বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিচালনা বোর্ড এর সভা অনুষ্ঠিত


স্টাফ রিপোর্টার: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা বলেন “এক ইঞ্চি জমি অনাবাদি রাখা যাবে না” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রাজশাহীতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) পরিচালনা বোর্ড এর ৮৩ তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।  সোমবার (০৬ মে) সকাল ১১টায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) প্রধান কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষ-১ এ সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।সভায় সভাপতিত্ব করেন- বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য বেগম আখতার জাহান।

এসময় বেগম আখতার জাহান বলেন, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তপক্ষের ৮৩তম বোর্ড সভা শুরুতে তিনি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি ছিলেন বাঙালি জাতির ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মহানায়ক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান না থাকলে আজ আমরা স্বাধীন দেশ পেতাম না। তিনি তাঁর জীবনের প্রজ্জ্বলিত আলো দিয়ে বাঙালি জাতির জীবনে আলো জ্বালিয়েছেন। আমরা পেয়েছি একটি লাল সবুজের পতাকা, পেয়েছি মাতৃভূমি বাংলাদেশ। তিনি সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভর সোনার বাঙলা গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতেন।

যুদ্ধপীড়িত বাঙালি জাতির খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তিনি কৃষি এবং কৃষকের উন্নয়নের উপর বেশী গুরুত্ব দিয়ে যেমন ২৫ বিঘা পর্যন্ত কৃষকের জমির খাজনা মওকুফ করেছিলেন, তেমনি কৃষি খাতে ভর্তুকি এবং গরিব কৃষকদের জন্য সুদমুক্ত ঋণের ব্যাবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। তাই বঙ্গবন্ধুর এই আত্মত্যাগ আমরা কোন ভাবে ভুলতে পারিনা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের মাথা উচু করে বাঁচতে শিখিয়েছেন।

এসময় তিনি বলেন, মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্ভিক, তেজস্বী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে এবং সফল রাষ্ট্রনায়কোচিত সিদ্ধান্ত ও পরিচালনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আবার উন্নয়নের পথে যাত্রা শুরু করে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হয়েছে। তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশের নির্মাতা ও উন্নয়নের কান্ডারী। পদ্মা সেতু, কর্ণফুলি টানেল, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এগুলো তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

কৃষির উন্নয়নেও সারাবিশ্বে তিনি একটা রোল মডেল। তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানের জন্য তিনি যেমন ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ ঘোষণা করেছেন। তেমন উন্নত দেশের কাতারে সামিল হওয়ার অভিপ্রায়ে ভিষণ ২০৪১ কে সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছেন। আজ এর সভার মাধ্যমে আমি বাঙালী জাতির মুক্তির কান্ডারি, মাদার অব হিউম্যানিটি, গণতন্ত্রের মানবকন্যা দেশরতœ জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

এসময় সম্মানিয় সদস্যবৃন্দের উদেশ্যে বলেন, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অত্র অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সেচ সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি বহুবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বিএমডিএ আজ অত্র এলাকার ব্যপক উন্নয়নের অংশিদার, দেশের কৃষিতে সফলতার অন্যতম ভাগিদার, সর্বপরি এটি একটি স্বঅর্থায়নে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান। আমাদের মূল গর্বের জায়গা এটি।

আমরা যেমন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক বিদ্যুতের উপর চাপ কমাতে সোলার পাওয়ার নিয়ে কাজ করছি, তেমনি পানির অপচয় কমিয়ে ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর চাপ কমাতে শতভাগ ভূ-গর্ভস্থ পাইপ লাইনের মাধ্যমে সেচ প্রদান বিষয়ে কাজ করছি। আমরা পদ্মা, মহানন্দা নদী থেকে পাইপের মাধ্যমে উঁচু বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি সরবরাহ করে ভূ-পরিস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধিতে সচেষ্ট রয়েছি। আমরা পরিবেশ নির্মল রাখতে যেমন বৃক্ষ রোপণ করি, তেমনি উৎপাদন বাড়াতে মানসম্পন্ন বীজ সরবরাহ করে থাকি।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কৃষিখাতের অন্যতম একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বর্তমানে ১৬০০০ এর অধিক সেচ যন্ত্রের মাধ্যমে প্রায় ১০.৯ লক্ষ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করছে। ফলে প্রতি বছর প্রায় ৫৬.৮০ লক্ষ মেট্রিক টন ফসল উৎপাদিত হচ্ছে, যা বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষের চাহিদা পুরন করতঃ সারা বাংলাদেশের খাদ্যের যোগান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।এক সময়ের ঠাঁঠী, মরুময় বরেন্দ্র অঞ্চল বিএমডিএ’র কল্যাণে আজ সুজলা-সফলা, শস্য-শ্যামলায় পরিণত হয়েছে।

সেচের পানির সংস্থান হওয়ায় মরুপ্রবণ উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের অধিকাংশ অনাবাদী জমিসমূহ আবাদের আওতায় এসেছে। ফলে পূর্বের এক-ফসলী ও দো-ফসলী জমি অঞ্চল ভেদে চার ফসলী জমিতে পরিণত হওয়ায় উৎপাদন ব্যপক পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ পেক্ষাপটে খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চল আজ বাংলাদেশের শস্য ভান্ডার হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে।

সম্মানিত সকল সদস্যকে আজকের এই সভায় আপনাদের মূল্যবান মতামত, পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা বরেন্দ্রের এগিয়ে যাওয়ার পথকে আরো গতিশীল করবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এবং আপনারা এখানে সকলে উপস্থিত হওয়ায় আবারো ধন্যবাদ জানাই।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, মো : সাজজাদুল হাসান যুগ্মসচিব (সংযুক্ত), সাধারণ অধিশাখা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, মো: হেমায়েত হোসেন যুগ্মসচিব মৎস্য-১ অধিশাখা (মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিনিধি, জনাব শাহানারা ইয়াসমিন লিলি যুগ্মসচিব উপকরণ অধিশাখা কৃষি মন্ত্রনালয়, মো: শামসুল হোদা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) বিএমডিএ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো ওহিদুর রহমান সাবেক এমপি ও উপদেষ্টা, নওগা জেলা আওয়ামীলীগ নওগা, মোসা সাকিনা খাতুন (পারুল) বোর্ড সদস্য চাঁপাইনব্বগঞ্জ, জনাব কাজী শাহেদ উল হক বোর্ড সদস্য রাজশাহী, প্রকৌশলী মো আব্দুর রশীদ নির্বাহী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ও বোর্ড সদস্য সচিব বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজশাহী জেলা প্রশাসক এর প্রতিনিধি কল্যান চৌধুরী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাবিক) রাজশাহী, জেলা প্রশাসক দিনাজপুর এর প্রতিনিধি সালাহ্উদ্দিন আহমেদ উপ-পরিচালাক স্থানীয় সরকার দিনাজপুর, রাজশাহী পুলিশ সুপার এর প্রতিনিধি মো মিজানুর রহমান সহ সকলে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তপক্ষের ৮৩তম বোর্ড সভায় উপস্থিত ছিলেন।