বগুড়ায় সংস্কারবিহীন সড়ক নিজস্ব অর্থায়নে ও স্বেচ্ছাশ্রমে সংস্কার করছে গ্রামবাসী


দীপক সরকার, বগুড়া প্রতিনিধি: দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে যানবাহন ও সাধারণ মানুষের চলাচলে নানা দূর্ভোগ পোহাতে হয় গ্রামবাসীদের। স্থানীয় সরকার থেকে বেশ কয়েকবার রাস্তাটি সংস্কার করে দিলেও টিকসই না হওয়ায়  রাস্তাটিতে নানা খানা-খন্দকের শেষ নেই। সামান্য বৃষ্টির পানি জমেই চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে বগুড়ার শেরপুরের শাহবন্দেগী ইউনিয়নের খন্দকারটোলা-উচরং আ লিক সড়কটির অনেক অংশ।
এতে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সুবিধাভোগী ১২ গ্রামের মানুষদের। দীর্ঘদিন ধরে ওই সড়কের মাজারগেট- বাংলালিংক টাওয়ার এবং মাজারগেট-প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকার সংস্কারবিহীন অবস্থায় সাড়ে ৮’শ মিটার সড়ক পড়ে থাকায় এবার নিজস্ব অর্থায়নে ও স্বেচ্ছাশ্রমে সংস্কার কাজে হাত দিলেন ভূক্তভোগী গ্রামবাসী।
ওই সড়ক সংস্কারে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসন কোন উদ্যোগ গ্রহন না করায় দুর্ভোগ লাঘবে স্বেচ্ছাশ্রমের সংস্কারের জন্য এগিয়ে ভূক্তভোগী সচেতন এলাকাবাসী। ওইসব এলাকাবাসীরা তারা নিজেদের চাঁদার অর্থ বিনিয়োগ করে ভঙ্গুরদশা সড়কটি সংস্কারের কাজ শুরু করেন। তবে এ কাজের অনুকুলে প্রায় ১০লাখ টাকা নিজস্ব তহবিল সংগ্রহ করেছেন বলেও জানান ওই এলাকার সচেতন যুবকেরা।

৪ জুলাই শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, শাহবন্দেগী ইউনিয়নের খন্দকারটোলা-উচরং আ লিক সড়কের ভঙ্গুরদশা ৩টি অংশের মধ্যে খন্দকারটোলা-মাজারগেট, বাংলালিংক টাওয়ার- প্রাথমিক বিদ্যালয়-ফজলুর মোড় এলাকার প্রায় সাড়ে ৮’শ মিটার সড়কটি সংস্কারে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছে কয়েকজন শ্রমিক।  তবে এ সড়ক সংস্কারে সচেতন এলাকাবাসীদের মধ্যে নূরুল ইসলামকে আহবায়ক ও খন্দকার ওসমান গনিকে সদস্য সচিব করে ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সড়ক সংস্কার কমিটির অন্যতম সদস্য আবদুল ওহাব বলেন, সড়কটি সংস্কারের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনের কাজে সহযোগিতা চেয়েছেন। কিন্তু সহযোগিতা না পেয়ে গ্রামের মানুষজন এই সংস্কারের কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তারা চাঁদা তুলে তহবিল সংগ্রহ করে গত বুধবার থেকে এই সংস্কারকাজ শুরু করেছেন।

খন্দকারটোলা গ্রামের ভুক্তভোগী নূরুল ইসলাম বলেন, এই সড়কের ওপর দিয়ে যাতায়াত করে খন্দকারটোলাসহ আরও ১২টি গ্রামের মানুষ। ওই সব গ্রামের সড়কের পাশে রয়েছে ১৩টি রাইস মিল, ১’শ ৫০টির মতো চাতাল এবং ২৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই সড়ক দিয়ে অন্তত ৩০ হাজার পরিবারের লোকজনের নিয়মিত চলাচল করতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু’জন নারী বলেন, তাদের বাড়ির কোনো নারী অসুস্থ হলে তাঁকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া সম্ভব হয় না।
গ্রামবাসীর টাকায় এই রাস্তাটি সংস্কার শুরু করার মধ্যে দিয়ে হয়তো তাঁদের দুশ্চিন্তা দূর হবে।
সড়কে নিয়মিত চলাচল করা কয়েকটি যানবাহনের চালকের সাথে কথা বললে তারা জানান, সড়কের দুর্ভোগ রোধে তাঁরাও সড়ক সংস্কারে এগিয়ে এসেছেন। এতে সড়কে চলতে গিয়ে তাঁদের যানবাহনের যন্ত্রাংশগুলো বিকল হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।

ওই সড়ক সংস্কারকাজে নিয়োজিত শ্রমিক খাদেমুল ইসলাম বলেন, সড়কটির অন্তত সাড়ে ৮’ শ মিটার সংস্কার করা হবে। সড়কের এই অংশে বিগত সময়ের পিচপাথরের পাকা উঠে গর্ত হয়ে রয়েছে। গর্তের গভীরতা প্রায় ৫ থেকে ১৮ ইি । এই স্থানে সামান্য বৃষ্টির পানি জমেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তাই সড়কের অংশের দুই পাশে উঁচু করে ইটের দেয়াল তুলে অন্তত দেড় ফুট বালু ফেলা হচ্ছে। এরপর বালু ও ইটের খোয়ার মিশ্রণ রোলার মেশিন দিয়ে সমান করে যানবাহন ও সাধারণ মানুষের যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হবে।

এ ব্যাপারে শাহবন্দেগী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মাহমুদুল হাসান লিটন বলেন, ছয় বছর ধরে সড়কটিতে যাতায়াত নিয়ে দুর্ভোগে রয়েছেন গ্রামবাসী। সড়কে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। এ নিয়ে জনদুর্ভোগ বেড়েই চলছে। সড়কের খানাখন্দকের সংস্কার নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

তাছাড়া উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরে একাধিকবার আবেদন জানিয়েও কোনো উপকার পাননি বলে জানান। তাইতো অবশেষে ভুক্তভোগী গ্রামবাসীদের সাথে মিটিংয়ের মাধ্যমে নিজস্ব তহবিল সংগ্রহ করে  সড়কটির পুনঃ সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের (এলজিইডি) উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবদুর রশিদ বলেন, এই সড়কটি এলজিইডি দপ্তরে অধীনে। সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার সংস্কার দরকার। এ জন্য ব্যয় হবে অন্তত ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু অনুমোদন না আসায় সংস্কার করাও সম্ভব হচ্ছে না।