পাবনার ভাঙ্গুড়ার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অকেজো অপারেশন থিয়েটার


আটঘরিয়া(পাবনা) প্রতিনিধি: পাবনার ভাঙ্গুড়ার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বছরের পর বছর ধরে কোনো ধরনের অস্ত্রোপচার, আলট্রাসনোগ্রাম ও এক্স-রে হচ্ছে না। ফলে সেখানকার অপারেশন থিয়েটার ও এক্স-রে কক্ষে সারা বছরই ঝুলছে তালা। একই সঙ্গে সাধারণ স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। তাদের প্রশ্ন, এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটার ও এক্স-রে কক্ষের তালা কবে খুলবে?
স্থানীয়রা বলছেন, উপজেলার বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে বিভিন্ন পরীক্ষার জন্যে গিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হচ্ছে। পাশাপাশি ভুগতে হচ্ছে নানা হয়রানিতে। কোটি টাকা খরচ করে নির্মিত সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনসাধারণ সেবা পাচ্ছে না কেন?
জানা গেছে, সরকার স্বাস্থ্য খাতকে গুরুত্ব দিয়ে ২০১৫ সালে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে আধুনিক করে ৫০ শয্যায় উন্নীত করে। একই বছর মূল ভবনের পাশে আরও একটি তিনতলা ভবন নির্মাণ শেষ হয়েছিল।
সে সময়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভবনটি উদ্বোধন করেছিলেন। মূলত তখন থেকেই এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আধুনিক তিনতলা ভবনটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সম্প্রসারিত হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। ভবনের দুই তলায় রয়েছে একাধিক এয়ারকন্ডিশনার যুক্ত অপারেশন থিয়েটার। কিন্তু সেগুলো আজ পর্যন্ত চালু হয়নি। ফলে, সরকারের অর্থ ব্যয় করে কেনা অপারেশনের যন্ত্রপাতি এরই মধ্যে নষ্ট হতে বসেছে।
ভাঙ্গুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তালাবদ্ধ অপারেশন থিয়েটার ও এক্স-রে কক্ষ। ভাঙ্গুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তালাবদ্ধ অপারেশন থিয়েটার ও এক্স-রে কক্ষ।
অপরদিকে, সেখানে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে অ্যানেসথেসিস্ট নেই। ফলে, বন্ধ রয়েছে সিজারসহ সব ধরনের অস্ত্রোপচার। এ ছাড়া দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে অকেজো আছে কোটি টাকা মূল্যের এক্স-রে মেশিন। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের ১৫টি পদের বিপরীতে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৯ জন মেডিকেল অফিসার। খালি পড়ে আছে ৬টি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ। মূলত এসব পদে কখনো চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়নি । এখানে ডায়াবেটিস (আরবিএস) পরীক্ষাও হয় না।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অন্তঃসত্ত্বাদের নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাদের পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। অনেক সময় বাধ্য হয়ে তাদের উপজেলার বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি হয়ে সিজার করতে হয়। এতে অনেক টাকা খরচ হয়। অথচ সরকারি এ হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন, আলট্রাসনোগ্রাফি ও এক্স-রে হলে অল্প খরচেই চিকিৎসাসেবা পেতেন উপজেলার বাসিন্দারা।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হালিমা খানম জানান, তিনি নিজে একজন গাইনি সার্জন হলেও এখানে অ্যানেসথেসিস্ট নেই। এ ছাড়া অপারেশন থিয়েটারের সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত করার মেশিনও নেই। তাই, এখানে সিজারিয়ানসহ বড় ধরনের কোনো অপারেশন করা যাচ্ছে না। তবে, সিজারিয়ানসহ এক্স-রে সেবা আগামীতে শিগগিরই দিতে পারবেন বলে আশাপ্রকাশ করেন তিনি।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অপারেশন ও এক্স-রে না হওয়ার কথা স্বীকার করে পাবনার সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী জানান, বিষয়গুলো তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। অপারেশন করতে অ্যানেসথেসিস্ট ও সার্জনের ব্যবস্থা করে হাসপাতালটিতে শিগগির অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করা হবে। এক্স-রে মেশিনটিও মোরামত করা হয়েছে। অপারেটর পেলে সেটিও চালু করা হবে।