নওগাঁ প্রতিনিধিঃ নিয়োগ নিয়ে জটিলতার কারণে চাকরি হারাতে বসেছেন নওগাঁর মহাদেবপুরের চকগৌরী জায়েদা বেগম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষক। চাকরি বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ওই শিক্ষকেরা।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চকগৌরী এলাকায় ২০১০ সালে জায়েদা বেগম বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরু থেকে ওই বিদ্যালয়ের নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক ছিলেন চারজন। তারা হলেন, প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন, সহকারী শিক্ষক জোসনা বানু, রিপা রাণী ও মাসুমা জুবাইদা (মুন্না)। বেতন-ভাতা না পাওয়ায় নিয়োগ পাওয়ার তিন বছর পর ২০১৩ সালে সহকারী শিক্ষক জোসনা বানু, রিপা রাণী ও মাসুমা জুবাইদা চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় ইস্তফা দিয়ে চলে যান।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের তিনটি পদ শূন্য হওয়ায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০১৪ সালে রবিউল ইসলাম, মর্জিনা আক্তার ও শাহজান আলী নামে তিন শিক্ষককে নিয়োগ দেন। এখন পর্যন্ত তারা বিদ্যালয়টিতে কর্মরত রয়েছেন। ২০১৭ সালের ২৩ এপ্রিল বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়। বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হলে ইস্তফা দিয়ে চলে যাওয়া জোসনা বানু, রিপা রাণী ও মাসুমা জুবাইদা (মুন্না) সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত বৈধ শিক্ষক হিসেবে দাবি করে কেন তাদেরকে এমপিওভুক্ত করা হবে না- মর্মে হাইকোর্টে মামলা করেন।
মামলাটি দীর্ঘদিন শুনানির পর উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ চলতি বছরের ১২ মার্চ তাদের নিয়োগকে বৈধ বলে ঘোষণা দেন এবং তাদেরকে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে যোগদানে সহযোগিতার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতি নির্দেশনা দেন। আদালতের নিদের্শ অনুযায়ী গত ১৫ মার্চ তিন শিক্ষক বিদ্যালয়ে যোগদানের জন্য প্রধান শিক্ষকের কাছে আবেদনপত্র দেন। এদিকে আদালতের নির্দেশে ৭ বছর আগে ইস্তফা চলে যাওয়া ওই তিন শিক্ষকের আবারও বিদ্যালয়ে যোগদানের খবরে চাকরি দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বতর্মানে বিদ্যালয়টিতে কর্মরত তিন সহকারী শিক্ষক।
তাদের একজন সহকারী শিক্ষক রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, বেতন-ভাতা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা না দেখে প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে নিয়োগ পাওয়া ওই তিন শিক্ষক ২০১৩ সালে চাকরি ছেড়ে চলে যান। পরের বছর বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমিসহ তিনজনকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। ৭ বছর ধরে বিনা বেতনে আমরা আন্তরিকতার সাথে কাজ করে আসছি।
এখন যখন বিদ্যালয় সরকারি হয়েছে এবং শিক্ষকেরা এমপিওভুক্ত হতে চলেছে তখন তাঁরা আবারও ফিরে এসেছেন। এখন আমরা কোথায় যাব? ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা শঙ্কায় রয়েছি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়া আরেক সহকারী শিক্ষক শাহজান আলী বলেন, ওই তিন শিক্ষক উচ্চ আদালতে মামলা করেছেন এটা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানতেই পারেনি। কোনো প্রকার বিভাগীয় তদন্ত রিপোর্ট কিংবা সরেজমিন তদন্ত ছাড়াই আদালত একতরফা রায় দিয়েছেন।
অথচ যারা চাকরি ফিরে পেতে মামলা করেছেন তারা স্বেচ্ছায় বিদ্যালয় থেকে ইস্তফা দিয়ে চলে গেছেন। ৭ বছর ধরে বিদ্যালয়ে তারা একদিনের জন্যও আসেনি। তাদেরকে নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে আমাদেরকে পথে বসিয়েছে আদালত। এই জটিলতা নিরসনে বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা আবেদন জানাচ্ছি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন বলেন, আদালতের আদেশ নিয়ে ওই তিন শিক্ষিকা বিদ্যালয়ে যোগদানের জন্য গত মার্চ মাসে আমার কাছে আবেদন জানিয়েছে। তাদের আবেদনের কয়েকদিনের পরেই করোনার কারণে স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে বিষয়টি ওই অবস্থাতেই রয়েছে। এখন যেহেতু আদালতের আদেশ নিয়ে এসেছেন তাঁদেরকে নিয়োগ দিতেই হবে।
মহাদেবপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আনোয়ার হোসেন বলেন, আদালত আদেশের পরে আমাদের কিছুই করার নেই। আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ওই তিন শিক্ষকদের নিয়োগ দিতেই হবে। তবে ২০১৪ সালে নিয়োগ পাওয়া ওই তিন শিক্ষকের চাকরির বিষয়টি কি হবে এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বিধি অনুযায়ী তাদের বিষয়টি দেখা হবে।