স্পোর্টস ডেস্ক: লাদাখে চীনা সেনাবাহিনীর হামলায় ২০ জনের অধিক ভারতীয় সেনা সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনার পর থেকেই ভারতজুড়ে ডাক উঠে যায়, চীন পণ্য বয়কট করার। চীন পণ্য বয়কট আন্দোলনের মধ্যেই দাবি ওঠে, আইপিএল এবং ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকেও বের হয়ে আসতে হবে।
কিন্তু চীনা মোবাইল কোম্পানি ভিভোর সঙ্গে আইপিএলের যে সম্পর্ক, তাতে করে কোনোভাবেই ‘বয়কট চীন পণ্য’র সঙ্গে বিসিসিআই সুর মেলাতে পারে না। তুমুল আন্দোলন সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত রবিবার আইপিএল গভর্ণিং কাউন্সিল বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, এবারও আইপিএলের সঙ্গে থাকবে চীনা কোম্পানি ভিভো।
গভর্নিং কাউন্সিলের বৈঠকে এইআইপিএলের দিনক্ষণ ঘোষণার সঙ্গে স্পন্সরের ব্যাপারে নেয়া সিদ্ধান্তের পরই টুর্নামেন্ট বয়কটের ডাক উঠলো ভারতজুড়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় #BoycottIPL হ্যাশট্যাগে আইপিএল বয়কটের দাবি উঠে গেছে। এখন এটাই সোশ্যাল মিডিয়ার ট্রেন্ড।
মূলতঃ আইপিএল বয়কটের ডাক দিলো আরএসএস অনুমোদিত উগ্রবাদী সংগঠন স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ বা এসজিএম!
রবিবার আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিল বৈঠকে ঠিক হয়, ভিভোকেই প্রধান স্পন্সর হিসেবে রাখা হবে আইপিএলের। সেই চীনা মোবাইল সংস্থা ভিভো, ভারত-চীন সীমান্ত সংঘর্ষের কারণে যে সংস্থাকে বয়কটের ডাক উঠেছিল। কারণ ভারত সরকার টিকটকসহ ৫৯টি চীনা অ্যাপকে সেই সংঘর্ষের কারণে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
ভারতজুড়ে চীনা পণ্য বয়কটের ডাক ওঠার পর বিসিসিআইর কাছেও আমজনতার দাবি ছিল, চীনের সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষের কারণে যখন ২০জন ভারতীয় জওয়ান নিহত হন, তখন তাদের প্রতি সম্মান দেখানো উচিত। ভিভোকে আইপিএলের প্রধান স্পন্সরশিপ থেকে বের করে দেয়া উচিত।
কিন্তু বোর্ড তাতে কোনও কর্ণপাত করেনি। চাপে পড়ে তড়িঘড়ি বৈঠক ডাকবে বলে ছেড়ে দেয়। সেই বৈঠক বসে রবিবার; কিন্তু গভর্নিং কাউন্সিল বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ভিভোকে রাখা হবে। চীনা মোবাইল সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা হবে না।
ক্রিকেট বোর্ডের এই সিদ্ধান্ত মোটেও ভালভাবে নেয়নি ভারতের উগ্র হিন্দুবাদী এবং জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলো। আইপিএলের সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তিতে এখনও পর্যন্ত বিসিসিআইকে দুই হাজার কোটি রুপি দেওয়া ভিভোকে থাকতে দেখে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফেটে পড়েন সমর্থকরা।
কেউ কেউ হুমকি দেন যে, বোর্ডের লজ্জা হওয়া উচিত। তারা যেন মাথায় রাখে, ভিভোকে বয়কট না করলে আইপিএলকেই বয়কট করা হবে! তখনই আরএসএস অনুমোদিত ভারতের উগ্র জাতীয়তাবাদী সংগঠন স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ ভিভো বিরোধী আন্দোলনে নামে।
সংগঠনের সহআহ্বায়ক অশ্বিনী মহাজন এক বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘যে সময়ে দেশের অর্থনীতিকে চীনা আধিপত্য থেকে মুক্ত করার চেষ্টা চলছে, ভারত সরকার যখন যাবতীয় প্রচেষ্টা চালাচ্ছে দেশের বাজার থেকে চীনা পণ্য হঠাতে, তখন আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের এমন সিদ্ধান্ত দেশের ভাবনার বিরোধী।’
সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘ভারতবাসীর উচিত আইপিএল বয়কট করা। টিভিতেও না দেখা।’
শেষপর্যন্ত কী হবে, সময় বলবে; কিন্তু আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের অবস্থা বিশেষ সুবিধার নয়। আমিরাতে আইপিএলের যে ‘এসওপি’ বা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওরের জন্য অধীর অপেক্ষায় ফ্র্যাঞ্চাইজিরা, তা এখনও তৈরি করে উঠতে পারেনি গভর্নিং কাউন্সিল। বৈঠক শেষে একদিন কেটে যাওয়ার পরেও না। যা খবর, আরও আটচল্লিশ ঘণ্টা লাগবে, ‘এসওপি’ তৈরি করতে। এরপর ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে বসা হবে।