বগুড়ার বিএনপির হরতালে সংঘর্ষের ঘটনায় ৪ মামলা


দীপক কুমার সরকার: বিএনপির ডাকা হরতালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, হামলা, ভাংচুরের ঘটনায় বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা ও সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনাসহ ৮৪ জনের নামে মামলা দায়ের হয়। জেলা আওয়ামী লীগে দপ্তর সম্পাদক আল রাজী জুয়েল বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় সোমবার(৩০ অক্টোবর) রাতে এই মামলা করেন।

এর আগে ২৯ অক্টোবর একই ঘটনায় সদর থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৪৩ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। আর এসব মামলায় অসংখ্যজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
সোমবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে এই মামলাগুলোর বিষয় নিশ্চিত করেন সদর থানার ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ। বিস্ফোরক আইনে মামলা হওয়ার কথা নিশ্চিত করলেও এ পর্যন্ত এ মামলায় কয়েকজন আটক বা গ্রেফতারের কথা পরিসংখ্যান দিতে রাজী হয়নি। তবে আরো গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে দাবী করেন সদর থানার ওসি।

জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, গত রবিবার বগুড়া সদরের ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে খোলারঘরে হরতাল সমর্থকরা অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন যানবাহনে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করছিল। এই সময় র‌্যাব ও হাইওয়ে পুলিশের গাড়িকে লক্ষ্য করেও ইট-পাটকেল বিক্ষেপ করা হয়। বাধা দিতে গেলে বগুড়া সদর থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের ওপর হামলা চালায় হরতাল সমর্থকরা। এই সময় তাদের ছত্রভঙ্গ করতে শটগান থেকে ৩৫ রাউন্ড ছোররা গুলি ছুঁড়ে পুলিশ। এরমধ্যে ৩০ রাউন্ড ডিবি পুলিশ ও ৫ রাউন্ড সদর থানা পুলিশ গুলি চালায়।

পরে এই ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলা ও কাজে বাধা দানের অভিযোগ এনে বিশেষ ক্ষমতা আইনে বগুড়া সদর থানার এসআই রুম্মন হাসান বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় বগুড়া সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মিজানুর রহমান, খোলাঘরের স্থানীয় দুই বিএনপি কর্মী রুহুল আমিন ও আতাউর রহমানসহ ১৯ জনকে আসামি করা হয়েছে৷ এছাড়াও অজ্ঞাত আসামি রয়েছেন।

একই স্থানে দুপুরে পিকেটারদের হামলার শিকার হয় বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফিরোজা পারভীনকে বহনকারী সরকারি জিপ। হরতাল সমর্থকারীরা জানলার কাঁচসহ গাড়ির বিভিন্ন অংশ ভাঙচুর করে পিকেটাররা। ইউএনও ফিরোজা পারভীন সেদিন সদরের লাহিড়ীপাড়া ইউনিয়নের একটি মন্দির পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে তিনি হামলার মুখে পড়েন।

এই ঘটনায় সদর উপজেলা ইউএনওর দেহরক্ষী আনসার সদস্য জাহিদুল হক বাদী হয় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দায়ের করেছেন৷ মামলায় ১৪ আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এখানেও অনেক অজ্ঞাত আসামির কথা উল্লেখ আছে।

বগুড়া শহরের নবাববাড়ী সড়কে বিএনপি-ছাত্রদলের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে সদর ফাঁড়ির এসআই খোরশেদ আরেকটি মামলা করেন। এ মামলায় ছাত্রদলের ১০ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়। মামলায় একজন গ্রেফতার আছেন।

সেদিন বিএনপির নেতাকর্মীদের ককটেল বিস্ফোরণে হওয়ার কথা জানিয়ে আল রাজি জুয়েল বলেন, গত ২৯ অক্টোবর সারাদেশে বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলাকালে বগুড়ায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নাশকতা চালানো হয়। এ ঘটনায় মামলায় বগুড়া জেলা বিএনপির ৮৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে আরও অনেককে।

সদর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) সাইহান ওলিউল্লাহ বলেন, গত সোমবার রাতে আওয়ামীলীগ নেতা আল রাজি জুয়েল বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। এর আগে রবিবার রাতে একই ঘটনায় পৃথক পৃথক তিনটি মামলা করা হয়। তিন মামলায়ও মোট ৪৩ জনের নাম উল্লেখ আছে। তবে এসব মামলায় কয়েকজন আটক বা গ্রেফতারের হয়েছে জানালেও কিন্তু তার সঠিক পরিসংখ্যান এই মুর্হুতে দিতে তিনি রাজী হয়নি।