রাপ্র ডেস্ক: গত জানুয়ারিতে অন্যরকম এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন ভারতের সাবেক প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার বসন্ত রাইজি। বছরের প্রথম মাসের ২৬ তারিখ ছিল তার ১০০তম জন্মদিন। তা পালন করতে রাইজির বাড়িতে উপস্থিত হয়েছিলেন শচিন টেন্ডুলকার, সুনিল গাভাস্কার, স্টিভ ওয়াহর মতো কিংবদন্তি ক্রিকেটাররা।
সেই সেঞ্চুরিয়ার রাইজি নিজের শততম জন্মদিনের পর আর মাত্র ১৩৯ দিন ‘নটআউট’ থাকতে পারলেন। শুক্রবার দিবাগত রাত ২টা ২০ মিনিটে বার্ধক্যজনিত তিনি পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। জীবদ্দশায় রাইজিই ছিলেন বিশ্বের প্রবীণতম প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার। শনিবার (১৩ জুন) সন্ধ্যায় রাইজির শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে।
তৎকালীন বোম্বেতে বড় হওয়া রাইজি ভারতের সম্মানজনক রঞ্জি ট্রফিসহ খেলেছেন মোট ৯টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ। বোম্বে ছাড়া তিনি খেলেছেন বারোদার হয়েও। তবে তার প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারের অভিষেকটা হয়েছিল ক্রিকেট ক্লাব অব ইন্ডিয়ার হয়ে, ১৯৩৯ সালে। সেন্ট্রাল প্রভিন্সের বিপক্ষে সে ম্যাচটিকে মূলত উৎসবের ক্রিকেটই ধরা হয়ে থাকে। সে ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ০ ও দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১ রান করতে পেরেছিলেন রাইজি।
সবমিলিয়ে প্রায় এক দশক লম্বা ছিলো রাইজির প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ার। দ্বিতীয় বিশযুদ্ধের কারণে খেলা হয়নি মাঝের লম্বা সময়। তাই তার ক্যারিয়ারে ম্যাচ সংখ্যাও মাত্র ৯। যেখানে এক ফিফটিতে তার রানসংখ্যা সবমিলিয়ে ২৭৭।
তবে ৯ ম্যাচের সংক্ষিপ্ত ক্যারিয়ারেই ভারতের বিখ্যাত ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন রাইজি। অভিষেক ম্যাচেই তার প্রতিপক্ষ দলে ছিলেন সিকে নাইড়ু, মুশতাক আলি, বিজয় হাজারে এবং লালা অমরনাথরা। আর রঞ্জিতে তার অভিষেক ম্যাচের অধিনায়ক ছিলেন বিজয় মারচেন্ট।
পেশাদারি জীবনে মূলত একজন চাটার্ড একাউন্ট্যান্ট ছিলেন বসন্ত রাইজি। তবে ক্রিকেটের প্রতি তার ভালোবাসা সবসময়ই ছিলো অমলিন। তার দীর্ঘসময়ের বন্ধু, গত শতকের প্রখ্যাত পরিসংখ্যানবিদ প্রয়াত আনন্দজী দোসাকে নিয়ে গড়েছিলেন জলি ক্রিকেট ক্লাব। সেই ক্লাবের হয়ে খেলেছেন ভারতের সাবেক অলরাউন্ডার বাপু নাদকারনি, একনাথ সোলকার, অশোক মানকড় এবং ইয়াজুরভিন্দ্র সিং।
পেশা বদলালেও, ক্রিকেটের প্রতি নিজের ভালোবাসাকে সংরক্ষণ করতে বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন রাইজি। যেখানে তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন সিকে নাইড়ু, ভিক্টর ট্রাম্পার, দ্বিলীপসিংজী এবং এলপি জাইদের নিয়ে মুখরোচক সব লিখনী।
১৯৩৩ সালে ভারতের অভিষেক টেস্টে খেলেছিলেন রাইজির আদর্শ এলপি জাই। সেই ম্যাচটি আবার সরাসরি মাঠে বসেই দেখেছিলেন ১৩ বছর বয়সী বসন্ত রাইজি। তবে কাজটা মোটেও সহজ ছিলো না। ছেলের আবদার মেটানোর জন্য তখনকার সময়ে ১০০ ভারতীয় রুপি খরচ করেছিলেন রাইজি বাবা।
রাইজির মৃত্যুর পর এখন বিশ্বের বয়স্কতম প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার হলেন নিউজিল্যান্ডের অ্যালান বারগেস। ১৯২০ সালের ১ মে জন্মগ্রহণ করা বারগেস ১৯৪০ থেকে ১৯৫২ পর্যন্ত সময়ে ১৪টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন।