নওগাঁ-৬ আসনের উপ-নির্বাচনে কে পাচ্ছেন নৌকার প্রতীক?


 

রায়হান আলম, নওগাঁ প্রতিনিধি: উপ-নির্বাচন হতে যাচ্ছে নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনে। রাণীনগর ও আত্রাই এই দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন ৫১,নওগাঁ-৬। প্রায় ১যুগ শাসন করার পর গত ২৭ জুলাই সাংসদ ইসরাফিল আলম মারা যাওয়ায় আসনটি শুন্য হয়। এর আগে বিএনপি নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ওই এলাকার এমপি ছিলেন। ইতোমধ্যে এ আসন থেকে আওয়ামীলীগের কয়েক জনের নাম শোনা যাচ্ছে এবং তারা দৌড় ঝাপ শুরু করেছেন জেলা আওয়ামীলীগের নেতা থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে। অনেকেই শুরু করেছেন আগাম নির্বাচনী গনসংযোগ, পথসভা, মিটিং ও সিটিং। তবে কে পাচ্ছেন নৌকা প্রতিক তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশিরা। 

এক সময়ের আতংকিত জনপদ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলো জেলার রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলা। সেই সময় এই জনপদে সর্বহারারা দিনে-দুপুরে মানুষকে জবাই করে হত্যা করতো। সর্বহারার অধ্যায় শেষ করতেই উত্থান হয় জেএমবি নামক বাংলা ভাই ও শায়খ আব্দুর রহমানের দলের। শেষ হয় চাদাবাজী, জবাই, হানাহানি ও রাহাজানি।

জানা গেছে, ১৯৯১ ও ৯৬সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক সাংসদ মুক্তিযোদ্ধা ওহিদুর রহমান। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে ইসরাফিল আলমকে পরাজিত করে আলমগীর কবীর বিজয়ী হন। ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষের দিকে আলমগীর কবির এলডিপিতে যোগ দেন। একই বছরে এলডিপি থেকে পদত্যাগ করেন। ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন ইসরাফিল আলম। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির নেতা মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বুলু। এরপর ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় এবং ২০১৮সালের নির্বাচনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীরকে পরাজিত করে বিজয়ী হন ইসরাফিল আলম। মূলত এ আসনটি চারবার বিএনপির অধীনে থাকলেও ২০০৮ সালের পর থেকে আওয়ামীলীগের দখলে রয়েছে।

এই আসন থেকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসাবে ইতিমধ্যেই দলীয় মনোনয়নপত্র তুলেছেন, তারা হলেন: প্রয়াত সংসদ ইসরাফিল আলমের স্ত্রী পারভীন সুলতারা বিউটি, সাবেক সংরক্ষিত আসনের পর পর দুবারের এমপি জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি শাহীন মনোয়ারা হক, রানীনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও রানীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হেলাল, জেলা আওয়ামীলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডঃ পিযুষ কুমার সরকার, রাজশাহী মহানগর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী, আত্রাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এবাদুর রহমান, গোনা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু আইনজীবি পরিষদের সাধারন সম্পাদক জিপি এ্যাডঃ মোস্তাফিজুর রহমান ফিরোজ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নাসিম আহমেদ, সাধারন সম্পাদক ও সাবেক এমপি ওহিদুর রহমানের পুত্র উদিয়মান নেতা এ্যাডঃ ওমর ফারুক সুমন, আত্রাই উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক এ্যাডঃ সিদ্দিকুর রহমান রাজার ছোট ভাই নাহিদ ইসলাম বিপ্লব, জেলা যুবলীগের সভাপতি খোদাদাদ খাঁন পিটু, সাধারন সম্পাদক বিমান কুমার রায়, রেজাউল ইসলাম, সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান, এ্যাডঃ জাহিদুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, আসাদুজ্জামান নুরুল, তোফাজ্জল হোসেন তোফা, দুলাল হোসেনসহ মোট ৩৪ জন।

প্রয়াত সাংসদ ইসরাফিল আলমের স্ত্রী পারভীন সুলতানা বিউটি বলেন এই আসনে আমি মানুষের কাছে একটি পরিচিত মুখ। স্বামীর সাথে আমিও বিভিন্ন সময় এই দুই উপজেলার মানুষদের পাশে দাড়িয়েছি। যদি প্রধানমন্ত্রী আমাকে সুযোগ দেন তাহলে আমি আমার প্রয়াত স্বামীর রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করবো ইনশাল্লাহ।

সাবেক সংরক্ষিত আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি শাহীন মনোয়ারা হক বলেন, আমি এই এলাকার সন্তান। ছোট বেলা থেকে এই এলাকায় বড় হয়েছি। এই এলাকায় আমার নাড়ীর টান আছে। ১৯৯৬ সালে সংরক্ষিত আসনে প্রথম এমপি হওয়ার পর  পরে ২য় বার এমপি হওয়ার পর থেকে রাণীনগর ও আত্রাইবাসীর জন্য সাধ্যমত অনেক কিছু উন্নয়ন করেছি। এখনও করে যাচ্ছি। তাই প্রধানমন্ত্রী আমার সবকিছু বিবেচনা করে যদি আমার এলাকার মানুষদের সেবা করার সুযোগ দেন তাহলে আমি নির্বাচনে অংশ্রগ্রহণ করবো এবং বিপুল ভোটের মাধ্যমে বিজয়ী হবো। এই এলাকা রক্তাক্ত জনপদের এলাকা থেকে, আরও শান্তির এলাকা হিসাবে দেশের কাছে পরিচিত করব ইনশাল্লাহ।

রানীনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও রানীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, আমি এই এলাকার মানুষের পাশে অতীতে ছিলাম, এখনও আছি, ভবিষতেও থাকবো। আমি পার পর দুবার এই এলাকার মানুষের ভোটের মাধ্যমে উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। জনগনের সুখে দুখে তাদের সাথে আছি। কোন প্রকার দূর্নীতির ছোয়া শরীরে লাগায় নি। গত সংসদ নির্বাচনেও আমি মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে নির্বাচন করার সুযোগ দেন তাহলে বিপুল ভোটের মাধ্যমে জয়ী হয়ে এই আসন উপহার দিব।

রাজশাহী মহানগর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী বলেন আমি রাণীনগরের সন্তান। কর্ম আর রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আমাকে রাজশাহীতে বসবাস করতে হলেও আমার সব কিছুই আমার এলাকার মানুষের জন্য। তাই দল যদি আমাকে মনোয়ন দেয় তাহলে আমি নির্বাচন করবো এবং শতভাগ বিজয়ী হবো বলে আশাবাদি।

জেলা আওয়ামীলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডঃ পিযুষ কুমার সরকার বলেন, আমি দীর্ঘদিন রানীনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলাম। বর্তমানে জেলা আওয়ামীলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি বিজয়ী হবো।

গোনা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু আইনজীবি পরিষদের সাধারন সম্পাদক জিপি এ্যাডঃ মোস্তাফিজুর রহমান ফিরোজ বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। ছাত্র অবস্থা থেকে আজ পর্যন্ত তার আদর্শে রাজনীতি করে আসছি। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করব এবং বিপুল ভোটের মাধ্যমে বিজয়ী হবো।

নওগাঁ জেলা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা এ্যাডভোকেট বার এ্যাসোসিয়েশানের সভাপতি এ্যাডঃ খোদাদাদ খাঁন পিটু বলেন, আমি দীর্ঘদিন যাবত জেলা যুবলীগের আহবায়ক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেন তাহলে বিপুল ভোটের মাধ্যমে বিজয়ী হবো।

জেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক বিমান কুমার রায় বলেন, আমি দীর্ঘদিন জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক হিসাবে এবং বর্তমানে সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে বিজয়ী হয়ে জেলা যুবলীগের দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমি যারা মনোনয়ন তুলেছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে কনিষ্ট প্রার্থী। দল মনোনয়ন দিলে বিপুল ভোটের মাধ্যমে বিজয়ী হয়ে রানীনগর আত্রাই এলাকার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করব।

জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারন সম্পাদক উদিয়মান নেতা এ্যাডঃ ওমর ফারুক সুমন বলেন, দীর্ঘদিন যাবত রানীনগর আত্রাই এলাকার মানুষের সুখে দুখে ছিলাম, এখনও আছি এবং ভবিষতেও থাকব। ভোট আসলে আওয়ামীলীগের অতিথি নেতারা এলাকায় আসে। আবার চলে যায়। তারা এলাকার কোন কাজ করে না।

 

এবারের বন্যায় কোন নেতায় বানভাসী মানুষের কাছে আসে নাই। এমনকি প্রয়াত এমপিও তাদের কাছে যায় নাই। আমি আমার সাধ্যমত যতটুকু পেরেছি তাই নিয়ে বানভাসী মানুষের পাশে থেকে বন্যা মোকাবেলা করেছি। মানুষের পাশে দাড়িয়েছি। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি বিপুল ভোটের মাধ্যমে বিজয়ী হবো ইনশাল্লাহ।

আত্রাই উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নাহিদ ইসলাম বিপ্লব বলেন, আমি রানীনগর আত্রাই এলাকার জনগনের পাশে থেকে রাজনীতি করে আসছি। দল টিকিট দিলে অবশ্যই বিজয়ী হবো, তাতে কোন সন্দেহ নেই।

রানীনগর আত্রাই এই দুই উপজেলা নিয়ে নওগাঁ ৬ আসন। ৩৪ জন যারা মনোনয়ন তুলেছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী রানীনগর উপজেলার ২৮ জন। আর আত্রাই উপজেলার ৬ জন। এদের মধ্যে আওয়ামীলীগের লেবাস পরিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জেএমবি নেতা ও পূর্ব বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টি লাল পতাকার কমান্ডারও রয়েছেন বলে এলাকার একাধিক সুত্রে জানা গেছে।

রাণীনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মফিজ উদ্দিন বলেন যদি প্রধানমন্ত্রী চান তাহলে আমরা তালিকা পাঠাবো। আমি আশাবাদি প্রধানমন্ত্রী এই অ লের জন্য স্বাধীনতার পক্ষের একজন সৎ, শিক্ষিত ও নির্ভিক মানুষকেই নৌকা প্রতিক দিবেন। প্রধানমন্ত্রী যাকে মনোনয়ন দিবেন আমরা তার হয়েই কাজ করবো।

গত ২৭ জুলাই এ আসনের এমপি ইসরাফিল আলম মারা যাওয়ায় আসনটি শুন্য হয়। আগামী ১৭ অক্টোবর এই আসনে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছেন।