাবাসী ও অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, তানোর উপজেলার সরনজাই ইউনিয়ন এলাকার মানিককন্যা ও ভাগনা গ্রামবাসীসহ এলাকাবাসীর উদ্যোগে ভাগনা জমির মাঠে ১৯৯৯ সালে মনিককন্যা ভাগনা দাখিল মাদ্রাসাটি স্থাপিত করা হয়। মাদ্রাসাটিতে শিক্ষক শিক্ষিকা নিয়োগ দিয়ে বিধি মোতাবেক শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের পদচারনায় মুখরিত ছিলো মাদ্রাসা চত্বর। এঅবস্থায় এলাকাবাসী স্ব-উদ্যোগে মাদ্রাসার নামে এক একর ৪০শতক জমি দান করেন।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত দীর্ঘদিনেও মাদ্রাসাটি এমপিও ভুক্ত না হওয়ায় ২০১৪সাল থেকে শিক্ষক শিক্ষিকা ও কর্মচারীরা মাদ্রাসায় আসা যাওয়া বন্ধ করে দেন। মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ভাগনা গ্রামের হযরতুল্লার ছেলে আ’লীগ নেতা মইনুদ্দীন নিজেকে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি দাবি করে মাদ্রাসার জমি নিজের দখলে নিয়ে একক ক্ষমতায় মাদ্রাসার জমি লীজ দিলেও টাকার বিষয়ে কাউকেই কোন হিসাব দেন না।
গত চার বছরের লীজ দেয়া টাকার পরিমান ৫লাখ টাকা। অপর দিকে ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে ওই মাদ্রাসার নামে সরকারী ভাবে ১০টন টিয়ার বরাদ্ধ দেয়া হয়। সরকারী বরাদ্ধ পাওয়া ওই ১০ টন টিয়ারের দাম প্রায় ৩লাখ টাকা যার কোন প্রকার কোন কাজ না করেই উত্তোলন করে নিজের কাছে রাখেন।
সেই থেকেই গ্রামবাসী মাদ্রাসার হিসাব চাইলে কাউকে কোন হিসাব দিবেনা মর্মে সাফ জানিয়ে দেন আ’লীগ নেতা মইনুদ্দীন। এদিকে ২০১৭ সালে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে মাদ্রাসার সকল প্রকার কার্যক্রমসহ পাঠদান বন্ধ ঘোষনার নির্দেশ দিয়ে চিঠি দেন। ফলে মাদ্রাসার সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মাদ্রাসাটি পরিত্যাক্ত ও ভগ্নদশায় পরিনত হয়। সেই থেকেই গ্রামবাসী মাদ্রাসার হিসাব নিকাশ চাইলে মইনউদ্দিন বিভিন্ন টালবাহানা করতে থাকে এবং এক পর্যায়ে কাউকেই কোন হিসাব দিবেন না মর্মে জানিয়ে দেয়। এঘটনায় গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হলে গত ১৭ই অক্টোবর/২০২০ইং তারিখে গ্রামবাসী গ্রামের মাদ্রাসার বিষয়ে সভার (মিটিং) আয়োজন করেন কিন্তু মইনুদ্দীন সেই সভায় উপস্থিত না হওয়ায় গ্রামবাসী লিখিত অভিযোগ দেয়ার সিদ্ধন্ত নিয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন।
এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মাদ্রাসার সুপার নুরুল ইসলাম বলেন, মাদ্রাসাটি এমপিও না হওয়ায় শিক্ষক শিক্ষিকাসহ কর্মচারীরা মাদ্রাসায় না আসায় মাদ্রাসাটি যাওয়া হয়ে যায়,। তিনি বলেন, সভাপতি মইনুউদ্দিন কি করেছে, কি করছে আমি জানিনা। তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই মাদ্রাসার জমিসহ বিভিন্ন দান অনুদানের টাকার হিসাব সভাপতি মইনুউদ্দিন কাউকেই না দেয়ায় মাদ্রাসাটি বন্ধ হয়েছে। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সভাপতি যা ইচ্ছে তাই করেছেন বলেও জানান তিনি।
এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত মইনউদ্দিন সাংবাদিকদের সাথে কোন কথা বলতে রাজি হননি।
এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, এধরনের অভিযোগ এখনো পাইনি অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।