বাংলাদেশ – শহুরে এলাকায় কৃষির অবনতিতে মাটিবিহীন চাষ এর উদ্যোগ


“অ্যাকোয়াপনিক্স” পদ্ধতি অবলম্বন করে মাটি ছাড়াই একটি ছোট জায়গা বা এলাকায় শুধুমাত্র একটি অবকাঠামো ব্যবহার করে মাছ এবং সবজি চাষ করছে বাংলাদেশের কৃষকরা। নতুন এ চাষ পদ্ধতিটি এর পরিবেশ বান্ধব ধরনের জন্য সারা দেশে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সূত্র: A24 News Agency

অ্যাকোয়াপোনিক্সে শাকসবজি উৎপাদন করতে মাটির প্রয়োজন হয় না। এটি মাটি ছাড়াই পানিতে গাছপালা এবং শাকসবজি চাষ করার একটি কৌশল। এতে মাছ বর্জ্য অর্থাৎ অ্যামোনিয়া উৎপাদন করে; তারপর, ব্যাকটেরিয়া এটিকে নাইট্রেটে রূপান্তরিত করে। এতে একটি পাম্প ব্যবহার করে মাছকে গাছের ট্রেতে নিয়ে যাওয়া হয়। গাছ পানি থেকে নাইট্রোজেন গ্রহণ করে পানিকে বিশুদ্ধ করে ফলে পরিষ্কার পানি মাছের ট্যাঙ্কে ফিরে আসে, যা মাছের জন্য নিরাপদ পানি হিসেবে বিবেচিত হয়।

ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় একোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আব্দুস সালাম জানান পদ্ধতিটি সম্পর্কে, “দেখেন, আমি ছাদের বাগানে মাছ ও সবজি দুটোই একসঙ্গে চাষ করছি। এটি একটি চাষ প্রক্রিয়া, মাটিবিহীন পরিবেশ বান্ধব কৌশল যার জন্য কম পানি লাগে এবং কোন সারের প্রয়োজন হয় না। এ প্রক্রিয়ায় সার ও কীটনাশকের ব্যবহার না থাকায় আমরা সম্পূর্ণ অর্গানিক মাছ ও সবজি পাচ্ছি। এখানে পানি পুনর্ব্যবহার করা হয় এবং মাছের বর্জ্য সবজির জন্য ব্যাকটেরিয়া দ্বারা খাদ্য হিসাবে রূপান্তরিত হয়। তাই গাছগুলো প্রাকৃতিকভাবে খাবার পাচ্ছে এবং একইসাথে পানিও পরিষ্কার হচ্ছে, যা মাছের জন্য স্বাস্থ্যকর। যে কোনো পরিবেশে আমরা এই পন্থা অবলম্বন করতে পারি। খরাপ্রবণ এলাকা, নোনা মাটি এবং ছাদে বা বাগানের মতো যেকোনো জায়গায় আমরা এই সমন্বিত পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একুয়া-কালচার বিভাগের শিক্ষার্থী ঊর্মি আক্তারের মতে এটি খুবই দরকারী, “আপনি জানেন আমাদের জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে এবং জমির প্লট কমছে। সব জায়গা নগরায়ণে রূপান্তরিত হচ্ছে। ঢাকার দিকে তাকালে দেখা যাবে সেখানে চাষের জমি নেই। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য সবুজায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। সুতরাং, আমরা যদি ছাদের উপরে অ্যাকোয়াপনিক্স অনুশীলন করি, তাহলে আমরা সুন্দরভাবে এবং পরিবেশ বান্ধব উপায়ে এটা করতে পারবো।

অ্যাকোয়াপোনিক্সের সাফল্য শুধুমাত্র কয়েকটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই অর্জন করা যেতে পারে। এজন্য প্রয়োজন এটির নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং এর সরঞ্জামাদি দেখাশোনা করা। এছাড়াও মাছকে সঠিকভাবে খাওয়ানো এবং দ্রুততম সময়ে মাছ ও শাকসবজি বাজারজাত করা প্রয়োজন।

এ পদ্ধতিতে চাষ করে ফল পেয়েছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চিফ পার্সার জনাব মাহবুবুর রহমান।নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে অন্যদেরও দিয়েছেন তিনি, অ্যাকোয়া-ফোনিক্স সিস্টেম থেকে আমি যে সবজি উৎপাদন করছি তা কেবল আমার পরিবারের প্রয়োজনই পূরন করছে না বরং আমার প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথীদেরও এই সবজি দিতে পেরে তৃপ্তি পাচ্ছি। এই ছোট জায়গা আমাকে প্রায় ৮০-১০০ কেজি সবুজ মটরশুটি উৎপাদন করার সুবিধা দিচ্ছে ফলে আমাকে বাজার থেকে সবুজ মটরশুটি কিনতে হচ্ছে না। এমনকি টেকনাফে আমার গ্রামের পরিবারের সদস্যদের কিছু দিয়েছি। এ ফসলের উৎপাদন প্রক্রিয়া ও গুণমান বিশুদ্ধ ও জৈব। বাজার থেকে এত ভালো সবজি পাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হতো না।

ভিডিও দেখতে ক্লিক করুনঃ https://youtu.be/dyFPwjoo2Co