তানোরে তরুনদের অনলাইন জুয়ায় আসক্তি বাড়ছে, প্রসাশনের নেই কোনো তৎপরতা


তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরে অনলাইন জুয়া বা বেটিংয়ে আসক্ত হয়ে পড়েছে  উপজেলার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ তরুণ সমাজের একটি বড় অংশ। এবং জুয়ার ‘ভার্চুয়াল বিষ’ ছড়িয়ে পড়ছে শ্রমজীবী মানুষের মাঝেও। সর্বস্ব খুইয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকে। জুয়ার নেশা অশান্তি-কলহের পাশাপাশি অনেক পরিবারকে বিপন্ন করে তুলছে।
তবে অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধ হলেও এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা নেই বললেই চলে। ফলে ঝুটঝামেলা ছাড়াই তরুণরা বাড়ি, রাস্তাঘাট,ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসেই জুয়া খেলা চালিয়ে যাচ্ছে। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয় এসব জুয়া বা বেটিং সাইটের।
বুঝে না বুঝে কেউ একটি ক্লিক করলেই অ্যাপস কিংবা ওয়েবসাইটের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। শুরুতে সদস্য টানতে নেওয়া হচ্ছে কৌশল। অল্প টাকায় লাখপতি হওয়া বা দ্বিগুণ মুনাফার লোভে অন্ধকার এ জগতে পা বাড়াচ্ছে যুবসমাজের সব শ্রেণীর পেশার মানুষ।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তানোরের বিভিন্ন জায়গায় শত শত মানুষ বেটিং বা অনলাইন জুয়ার সঙ্গে জড়িত। জুয়াতে টাকা ডিপোজিট ও উত্তোলন করতে এলাকা কেন্দ্রীক একাধিক এজেন্ট ও রয়েছে বেটিং সাইট গুলোর। গোপন সুত্রে জানা যায়, শুধু মাত্র তানোর উপজেলাতে রয়েছে ৫০টির বেশি এজেন্ট। অধিকাংশই স্কুল- কলেজে পড়ুয়া তরুণ জুয়ার টাকা জোগাতে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। ক্রমেই বাড়ছে আসক্তের সংখ্যা।
চটকদার বিজ্ঞাপনের কারণে যারা জুয়ায় বাজি ধরেছে, তাদের খুব কম সংখ্যকই বড় ক্ষতি ছাড়া বেরিয়ে এসেছে। অনলাইন জুয়ায় প্রতিদিন এ উপজেলায় প্রায় কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে বলে জানা যায়। প্রতিটি গ্রামেই বেটিং ছড়িয়ে পড়েছে।
একাধিক অনলাইন বেটিং অ্যাপসে প্রবেশ করে দেখা যায়, সেগুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় অফার সংবলিত বিভিন্ন ধরনের খেলার পসরা সাজিয়ে বসে আছে। নিজ পছন্দের ইভেন্টে জুয়ায় বাজি ধরা যায়। এজন্য প্রথমে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এজেন্টকে/ অ্যাপসের অ্যাকাউন্টে টাকা লোড করা হয়। পরে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে ইচ্ছামত অর্থ জুয়ায় বাজি করে তারা।
হেরে গেলে টাকা চলে গেল। আর জিতলে মূল টাকাসহ জুয়ার রেটের টাকা অ্যাকাউন্টে ফিরে আসে। পরে সেখান থেকে মোবাইল ব্যাংক/এজেন্টের মাধ্যমে টাকা তোলা যায়। স্থানীয় এজেন্টদের মাধ্যমে বেশির ভাগ জুয়ার টাকা লেনদেন হয়। জুয়ায় আসক্তদের নিয়ে চরম অশান্তিতে আছে তানোর উপজেলার পরিবারগুলো।
টাকার জন্য জুয়াড়িরা স্বজন ও স্থানীয়দের কাছ থেকে ধারকর্জ করছে। এ টাকা পরিশোধ করতে না পারায় পরিবারকে হেনস্তার মুখে পড়তে হচ্ছে। চুরির মতো অপরাধেও জড়াচ্ছে জুয়াড়িরা। শুধু তাই নয় জুয়ার কবলে পড়ে কেউবা বিক্রয় করে দিয়েছে আবাদি-অনাবাদি সম্পত্তি।
তবে সবাই হেরেই যাচ্ছে, এমন নয়। কেউ কেউ লাভও করছে। কিন্তু এ সংখ্যা হাতেগোনা। অনলাইন বেটিংয়ে আসক্ত কামার গাঁ ইউনিয়নের বাতাস পুর গ্রামের কাওছার জানান, তিনি খেলা দেখার সময় বিজ্ঞাপন দেখে অনলাইন বেটিংয়ে আগ্রহী হন। লোভনীয় অফার দেখে একসময় আসক্ত হয়ে পড়েন। এ নিয়ে তাঁর পরিবারে অশান্তিও হয়েছে। বিভিন্ন ব্যক্তি ও এনজিওর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েও তা খুইয়েছেন। তিনি এখন নিঃস্ব।
নাম প্রকাশ না করা সত্ত্বে এক অভিভাবক বলেন, একমাত্র ছেলে কলেজে পড়ে। প্রায়ই মোবাইলে খেলা দেখে। পরে জানা গেল, অনলাইনে সে শুধু খেলাই দেখে না, জুয়াও খেলে। প্রথমে গোপনে সে পরিবারের জমানো টাকা চুরি করে নিয়ে জুয়া খেলেছে। পরে আত্মীয়স্বজন ছাড়াও গ্রামের মানুষের কাছ থেকে ধার করে টাকা নিয়ে অনলাইনে খুইয়েছে।
পাওনাদাররা এখন বাড়িতে এসে ঝামেলা করছে। এসব কারণে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে চরম অশান্তি তৈরি হয়েছে। তানোর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাঈদ সাজু  বলেন, কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ভবিষ্যতে এগুলো মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়বে।
স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ছাড়াও গ্রামাঞ্চলের একেবারে নিম্ন পর্যায়ের মানুষও এতে জড়িয়ে পড়ছে। দ্রুত এসব সাইট বন্ধ করা দরকার। স্থানীয় প্রসাশন এ দিকে দৃষ্টি না দিলে এটি আইন শৃঙ্খলা ও সম্পদের নিরাপত্তা ঘাটতির কারণ হতে পারে। ফলে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হবে।