বদলগাছীতে বাগানের মাটি ও গাছ কেটে নিচ্ছে বালুমহাল ইজারাদাররা


রায়হান আলম, নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর বদলগাছী ছোট যমুনা নদীর বালুমহাল ইজারার নামে বালুভরা ইউপির রামশাপুর মৌজায় নদীর ধারে ৩৫ বছর পূর্বে গড়ে তোলা মালিকানা বাগান বালুদস্যুদের হাত থেকে শেষ রক্ষা হচ্ছে না। বালুদস্যুরা প্রতিদিন ভোর রাতে নৌকা যোগে আসে এবং অবাধে বাগানের গাছ ও মাটি কেটে নিয়ে যায়। আর এই বালু ইজারাদারদের সাথে প্রশাসনের যোগসাজশ রয়েছে বলে এলাকায় অভিযোগ উঠেছে।

বাগানের মালিক সৈলেন্দ্রনাথ ম-লসহ গ্রামবাসী জানায়, একমাস পূর্বে যখন প্রথম বাগানের মাটি কাটতে শুরু করে তখন থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ নৌকাসহ দুইজনকে আটক করে পরে থানা থেকে তাদেরকে ছেড়ে দেয়। ঘটনাটি সম্প্রতি বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে প্রায় মাসখানেক বাগান কাটা বন্ধ থাকে।

তথ্য সংগ্রহকালে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী হারুন, বেলাল, অজিতসহ গ্রামবাসীরা জানায়, ১২-১৩ দিন পূর্বে ভূমি অফিস থেকে তহশিলদার ও সার্ভেয়ার এসে বাগানসহ আশেপাশের পটল ক্ষেতের ভিটা জমি নদীর সীমানর মধ্যে রয়েছে দাবি করে মাপজোক করে লাল পতাকা ঝুলিয়ে চিহ্ন দিয়ে নীতিমালা উপেক্ষা করে বালু ইজারাদারদের কাটার জন্য বুঝিয়ে দিয়ে যায়। তারপর থেকেই প্রতিদিন ভোর রাতে এসে ইজারাদাররা বাগানের বড় বড় গাছসহ মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে নৌকা যোগে। বাগানের মালিক  সৈলেন্দ্রনাথসহ তার ভাইয়েরা নিজের বাগান ও জমি রক্ষায় উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের দাড়ে দাড়ে ধরনা দিয়ে কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না।

বাগানের মালিক সৈলেন্দ্রনাথ জানান, ইউএনও কে লিখিতভাবে দরখাস্ত দিয়েছি কোনো পদক্ষেপ নেননি। বাগানের সম্পত্তি আমরা বাপদাদার আমল থেকে চাষ ভোগ করি। নদীর পাশে যেহেতু কিছু খাস জায়গা থাকতে পারে কিন্তু এটা তো আর বালুমহাল নয়। যে ইচ্ছামত গাছ মাটি কেটে নিয়ে যাবে। আমরা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ তাই কেউ আমার অভিযোগ আমলে নিচ্ছে না। এ পর্যন্ত বাগানের শতাধিক গাছ কেটে নিয়ে গেছে যার আনুমানিক মূল্য পাঁচ লক্ষাধিক টাকা। উপজেলা প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছেন।

নীতিমালা অনুসারে নদীর তলদেশ থেকে সুইং করে বালু তুলতে হবে। বালু উত্তোলনে যেন নদীর আকার আকৃতি বা গতিপথ পরিবর্তনের রূপরেখা সৃষ্টি না হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ রামসাপুর মৌজায় যেভাবে বাগান ও ভিটা জমি কাটা হচ্ছে তা দেখে মনে হয় তারা বাগান ও ভিটা জমির উপর দিয়ে নতুন নদী খনন করছে এবং ভবিষ্যতে এখানে নদীর ভাঙ্গন সৃষ্টি হলে শত শত বিঘা ফসলি জমি নদী গর্ভে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বালুমহাল সাব-ইজারাদার মোবাইল ফোনে বিষয়টি নিয়ে লেখালেখি না করার অনুরোধ জানান। সে আরো জানায়, ইউএনও এবং এসিল্যা- জায়গা জমি মাপজোক করে দিয়েছেন। তাতে বাগান ও আশেপাশের জমি প্রায় ১০ বিঘা নদীর সীমানায় পড়েছে। তাই তারা কাটছে।

বালু মহালের মূল ইজারাদার মো. মফিজ উদ্দিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি জানান, ১০-১২ দিন আগে তহশিলদার ও সার্ভেয়ার ঐ এলাকা মাপজোক করে দিয়েছেন। আমি ঐদিন উপস্থিত থাকতে পারিনি। বাগানের মাটি কাটা যদি অন্যায় হয় তাহলে ইউএনও এবং এসিল্যা-কে প্রশ্ন করতে হবে। তারা কীভাবে মাপজোক করে দিলেন? আর বাগান যদি মালিকানা হয় তাহলে সেখানে আমার লোকজনের মাটি কাটা অন্যায় হয়েছে। কালোকে কালো সাদাকে সাদা বলতেই হবে। আমার ঐ এলাকা দেখাশুনা করে নওগাঁর সাব্বির ও সহিদুল।

তহশিলদার কল্লোল জানান, মাপজোকের মধ্যে বাগান নেই। বাগানের গাছ এবং মাটি কাটা হলে সেটা অন্যায় হয়েছে।
এবিষয়ে বদলগাছী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাহারুল ইসলাম বলেন, বাগান বালু পয়েন্টের মধ্যে খাস জায়গায়। যথারীতি তাদেরকে মাপজোক করে দেওয়া হয়েছে। আর বালুমহালের মধ্যে পড়লে আমাদের করার কিছু নাই।
বাগান মালিকানা না হয়ে যদি সরকারি সীমানা হয় সেই বাগানের মাটি ও গাছ বালুমহাল হিসেবে কেটে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার বৈধ্যতা আপনার আছে কি না প্রশ্ন করলে কিছু পর তিনি ফোন করে বলেন, সেখানে মাটি কাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর গাছ যদি কাটে প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।

বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহা. আবু তাহির এর সঙ্গে ফোনে কথা বললে তিনি জানান, যথারীতি সেখানে মাটি কাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুনরায় বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করার জন্য এসিল্যা-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।