বাংলাদেশে কোভিডে বাড়ছে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা


  মহামারির কারণে গুরুতর বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে বাংলাদেশের শিক্ষাখাত। আইএলও এবং ইউনিসেফের সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী কোভিড-১৯ সংকটের এর কারণে লক্ষাধিক শিশু নিযুক্ত হয়েছে শিশুশ্রমে। দীর্ঘসময় স্কুল বন্ধ থাকা এবং পারিবারিক অর্থনৈতিক সংকট এর প্রধানতম কারণ। অপেক্ষাকৃত কম মজুরি এবং সহজলভ্যতার কারণে খুব দ্রুত শিশু শ্রমিকের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদের অধিকাংশই রাস্তার পাশের গাড়ি মেরামতের গ্যারেজ, খাবারের রেস্টুরেন্ট, ছোট দোকান, সেলুন, বেকারি, ঝুকিপূর্ণ রাসায়নিক ও বর্জ্য সংগ্রহ এবং যানবাহনের কাজে নিয়োজিত হচ্ছে।সংবাদ সূত্র: A24 News Agency

আসাদ নামের এক কর্মজীবী শিশুর কাছে শোনা যায় তার স্কুল ছাড়ার গল্প, ”আমি ৮ম শ্রেণিতে পড়ি। লকডাউনের সময়, আমি এই ওয়ার্কশপে কাজ শুরু করি। আমার ক্লাসের বন্ধুরা প্রায় সবাই বিভিন্ন জায়গায় বা দোকানে কাজ শুরু করেছে। আমাদের পরিবারে মহামারী চলাকালীন সময় অর্থসংকট দেখা দেয়, তাই আমাকে এই কাজ শুরু করতে হয়েছিল। আমার বন্ধুদের ক্ষেত্রেও তাই ঘটে। আমাদের স্কুল অনেকদিন বন্ধ ছিল এখন আবার খুলেছে। আমি ক্লাসে যাচ্ছি আর এই চাকরিটাও রাখার পরিকল্পনা করছি।” সুমনা নামের আরেক কারচুপি শিশু শ্রমিক বলে, ”মহামারীর কারণে আমি স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম।

আমার বন্ধুরা আমাকে আবার স্কুলে যেতে বলে, তবে আমি তাদের সাথে যেতে দিতে পারি নাই। আমরা আর্থিক কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, আমার বাবা একজন রিকশাচালক, আমি বাড়িতে কাপড়ে কারচুপির কাজ করে আমার সামান্য উপার্জন দিয়ে তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করছি।” দশম শ্রেণী পড়–য়া রিপন নামের আরেক কিশোরের গল্পটাও একই রকম, ”আমি ১০ম শ্রেনীর ছাত্র ছিলাম। মহামারির জন্য স্কুল বন্ধ থাকার কারণে আমি কাজে এসেছি। আমার পরিবারের এই মুহূর্তে আমার আয়ের প্রয়োজন, আমি আবার স্কুলে ফিরে যেতে চাই।”

এদিকে গণশিক্ষা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক, রাশেদা কে চৌধুরী এ প্রসঙ্গে জানান, মহামারির কারণে দেশের স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে নিযুক্ত হয়েছে, তাদেরকে পুনরায় স্কুলমুখি করতে সরকারের সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে। এছাড়াও ঢাকা শহরে গৃহপরিচালনার কাজে প্রায় ৩৩ শতাংশ শিশুশ্রমিক নিয়োজিত আছে।

এ ২৪ নিউজ এজেন্সির সাথে আলাপচারিতায় তিনি জানান, ”কোভিড-১৯ এর কারণে অনেক দেশই শিক্ষা খাতে বিশাল চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। গত বছর জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছিলেন যে মহামারী সংকট শিক্ষা খাতের ব্যাপক ক্ষতি করতে চলেছে, এখন আমরা বাংলাদেশেও তার প্রতিফলন প্রত্যক্ষ করছি। বহুদিন পর স্কুলগুলো আবার চালু হয়েছে, তবে আমরা দেখছি বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়ছে এবং তাদের অনেকেই শিশুশ্রমে জড়িয়ে পড়েছে।

তাদের স্কুলে ফিরিয়ে আনা এখন রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব, তবে সমাজ এবং অভিভাবকদেরও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা ২০৪১ সালে উন্নত বিশ্বের কাতারে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছি, কিন্তু অর্ধশিক্ষিত জনগোষ্ঠী নিয়ে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।”

এখন সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত যথাযথ ভূমিকাই পারে বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া এই শিশুদের আবার তাদের শ্রেণীকক্ষে ফিরিয়ে আনতে।