দীপক কুমার সরকার, বগুড়া: সকল জল্পনা-কল্পনা, দীর্ঘদিন অপেক্ষার প্রহর শেষ ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ৪র্থ দফার মাধ্যমেই শেষ হতে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী রাত পোহালেই(০৫ জুন বুধবার) ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৪য় ধাপে বগুড়া জেলার তিন উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে প্রশাসন। এ উপলক্ষ্যে তিন উপজেলার মধ্যে শেরপুর, ধুনট এবং নন্দীগ্রাম উপজেলার মোট ২৪৬টি কেন্দ্রে ব্যালটবাক্স সহ নির্বাচনী সরঞ্জাম যাচ্ছে।
মঙ্গলবার বেলা ১২ টায় বগুড়া শেরপুর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তন থেকে সদর উপজেলার ১০৭ টি কেন্দ্রের ভোটের সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়। তবে এ তিন উপজেলার ২৪৬টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৭৭টি গুরুত্বপূর্ণ(ঝুঁকিপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন।
তৃতীয় ধাপে বগুড়ার এই তিন উপজেলায় নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত বিরতীহীন ভাবে প্রত্যক্ষ ব্যলটে পেপারে ভোট গ্রহণ করা হবে। প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণাও শেষ হয়েছে।
প্রার্থীরা প্রচার প্রচারণা শেষে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পুলিং এজেন্ট নিয়োগসহ কেন্দ্র পরিচালনা এবং ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনার ছক কষছে। বগুড়ার এই তিন উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ১২ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৩ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান(সংরক্ষিত) পদে ১১ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
শেরপুর উপজেলায় ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা মিলে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১০৭টির মধ্যে ৩০টি। ভোট কক্ষের সংখ্যা ৮০০। এর মধ্যে স্থায়ী ৬৭৭ ও অস্থায়ী ভোট কক্ষ ১২৩টি। মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৯২ হাজার ৯৬৯জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন এবং মাহিলা ভোটার ১ লাখ ৪৯হাজার ১১৫জন।
এ উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ৫জন। এদের উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি শাহ জামাল সিরাজী মোটর সাইকেল), উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ(আনারস), যুবলীগের নেতা জনবন্ধু এমএ হান্নান(জোড়াফুল), বগুড়া জেলা বঙ্গবন্ধু সৈনিকলীগের সভাপতি জাকারিয়া তারেক বিদ্যুৎ(ঘোড়া) ও মোঃ রুবেল আহমেদ(কাপ-পিরিচ)। ভাইস চেয়ারম্যান পদে আলহাজ¦ মুনসী সাইফুল বারী ডাবলু(চশমা), তাজুল ইসলাম কিরণ(টিউবওয়েল), নূরে আলম সানি(তালা), রনি সরকার(উড়োজাহাজ), সাদ্দাম হোসেন(মাইক) ও বিধান কুমার ঘোষ(টিয়াপাখি)।
এছাড়াও মর্জিনা বিবি(ফুটবল), ফিরোজা খাতুন(প্রজাপতি), ফাতেমা খাতুন ময়না(কলস) ও শিখা খাতুন(হাঁস) প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ধুনট উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ৯০টি ভোট কেন্দ্রের মাধ্যে ৩৩টি কেন্দ্র অধিক গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৫৫ হাজার ৩২৪জন।
এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২৬ হাজার ৬৩৪ জন এবং মাহিলা ভোটার ১ লাখ ২৮ হাজার ৬৮৭ জন। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৯০টি। ভোট কক্ষ ৬৮৭টি। এরমধ্যে অস্থায়ী ভোট কক্ষ ৬৬টি।
এ উপজেলায় ৩জন চেয়ারম্যান পদ সহ ১১জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি টিআইএম নুরুন্নবী তারিক (ঘোড়া), সহ-সভাপতি আব্দুল হাই খোকন (মোটরসাইকেল) ও সাধারণ সম্পাদক আসিফ ইকবাল সনি (আনারস) ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ইকবাল হোসেন রিপন (তালা), চপল মাহমুদ (টিউবয়েল) অমৃত কুমার সাহা লিটন (মাইক) এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নাজনীল নাহার (হাঁস), পপি সাহা (কলস), সুলতানা জাহান (সেলাই মেশিন), রেবেকা সুলতানা রেবা (ফুটবল) ও সিমা আক্তার (প্রজাপতি)।
নন্দীগ্রাম উপজেলায় ৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা মিলে ৪৯টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ১৪টি ঝুঁকিপূর্ণ। মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৫৭ হাজার ১৯০ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৭৮ হাজার ৩৪৯ জন এবং নারী ভোটার ৭৮ হাজার ৮৪১ জন।
এ উপজেলায় পরিষদ চেয়ারম্যান পদে ৪জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪জন এবং সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ(আনারস), আনোয়ার হোসেন রানা(মোটর সাইকেল), নজিবুল্লাহ মজনু মন্ডল(ঘোড়া) ও মো. মাহমুদ আশরাফ(দোয়াত কলম)।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুলাল চন্দ্র মহন্ত(মাইক), শুভ আহম্মেদ(টিউবওয়েল), আমিনুল ইসলাম(চশমা) এবং এ্যাড. ইলিয়াস আলী(তালা)। এছাড়া সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে শ্রাবনী আকতার বানু(হাঁস) ও খালেদা বেগম(কলস) প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
তিন উপজেলার ভোট কেন্দ্রগুলোতে থাকছে ৬ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নির্বাচনী এলাকায় র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, ডিবি ও আনছার বাহিনী মোতায়েন রাখা হবে। এরমধ্যে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ৪জন অস্ত্রসহ পুলিশ (একজন এসআই বা এএসআই ও তিনজন কনস্টেবল), ২জন অস্ত্রসহ আনসার ও ১০জন লাঠিসহ আনসার/ভিডিপি সদস্য (৪জন মহিলা ও ৬জন পুরুষ) মোতায়েন থাকবে।
এছাড়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, স্ট্রাইকিং ফোর্স ও সাদা পোশাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে।
এ প্রসঙ্গে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পি.এম ইমরুল কায়েস জানান, বগুড়ার তিন উপজেলা শেরপুর, ধুনট ও নন্দীগ্রাম উপজেলায় নির্বাচন উপলক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত প্রত্যক্ষ ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে ৫ স্তরের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।