নাটোরে চাহিদার দ্বিগুন পশু লালন পালন ॥ বাজার মুল্য প্রায় ২ হাজার ৫ শ’ কোটি টাকা


নাটোর প্রতিনিধি: আর অল্প কিছুদিন পরেই ঈদুল আযহা (কোরবানী ঈদ)। কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে এবার নাটোরে চাহিদার দ্বিগুন প্রায় ৫ লাখ কোরবানীর পশু লালন পালন করেছে খামারিরা। যার বাজার মুল্য প্রায় ২ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা। জেলার চাহিদা মিটিয়েও প্রায় আড়াই লাখ কোরবানীর পশু দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হবে। এসব খামারে কর্মসংস্থান হয়েছে অনেকের।

গতবছরের তুলনায় এবার পশু খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় পশু পালনে খরচ বেড়েছে। এজন্য লাভের পরিমানও কম হবে বলে মনে করছেন খামারিরা। আর অবৈধ পথে পাশের দেশ থেকে গরু এলে লোকসানের আশংকা রয়েছে তাদের। গবাদি পশু মোট-তাজা করণ কাজ নির্বিঘেœ করে লাভবান হতে পারে সেজন্য সহজ শর্তে প্রয়োজনীয় ঋণ প্রদান সহ সকল সুবিধা দেওয়া হয় সে ব্যাপারে সরকার ব্যবস্থা নেবে এমনটাই প্রত্যাশা খামারিদের।

কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে প্রতিবারের মত এবারও জেলার গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম ও নাটোর সদর সহ বিভিন্ন স্থানে কোরবানীর পশু লালন পালন করেছে খামারীরা। প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে জেলায় এবার ১৮৪১০টি খামারে প্রায় ৫ লাখ গরু লালন পালন করা হয়েছে।

জেলার চাহিদা প্রায় আড়াই লাখ। নাটোরের খামারিরা প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে তাদের গবাদি পশু পালন করায় দেশ জুড়েই রয়েছে এই গরুর চাহিদা। তাদের অধিকাংশ পশু বিক্রি করতে কোথাও যেতে হয় না। বরং দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা খামারে এসে তাদের পছন্দের কোরবানীর পশু কিনে নিয়ে যান। তবে এবার গো খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় খামারিরা লাভ কম হওয়ার আশংকা করছেন।

রেকায়েত আলী, কেতাব আলী, মনোয়ার মুজাহিদসহ খামারিরা জানান, তাদের পশুগুলোকে প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে লালন পালন করেন। এজন্য তাদের গরুগুলি কখনও হাটে বিক্রি করতে নিয়ে যেতে হয়নি। এখানকার গরু মান সম্পন্ন হওয়ায় ঢাকা, চিটাগাং, রংপুর, রাজশাহী সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে তাদের খামারে গরু কিনতে আসে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা এসে তাদের প্রয়োজনীয় ও পছন্দের পশু কিনে নিয়ে যান। তাদের খামারে শাহিওয়াল,গামা,নেপাল গ্রিড,হলিসথিজিয়ান, রাজস্থানীসহ বিভিন্ন প্রজাতির গরু রয়েছে।

কোন কোন খামারে ৪ মাসের বাচ্চা থেকে ১২শ’ কেজির পূর্ণ বয়স্ক গরু রয়েছে। তবে এবার গো খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু লালন পালনে বেশি খরচ হওয়ায় তারা তেমন লাভবান হতে পারছেন না। যদি সরকার গো খাদ্যের দাম কমায় এবং ভারত ও মায়নমার থেকে গরু আসতে না দেয় তাহলে খামারিরা তাদের গরুগুলো সম্পূর্ণ বিক্রি করে লাভবান হতে পারবে। যাতে করে গবাদি পশু মোট-তাজা করণ কাজ নির্বিঘেœ করে লাভান হতে পারেন সেজন্য খামারিরা সরকারের কাছে সহজ শর্তে প্রয়োজনীয় ঋণ প্রদান সহ সকল সুবিধা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

সানোয়ার হোসেন নামের এক ফার্মের ম্যানেজার জানান, ড্রিমল্যান্ড ক্যাটল এ্যান্ড ডেয়ারী ফার্মে যে গরুগুলো রয়েছে সেগুলোগুলোকে দেশীয় খাবার খাইয়ে মোটা-তাজা করা হয়। কোন স্ট্রেরয়েড ইঞ্জেকশান বা ফিড বা মাল্টি ভিটামিন খাওয়ানো হয় না। এজন্য তাদের পার্মে ৪/৫ বছরের পুরাতন গরু রয়েছে। যেখানে ৪০ ডিগ্রি প্লাস টেম্পারেচার তাতেও তাদের গরুগুলোর কোন ক্ষতি হয়না। এজন্য তাদের গরুগুলোর চাহিদাও বেশি।

মারফত ইসলাম , খোকন সহ ফার্মের কর্মচারিরা জানান, ফার্মগুলোতে তাদের অনেকের কর্ম সংস্থান হয়েছে। কোন কোন ফার্মে ১৫/২০ জন কর্মচারী রয়েছে। তারা সকালে ৬ টায় এসে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা, গরুকে ঝাঁপানো, খাওয়ানো সহ সব কাজ করেন। সারা বছর তারা এই খামারে কাজ করে যে টাকা পান তাতে তাদের ছেলেমেয়ের লেখাপড়া করানো ও সংসার খরচ ভালমত হয়ে যায়। ফার্মের গরুগুলোকে তারা ভূট্টা, গম,এ্যাংকর,খুদ দিয়ে এক ধরণের মিশানো খাবার তৈরী করে খাওয়ান।

তারেক মিয়া নামের এক পাইকেরী ক্রেতা জানান, তিনি প্রতি বছরেই নাটোরের ফার্মগুলো থেকে গরু কিনে নিয়ে যান। এসব খামারে কম মূল্য থেকে বেশি দামের সব ধরণের গরু পাওয়া যায়। এ ছাড়া এসব খামারে প্রাকৃতিক খাবার দিয়ে গরু তৈরি করা হয় জন্য এর চাহিদা বেশী।

জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, নাটোর জেলা গরু মোটা-তাজা করণে বিখ্যাত। জেলায় এবার ১৮৪১০ টি খামারে কোরবানী ঈদের জন্য প্রাকৃতিক খাদ্য খাইয়ে প্রায় ৫ লাখ গরু মোটা-তাজা করা হয়েছে। এসব গরুর বাজার মূল্য প্রায় ২হাজার ৫ শ’ কোটি টাকা। জেলায় প্রায় ২ লাখ ৫২ হাজার ৪২ টি গরুর চাহিদা মিটিয়ে অবশিষ্ট গরু দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাবে। নিরাপদ খাদ্য তৈরিতে খামারিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ ছাড়া যে উদ্দেশে খামারিরা গরু পালন করেছে তা যাতে ব্যাহত না হয় সেজন্য জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে খামারিদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।