নাচোলে আস্থা এগ্রো ফার্মের ট্রাক্টরের বর্জ্য রাস্তা কর্দমাক্ত, দূর্ঘটনার স্বীকার শতাধিক যান


নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চলমান ট্রাক্টর থেকে বর্জ্য-কাদা-মাটি পড়েছে পাকা সড়কে। বুধবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ায় সড়কে তৈরি হয়েছে কর্দমাক্ত। দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকার লোকজন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-নাচোল সড়কের কয়েক কিলোমিটারে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সরজমিন দেখা যায়, সড়কটিতে এগ্রো ফার্মের বর্জ্য-কাদা-মাটি বৃষ্টির পানিতে একাকার। ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। একের পর এক দুর্ঘটনায় পড়ছে মোটরসাইকেল। বুধবার কয়েক দফা হালকা বৃষ্টি হওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। ফলে গত দুই দিনে সড়কে যানবাহন চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে। বুধবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত সড়কটিতে অন্তত শতাধিক মোটরসাইকেল কাদায় পিছলে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। গতকাল সড়কটিতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে ভয়ে ভয়ে নিম্নগতিতে কয়েকজনকে মোটরসাইকেল চালাতে দেখা গেছে। কাদায় সড়কের পাশের লোকজন ও ব্যবসায়ীরাও চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
বুধবার সন্ধ্যায় সরজমিন গিয়ে আরও দেখা যায়, এগ্রো ফার্মের পচাঁ বর্জ্য কাদামাটি বহন। সেই বর্জ্য-কাদা-মাটি পাকা রাস্তায় পড়ে কর্দমাক্ত। ফলাফল সড়ক দুর্ঘটনা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে এমনই কারণে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাচোলগামী কার, মাইক্রোবাস সহ শতাধিক মোটরসাইকেল। এতে ২৫/৩০ গুরুতর জন আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী পার্শ্ববর্তী নেজামপুর ইউনিয়নের মো.কামরুজ্জামান জানান, রাস্তায় মাটি পড়ে থাকায় ভোর থেকে হালকা হালকা বৃষ্টিতেই পাকা রাস্তা কর্দমাক্ত হয়ে গিয়েছিলো। সেসময় চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী একটি দ্রতগামী মাইক্রোবাস সামনের একটি মোটরসাইকেলকে বাঁচাতে গিয়ে রাস্তার কাদামাটিতে স্লিপ করে পাশের দাঁড়িয়ে থাকা আরেকটি মোটরসাইকেলকে সজোরে ধাক্কা মারে।
এতে মাইক্রোবাসের সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এসময় মোটরসাইকেল আরোহী, মাইক্রোবাসের ড্রাইভারসহ ৭/৮জন আহত হন। তাদেরকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন স্থানীয়রা। দুর্ঘটনার কারণে রাস্তায় মাইক্রোবাস আড়াআড়ি হয়ে যাওয়ায় দু’পাশে যানবাহন চলাচল সাময়িকের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। তবে তাৎক্ষণিক খবর পেয়েও পুলিশ আসেনি। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় মাইক্রবাসটি সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী আমনুরার হারুন জানান, রাস্তায় কাদা থাকার কারণে গাড়ি ঠিকমতো ব্রেক হয়নি। যার কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। আমি ৩০ মিনিট থাকতে থাকতেই মাইক্রোবাস সহ ৭/৮ টি মোটরসাইকেল দূর্ঘটনার স্বীকার হয়। আহত হন মহিলা শিশু সহ ৭/৮ জন।
ইসারুল নামের আরেক ব্যক্তি জানান, কতিপয় মাসুদ নামে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি, নিজের আখের গোছানোর জন্য আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে নিজ এগ্রো ফার্মের বর্জ্য পচাঁ দুর্গন্ধযুক্ত কাদামাটি  অন্য এলাকায় রাতভর ও দিনেও অবৈধভাবে ট্রাক্টর ও ট্রলিযোগে পরিবহন করে। সেই পরিবহনের বর্জ্য রাস্তায় পড়ে  যার ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন সাধারণ জনগণ।
স্থানীয়দের অনেকে জানান, ফার্মের মালিক মাসুদ ছাড়াও, আমনুরার ধীনগর মোড় থেকে ইটের ভাটাসহ বিভিন্ন কাজে মাটি বহনের কারণে রাস্তায় মাটি পড়ে থাকার দরুণ ছোট-বড় দুর্ঘটনার ঘটনা প্রায় ঘটছে। তবু বন্ধ নেই অবৈধভাবে ট্রলি-ট্রাক্টর যোগে মাটি বহন। আর রাস্তায় পড়ে থাকা মাটি পরিষ্কার করারও উদ্যোগ নেয়া হয় না।
আমনুরা-বহরল এলাকায় অবস্থিত আস্থা এগ্রো ফার্মের মালিক মাসুদ রানা দম্ভের সাথে বলেন, আমার খামারের বর্জ্য খামারের ভিতরে রাখার কোনো ব্যবস্থা নাই। কি করবো, তাই বাধ্য হয়ে ফেলা হচ্ছে লক্ষীপুর মোড়ের পাশে ঘাস চাষের জমিতে। আমার ফার্মের লোক বিষয়টি দেখভাল করছে, সতর্ক করছে পথচারীদের। এছাড়া নাচোল থানার ওসি মিন্টু রহমানকে বলা হয়েছে বলে কল রেকর্ড শোনান। এরপরও কোনো দূর্ঘটনা ঘটলে আমার করার কিছু নেই। ঘটনা স্থলে আপনার কোনো লোক নাই বললে তিনি রেগে যান এবং নিউজে তার ফার্মের নাম উল্লেখ না করার কথা বলেন।
নাচোল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি আমি অবগত আছি। আস্থা এগ্রো ফার্মের মালিক মাসুদকে রাস্তা পরিস্কার করে দিতে বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত যদি রাস্তা পরিস্কার করে না থাকে এবং তার কারনে কেউ দূর্ঘটনার স্বীকার হয় তবে ইউএনওকে বলে ভ্রাম্যমাণ করা হবে।
নাচোল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাইমেনা শারমীন মুঠোফোনে বলেন, আমার নিকট এবিষয়ে কেউ অভিযোগ করেন নি, আপনি বললেন খুব ভালো হলো। এটা কোনো ভাবেই মেনে নেয়া যায়না আমি আস্থা এগ্রো ফার্মের মালিক ও তার ফার্মের বিরুদ্ধে কঠোর ভাবে ব্যবস্থা নিবো। যেনো তার ফার্মের বর্জ্য, পচাঁ ৃমাটি পরিবহনের কারনে রাস্তায় কেউ দূর্ঘটনার স্বীকার না হয়।