বগুড়া প্রতিনিধি: নামেমাত্র কারখানা, তৈরী হচ্ছেনা সরকারের সাথে চুক্তিকৃত কৃষিজ যন্ত্রপাতি, তবুও নিজের কারখানায় তৈরীকৃত যন্ত্রপাতি বলে চালিয়ে দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কতিপয় ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ মালিক ও প্রভাবশালীরা। এমন অভিযোগ উঠেছে বগুড়ার মেসার্স পূবালী ট্রেডার্স ও মেসার্স কামাল মেশিন টুলস্ এর বিরুদ্ধে। কোম্পানিগুলো ফসল কাটার জন্য কখনও নি¤œমানের যন্ত্র সরবরাহ, আবার কখনও যন্ত্র আমদানি না করেই ভুয়া সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র জমা দিয়ে প্রকল্প থেকে ভর্তুকির টাকা তুলে নিচ্ছে এমন অভিযোগ রয়েছে।
ফলে কৃষকদের সমস্যা সমাধানে সরকার সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ বিতরণ একটি যুগান্তকারী প্রকল্পে সুফল অনেকটাই ভেস্তে যেতে বসেছে। তবে এসব অভিযোগ মানতে নারাজ হয়ে সরকারি ভুর্তকির মাধামে কৃষিজযন্ত্রপাতির তৈরী ও সরবরাহ বিধি মোতাবেক বিতরণ করা হচ্ছে বলে দাবী করেন ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা।
এসব অভিযোগ সত্যতা যাচাইয়ে সম্প্রতি সরেজমিনে বগুড়া শহরের গোহাইল রোডের সুত্রাপুর এলাকায় মেসার্স পূবালী ট্রেডার্স নামের ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশন প্রতিষ্ঠান দেখা যায়।
এ প্রতিষ্ঠানটি গত কয়েক বছর ধরে সরকারের ‘সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ প্রকল্পে কৃষিজ যন্ত্র সরবরাহে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটি কৃষকদের ভর্তুকির মাধ্যমে কৃষিযন্ত্র বিক্রয় করে আসছে। কিন্ত বাস্তব চিত্রে অনেকটাই ভিন্নতা দেখা গেছে, সরকারি বিধি মোতাবেক প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কারখানায় এসব কৃষিজ যন্ত্র সামগ্রী তৈরী এবং সরবরাহের কথা থাকলেও এ প্রতিষ্ঠানে চুক্তিবদ্ধ কৃষিযন্ত্রের অধিকাংশই তৈরী হচ্ছেনা। এমন অভিযোগ শুধু মেসার্স পূবালী ট্রেডার্সের বিরুদ্ধেই নয়, রয়েছে বগুড়ার ছিলিমপুরে অবস্থিত আরেকটি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কামাল মেশিন টুলস্ নামের ম্যানুফ্যাকচারিং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ প্রকল্প অনুসারে কৃষকদের কম্বাইন্ড হারভেস্টার, রিপার, মেইজ শেলার, পাওয়ার থ্রেশার, সিডার, রাইস ট্রান্সপ্লান্টারসহ চাষাবাদের আধুনিক বিভিন্ন যন্ত্র সরবরাহ সরবরাহ করতে চুক্তিবদ্ধ হয় কোম্পানীগুলো। তবে শর্তানুযায়ী প্রতিটি কোম্পানীর অনুকুলে জেলা পর্যায়ে আমদানিকারক কোম্পানিগুলোর অবশ্যই সার্ভিস সেন্টার এবং বিক্রয়কেন্দ্র থাকতে হবে। সার্ভিস সেন্টারে স্পেয়ার পার্টস নিশ্চিত করতে হবে।
প্রতিবছর আমন এবং বোরো মৌসুমের আগে কী পরিমাণ স্পেয়ার পার্টস ইমপোর্ট করা হয়েছে তার মজুত সংক্রান্ত তথ্য প্রকল্প অফিসে জমা দিতে হবে। কৃষকের নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী খুচরা যন্ত্রাংশ কেনার সুযোগ থাকতে হবে। সার্ভিস সেন্টারগুলোতে সেবার মান নিশ্চিত করতে সার্ভিস গাইড বুক বা কার্ড থাকতে হবে এবং সেবা দেওয়ার পর সার্ভিস বুকে সেবার ধরন ও সেবাদানের তারিখ লিপিবদ্ধ করতে হবে। এছাড়াও আমদানি করা যন্ত্রের ওপর মাঠপর্যায়ে কমপক্ষে তিন বছরের অভিজ্ঞতা, ২০টি ডিলার পয়েন্ট, ১০টি ওয়ার্কশপ ও ২৫ জন মেকানিক থাকার শর্ত থাকা বাঞ্ছনীয়।
বিশ^স্ত সুত্রে জানা যায়, ‘সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ প্রকল্পে ২০২২ সাল থেকে তালিকাভুক্ত মেসার্স পুবালী ট্রেডার্স ও মেসার্স কামাল মেশিন টুলস্ নামের এ দুটো কোম্পানি। অথচ দেশের কোথাও এসব কোম্পানীগুলো তাদের কারখানাগুলোতে অন্যান্য কৃষিজ যন্ত্রপাতির তৈরী করলেও সরকারের চুক্তিবদ্ধ ও তালিকাভূক্ত যন্ত্রপাতির অধিকাংশ তৈরী করেনা। সেক্ষেত্রে অন্যত্র থেকে যন্ত্র সংগ্রহ বা ক্রয় করে নিজের কোম্পানীর তৈরী বলে দাবী করেন। তাছাড়া বেশীরভাগই অফিশিয়ালভাবে প্রভাব খাটিয়ে কাজ কলমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখছে কৃষিযন্ত্র বিক্রয় ব্যবস্থা এমন তথ্য রয়েছে সচেতনমহলে।
মেসার্স কামাল মেশিন টুলস্ এর স্বত্বাধিকারী মো. কামাল হোসেন বলেন, সরকারের ‘সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ প্রকল্পের তালিকাভূক্ত হয়েছি সকল নিয়ম মেনে এবং কৃষকদের মাঝে ভর্তুকির যন্ত্রপাতিও বিতরণ করছি।
এ বিষয়ে মেসার্স পুবালী ট্রেডার্সের প্রোপ্রাইটর মো. গোলাম আজম টিকুলের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ প্রকল্পের তালিকাভূক্ত এবং বিতরণ সংক্রান্ত নানা তথ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি গত ২০২২ সাল থেকে সরকারি ভর্তুকি সহায়তায় কৃষিজযন্ত্রপাতি বিতরণ করে আসছে। তাছাড়া ডিলার পয়েন্ট আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে ডিলার পয়েন্ট নেই বলে স্বীকার করলেও উত্তরের বেশ কয়েকটি জেলাতে ডিলার পয়েন্ট রয়েছে বলে দাবী করেন। তাছাড়া এ বছর ভর্তুকির মাধ্যমে যন্ত্রপাতি বিতরণ সহায়তা করবো কিনা সন্দিহান বলেও মন্তব্য করেন।
উল্লেখ্য, পাঁচ বছরমেয়াদি ‘সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ প্রকল্পে কৃষকদের জন্য ৩ হাজার ২০ কোটি টাকার বেশি ভর্তুকি সহায়তা দিচ্ছে সরকার। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে। এর মাধ্যমে কৃষকদের কম্বাইন্ড হারভেস্টার, রিপার, মেইজ শেলার, পাওয়ার থ্রেশার, সিডার, রাইস ট্রান্সপ্লান্টারসহ চাষাবাদের আধুনিক বিভিন্ন যন্ত্র সরবরাহ করে। যন্ত্রের মোট দামের একাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে পরিশোধ করে। বাকি টাকা কৃষক বা কৃষি উদ্যোক্তাকে দিতে হয়।