থাইল্যান্ড – বান নক্কামিন ইনিশিয়েটিভ, থাইল্যান্ডে গৃহহীন শিশুদের জন্য গৃহ


গৃহহারা ও পারিবারিক বিচ্ছেদের কারণে আশ্রয়হীন শিশুদের আপন করে নিতে যাচ্ছে থাইল্যান্ডের সুকোথাই প্রদেশের ব্যান নক্কামিন হাউস। দেশটির উত্তরাঞ্চলের থাং সালিয়াম জেলার এ হাউসটি শিশু ক্ষমতায়ন, তাদের সঠিক যত্ন, কাউন্সিলিং এবং পরবর্তীতে তাদের ভবিষ্যত নির্মাণে মনোযোগ দিবে, যেন এতিমখানা বা কোন সামাজিক কেয়ার সেন্টারে না থেকে তারা হাউসটির সদস্য হতে পারে। News Source – A24 News Agency

তানাওয়াত নকনাক নামের এক ব্যান নক্কামিন হাউসের সদস্য বলেছে; ”আমার বাবা- মা দু’জনই মারা গেছেন। দাদীর সাথে আমি থাকতে পারতাম কিন্তু তিনিও গত হয়েছেন আর দাদা মদ্যপ অবস্থায় আমাকে মেরেছেন। তখন আমি পালিয়ে একটা জঙ্গলে থাকতে শুরু করি। এখন এখানে ভালো আছি।”

আরেক সদস্য পানুকর্ন উত-ইন বলেন, ”আমার জন্মেও পরই আমার বাবা-মা আলাদা হয়ে যায়, তারপর থেকে আমি দাদীর সাথেই থাকছিলাম। এক অপরিচিত লোক আমাকে এখানে এসে থাকতে বলে। ব্যান নক্কামিনে কোন কিছুর অভাব বোধ করলে
তারা আমাদের তা দেন, আমরা কিছু চাইলে তা পূরণ করেন আর আমাদের সমস্যার কথাও মন খুলে বলতে পারি।”

৪ বছর ধরে হাউসটির সদস্য আরথিত জাজো বলেন, ”আমার পরিবার কঠিন সময় পার করছিলো। আমার বাবা- মা প্রায়ই বিভিন্ন জায়গায় বদলি হতো। তারা এক জায়গায় বেশিদিন থাকতো না। গত ৪ বছর ধরে আমি এখানে আছি।” বাচ্চাদের দেখাশোনা করার জন্য প্রতিটি ঘরে আছে ফাদার ও মাদার। এমন হাউস মাদারদের একজন সামাই জারাত জানান, ”ছোট বাচ্চাদের নিয়ন্ত্রণ করা সহজ কিন্তু কিশোরদের নিজস্বতা থাকে, ফলে তাদের সাথে মানিয়ে নেয়া সময়সাপেক্ষ। তাই এটা সহজ মনে হলেও আসলে তা নয় তবে আমি বলব আমদের একটা বন্ধন আছে।”

অপরদিকে প্রাজাক পাশা, যিনি একজন হাউস ফাদার, বলেন, ”আমি মনে করি না এতে কোন সমস্যা আছে, যখন দেখি বাচ্চাগুলো ভালোবাসা পেতে উম্মূখ এবং আমরা পাস্পরিক বোঝাপড়া,যত্ন ও তাদের সমর্থনের মাধ্যমে সেটা দেই।
সমস্যাটা হচ্ছে কিভাবে আরো বেশি করে তাদের সাহায্য করা যায়।”

হাউসটি প্রতিষ্ঠার ভাবনা এসেছে সুইস মিশনারির আরউইন গ্রোবলি থেকে, যিনি ব্যাংককের রামখাহায়েং এ আশ্রয়হীন শিশুদের উপেক্ষা করতে পারেননি। পরে তিনি ১৯৮৯ সালে তাদের জন্য একটি রুম ভাড়া নিয়ে সবাইকে একই পরিবারের মত সেখানে থাকার আমন্ত্রণ জানান, যা ছিলো অনেকটাই ব্যান নক্কামিন হাউসের মত।

প্রতিষ্ঠানটির শিশু কল্যাণ কর্মকর্তা উইরোজ তিয়াবথং এর কথায় উঠে এসেছে তাদের উদ্দেশ্য, ”ব্যান নক্কামিন এমন একটি প্রতিষ্ঠান যাদের লক্ষ্য হচ্ছে পারিবারহারা শিশুদের নিয়ে নতুন পরিবার গড়া। একটি শিশুকে নেয়ার আগে আমাদেরকে তার মানসিক স্বাস্থ্য  ও আইকিউ পরীক্ষা করতে হয়, যেন আমরা সঠিকভাবে তার যত্ন নিতে পারি।

এখন আমরা ব্যাংকক, সুকোথাই, চিয়াং মাই, চিয়াং এবং রাইসহ বিভিন্ন প্রদেশে শিশুদের যত্ন নিচ্ছি।” পড়াশোনার পাশাপাশি বাচ্চাদের ঘরের কাজ, বাগান পরিষ্কার করা ইত্যাদিও শেখায় এই থাই হাউস। অবসর সময়ে একসাথে খেলাধুলা করে ও গান গেয়ে সময় কাটায় তারা। আপন পরিবারবিহীন শিশুগুলো সব ভুলে নিজেদের মধ্যে গড়ে নিয়েছে আরেক পরিবার।